Monday 27 February 2017

গানে আমার রবীন্দ্রনাথ 
দ্বিতীয় পর্ব 
পূজা -প্রেমের সুন্দরতার সামঞ্জ্যস্য তথা ঈশ্বর -মানব প্রেমের মিলন ক্ষেত্র। প্রকৃতির সৌন্দর্য কে আবাহন -এযে মনের উৎকর্ষ প্রদান -যার মাঝে জ্যোতি বিচ্ছুরণ। তার গান শেখায় "গরব মম হরেছ প্রভু দিয়েছ বহু লাজ "--অহংকার সেথা নয় যে মনুষ্যত্বের আধার। তার গানে অসহায় এর সহায় হতে "ঝরা পাতা গো আমি তোমারি দলে "--.প্রেম পূজা একাকার ভালোবাসার মোড়কে। অতিথি বাৎসল্য "হায় অতিথি ,এখনই কি হল তোমার যাবার  বেলা --"হৃদয় আসন পেতে রেখেছি যেও না- না হয় থাক কিছু কাল। অতিথি দেব ভব।
পূজা যখন প্রেম এ-আমার প্রেম কখন যে পূজায় আসে কেও জানতেও পারেনা -কখনো ঈশ্বর কে বলে তোমায় ভক্তের কাছে আসতে হবে নইলে তোমার যে পরিপূর্ণতা আসবে না। আবার বলে হে ঈশ্বরতোমার  "দয়া দিয়ে হবে গো মোর জীবন ধুতে "--.তোমার দয়া -আমার সেবা দুইয়ের মিলন ঘটাবে আমার চিত্ত হতে মনের শুদ্ধিকরণ।
গানে গানে তোমায় রাখব -বেঁধে থাকব সদা আনন্দে। তার গান শেখায় ধৈর্য -স্থিতধী হতে -- ।তিনি চিনসাগর অতিক্রম কালে উত্তাল সাগরে বিচলিত নন -জানেন কি ভাবে সত্য কে সহজে গ্রহণ করা যায় । তিনি যে কিভাবে মন কে বলেছেন তা ভাবলে শিহরণ জাগে "ভুবন জোড়া আসন খানি আমার হৃদয় মাঝে দিক সে আনি "--মহামানব বলেই তার ভাবনা। মৃত্যু যে হাতছানি দিচ্ছে তিনি সেথায় শান্ত। তাঁর গানের এষণা জ্ঞানের ভান্ডার। উছলে পরে রাখতে চাই যে মনের ঘরে। গান গেয়ে দ্বার খোলানোর দর্শন তাঁর --চাইনা আয়োজন  বাহুল্য -বাতুলতার । গানে গানেই  মুক্তি -শক্তি -ভক্তি।বানী ও সুরের গাঁথা মালায়  ,বন্ধন -মলিনতা সকল সরে যাবে ।তবেই হবে তোমার -আমার স্বর্গ সাধন ।
সকল মাঝে তোমায় দেখি ।এ বিশ্বে হারায় না তো কিছু । মাতৃভূমি কোল এ দোল খেয়ে আকর আস্বাদন তার গানের পরশে ।সার্থক জন্ম মা গো জন্ম যখন রবি ঠাকুরের গানের দেশে -সুরের রণনে - বানী মদিরার  আবেশে । ঘুঁটের ছাই থেকে ও খুঁজতেন  ,আবার বহুমূল্য রতন থেকেও খুঁজতেন ।তাঁর গান হৃদয় স্পন্দনে স্পন্দিত । গানে গানে অমৃতের সাগরে আমি যাবই -আবার কৈশোরে যে সলাজ কানাকানি -এর মধ্যে লুকোছাপা  ।,কখন কে বসিলে হৃদয় আসনে , দেবতার আবাহন ।আরও কতকি ,ভাবলে শিহরণ জাগে ।

  যা পেতেন সেটা নিংড়ে নিতেন  --লালন গীতি -কীর্ত্তন -আউল -বাউল সব তার গানের ঘরে। মানুষ - মানুষই তার দর্শন -এদের গান তার মনের খোরাক  । এদের গানে পোশাকের বাহার নেই কিনতু   মনের বাগানে রঙ্গীন ফুলের সমাহার।  .সর্বং সহা -চরম দুঃখে মোক্ষ লাভ। মনের তরী ভাসিয়ে দিয়ে -পার হবে যে অথৈ জল।লোকগান থেকে তার রাগ - রাগিনী আবহ বিস্তার , গানে গানে উত্তরণ ঘটায়। রাগের মিশ্রণ যে আকাশ -আলোক-তনু -মন ধুয়ে দেয় -আনে স্বচ্ছতার বৈতরণী। গানে রাগ এর চলন আছে কিন্তু কঠোরতা নেই ।তোমার সুর আমার সুর হয়ে ওঠে । কত  কত গান তাঁকে মনের আনন্দ জুগিয়ে আমাদের সমৃদ্ধের ভান্ডার উৎকর্ষে  আভরণ এ পূর্ণ করে । বিভিন্ন পর্যায় তাঁর গানের ঝুলি মনোমুগদ্ধতায় ভরে ধারে আবার ভারে ----- । প্রেম -পূজা -গ্রীষ্ম -বর্ষা -শরৎ -হেমন্ত-শীত  বসন্ত -বিচিত্র -আনুষ্ট্ঠানিক -ভগ্নহৃদয় -স্বদেশ -নাটকের গান ---এমন করে কেও তো ভাবেনি ।ফুল -ফল -পল্লব  -দূর্বা -বিল্ব পত্র সমাহার এই গান ।সহজ সরল সঙ্গীত হলেও যত্ন করে পরবেশন এর প্রয়োজন ।----মউসুমি ।


Sunday 26 February 2017

গানে আমার রবীন্দ্রনাথ 
প্রথম পর্ব 
বাণী প্রধান রবীন্দ্রসংগীত --হয়েও কথা ও সুরের মেলবন্ধন গ্রন্থিত একটি বহুমূল্যবান রত্ন সমাহারে সজ্জিত গলা বন্ধনী। রবীন্দ্রসংগীত মূলত চারটি স্তরে সুরারোপিত --স্থায়ী -অন্তরা -সঞ্চারী -আভোগ অথবা তুক। এই আভোগ বা তুক  সুরটি উচ্চাঙ্গ সংগীতের হলেও রবীন্দ্রসংগীতে এটি ব্যবহৃত হয়। গায়ন শৈলীতে এটি ধরা পরে -নচেৎ এটি কে একই সুর মনে হয়। তিনি তাঁর গানে সঞ্চারীতে সুরের আগমন ঘটান এমন , সুর ও কথায় ,- মনে হয় অন্তস্থলে প্রবেশ কালে মোচোরদিয়ে নির্যাস নিংড়িয়ে নিলেন। হঠাৎ ভাল -মন্দ লাগা মন ব্যাকুল বেগে যে যার মতন উপলব্ধি লাভ করলো। তাঁর গান ছোট বয়সে একরকম আবার মাঝবয়সে একরকম --তো আবার প্রৌঢ়ত্বে অন্য রকম। অনেকটা" কি পাইনি তার হিসাব মেলাতে" ----

"কে বলে যাও যাও"- আমার  যাওয়া তো নয়  যাওয়া "--গানটিতে "পথিক আমি পথেই বাসা আমার যেমন যাওয়া তেমনি আসা --"যেন কোন জীবন দর্শনের কথা --মিছিমিছি আমার সব -সব আমার করি। বিজ্ঞান - পরমেশ্বর এর মেলবন্ধন ঘটে । তুমিই  সব তোমার নিয়েই আমি --ভাবতে শেখায়। এটি মাঝবয়সের উপলব্ধি। যৌবনে এটি অন্য রূপ।

তাঁর গান প্রথমে পড়া -সেটার একটা অনুভূতি আবার তার ভাবটিকে উপলব্ধি করে গাওয়া সেটি অন্তরের প্রসাদ -বিষাদ মেলবন্ধনে সুর সাধনায় মগ্ন থাকা।এ যেন "যখন সবাই মগন ঘুমের ঘোরে ---আমার ঘুম নিয়ো গো হরণ করে ।"-
নাটক -উপন্যাস -গল্প -কবিতার সৃষ্টি তে বিদগদ্ধ মানুষের সমাগম । কিন্তূ গানে তিনি ই স্রষ্টা -সৃষ্টি --তোমার মতো এমন করে কেও তো বলেনা --টানেও না। তুমি সুখে -দুঃখে -অবসাদে -আস্বাসে -বিশ্বাসে -নিঃস্বাসে প্রশ্বাসে।

 এক অধ্যাপক তথা লেখকের কথায় রবীন্দ্রসংগীত "সর্বনাশ -সঞ্চয় -সর্বস্ব "--অর্থাৎ তার  সৃষ্টি তে কেও খোঁচা দিলে -জন সাধারন  মানবেন না ।এর পর আর নাই রে সখা ।তোমায় যদি না দেখি আশেপাশে --দেখবে হৃদয় সূর্য -গ্রহ -চন্দ্র -তারার পাশেপাশে । রবীন্দ্রসংগীত জানে না , সেও ভাববে যে এটি  তার লেখা  -- ।সুরে ও বাণী দিয়ে তোমায় দেখা গানে কথায় ।উচ্চারণ থেকে শ্বাস এমনকি কথার পরে কথার মিলন তাঁর গানের সাযুজ্য ।
সত্যি তাঁর সঙ্গীত প্রকৃতির ফুলের ওপর প্রজাপতির আকর্ষণ -এ এক অমোঘ আকর্ষণ যার মধু শুধুই মধু। যেন "ফুলের উদাস সুবাস বেড়ায় ঘুরে -পাখির গানে আকাশ গেলো পুরে --"
তাঁর প্রেম -পূজা -প্রকৃতি একাকার --কথায় -সুরে বাদল ধারার অবিরাম বর্ষণে নয়ন -মনন অভিরাম। ---তাঁর প্রেমে পড়া --এ প্রেম এক অন্য -অনন্য ---- ।যেমন -মাছ ধরার সময় ছিপের ফাতনার দিকে এক দৃষ্টিতে থাকা --কখন
মাছ বড়শিতে বিঁধবে।----কথা ও সুর এর প্রেম--------এ প্রেম যখন গানের পরিবেশন বিপ্লব ঘটাবে সেই মুহূর্ত একান্ত ঘরের গান -প্রাণের গান ।চাই না বাইরের হাততালি ,চাই যে মনের কোনে ঘর ।------মউসুমি ।