Thursday 21 September 2017

আজ শরতে 
#মৌসুমী রায় 
শ্বেত পদ্মাসনা শ্বেত পুষ্পাভরণা নীল কমলে অরুণালোকে শোভনা ,
নীলাম্বরে  আগমনী সুরে মহামায়ার সাজে রক্তিম চন্দনে গন্ধানুলেপনা। 

আশ্বিনের  শারদ স্পর্শে ভোরের শিশিরে ধন ধান্য ধন্য পৃথা ভব সংসারে ,
চেতনার চৈতণ্যে সকল শুভ দৃষ্টি দানে ,দুঃখ নিন্দা অপমান বহু দূরে।

 নর নারী সমান অঙ্গীকারে ,  শিব পার্বতী রূপে আকাশে সূর্য চন্দ্র বিরাজমান , 
মহালয়ায় মাধবী তলায় বালিকা বেলা দুগ্গা দুগ্গা খেলায় আপন মন।

কন্যা ,বঁধু ,বধু ,মাতা একই অঙ্গে কভু  দেখেছ  কোথাও এত,   রূপ ?
শিবের দুগ্গা ,  তোমার  আমি ঘরে বাইরে তেমন জ্বালে দীপালোক ধূপ।

সপ্ত নারী জ্ঞানে কীর্তি ,শ্রী ,বাক ,স্মৃতি ,মেধা ,ক্ষমা ,ধৃতি যাঁরা ,
মহামায়ার মানে গঙ্গা ,গীতা ,সীতা ,সত্যা নন্দা সতী পতির সত্যি ব্রতা।

বিভেদ নাই ,কেউ বলোনা  "নারীর এত মান ভালো নয় গো কিশোরী ",
সাধ্যে সাধ পূরণে শ্যাম শ্যামার  মান বাড়াতে অপর্ণা আমার বাড়ি।

আমার মুক্তি ,মুক্ত আগমনীর আকাশে বোধনে বন্দি কে বা ওরে ?
শিব পার্বতী রূপে  বাঁধন ছেঁড়া নৃত্যে নর নারী জ্যোৎসনা  জোয়ারে।

অখ্যাতি তোমার আমার  দুগ্গা  যাঁরা,  আরশি নগরে পড়শি বসত করে ,
তোমরা যে সকল শিবের দল দুগ্গাদের রক্ষা কোরো স্নেহে যতন ভরে।

তুমি আমি  দুগ্গা বিভেদ ভুলে ,ধরা ধামের মানুষ আনন্দ সাগর নেয়ে ,
শারদ প্রাতে কাশের দোলে নদীর কোলে তরী চলে উজান বেয়ে।

উমার লক্ষী ,সরস্বতী ,গার্গী ,লোপা ,প্রজ্ঞা পারমিতা অনাম্নী নারী , ধরিত্রী ,
মহামানব মানবী মন্ত্র দীক্ষা নিয়ে সাথের স্বাতী সাথী হব যুগান্তরের যাত্রী।






Thursday 7 September 2017

শুচি 
শেষ পর্ব 
ভিন্নতালের বাচ্চারা এখন একটি তালে সুর বেঁধেছে। শুচির আনন্দ আর ধরে না। ঘরে নতুন সদস্য আসছে। সুতরাং হাতে কলমে কর্ণ চক্ষুর বিবাদ ভঞ্জন ঘটাতে হবে। গর্ভস্ত সন্তান এই পরিবেশে একটু একটু বাড়তে থাকলে তার প্রভাব কী পড়ে ? পরীক্ষা প্রার্থনীয়। 
ওই বাচ্চাদের নিয়ে প্রথম শুরু করে দম বাড়ানোর  জন্য ,ওষ্ঠ ,দন্ত ,তালুর এবং জিভের সঞ্চালনে শব্দ সৃষ্টি অনুশীলন। কথা বলতে গেলে থেমে থেমে ,কেটে কেটে এবং বুকভরে শ্বাস নিয়ে শব্দ পরিবেশন। এতে মাধুর্য বাড়ে আবার কণ্ঠ সুরে ভরে ওঠে। কিছু ছেলেমেয়ে বাচন ভঙ্গিতে পারদর্শী। শুচি গীতবিতান পরে শোনায় ,ওরা আবার সেগুলো ছন্দে দমের ব্যবহারে সাজিয়ে তোলে। কণ্ঠস্বরের ওঠানামা যে বাচ্চারা অত স্বচ্ছন্দ নয় তারাও তালেতালে তালি দেয়। সুরে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে। যা ওদের নিস্পৃহ চোখ দুটোতে ফুটে ওঠে। ওদের মা বাবা এখন এই থেরাপি তে উৎসাহিত। ওদের প্রতিক্রিয়া ভালোলাগা ,মন্দলাগা উভয় আছে। এতদিন যারা বাতিলের খাতায় রেখেছিলো এদের তারা জানবে এই ছেলেমেয়েদের ও ভালো ,মন্দ দুইয়ের অনুভূতি আছে। 
কিছু বাচ্চাদের গানের প্রতি ভালোলাগা আছে। গানের প্রতি বিশেষ নজর দেবার প্রস্তুতি চলছে। তাদের বোঝানো হয় গানের উপজীব্য ভক্তি ,শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস। কণ্ঠস্বর ,সুরবোধ ,স্বরলিপি ,উচ্চারণ ,নিঃশ্বাস -প্রশ্বাস ,শুনে শুনে রপ্ত করা। তালের পরিমিতি বোধ এবং সংযম ভীষণ জরুরী। জীবনে চলার পথে সংযম এবং তালের যেমন প্রয়োজন তেমনি সংগীতে। 
এভাবে চলতে চলতে সাত মাস অতিক্রান্ত। শুচি আজকাল অনুভব করে যখন গান -কবিতা পরিবেশন করে তখন গর্ভস্থ শিশুটির সঞ্চালন তালে তালে এবং সুরেসুরে। গলার ওঠানামা শিশুর চঞ্চলতা টের পাওয়া যায়। শুচির গর্ভে দুটি শিশু ছন্দে ,সুরে বড় হচ্ছে। 
শুচি দেখে , যে বাচ্চারা মানসিক দিকদিয়ে পিছিয়ে তারা গোড়াতে খুব চঞ্চল এবং অবাধ্য গোছের। এমনকি কিছু স্বাভাবিক বাচ্চারাও খুব অস্থির প্রকৃতির। তাদের বড় হওয়ার পরিবেশ ছিল অস্থিরতায় ভরা। এই একবছরে ওদের পরিবর্তন মন কে তৃপ্তি দেয়। শুনে শুনে বিশেষ ছেলেমেয়েরা কিছু করার চেষ্টা করছে। ওরা নিজেদের মত শব্দকরে ,আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে।অন্যান্য সহকর্মীদের হাতে মাস খানেকের দায়িত্ব দিয়ে নতুন সাথীদের সঙ্গে সময় কাটাতে চায় শুচি। সেই উপলক্ষে বাচ্চারা একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অপটু হাতের ঘর  সাজানো , কিছু গান ,কবিতা  পরিবেশন করে ওরা। 
শুচি সেদিন গান গেয়েছিল " তোমায় নতুন করে পাবো বোলে হারায় ক্ষণে ক্ষণ ও মোর ভালোবাসার ধন ,তুমি আমার নও আড়ালের তুমি আমার চির কালের "---
 শ্রীনি সবাই কে  মিষ্টি মুখ করালো। শুচি একটি মেয়ে এবং একটি ছেলের জন্ম দিয়েছে। ওরা সবাই সুস্থ আছে। 
শুভ সংবাদে আকাশ বাতাস চঞ্চল। মাস দুয়েকের আগেই শুচি এই বাচ্চাদের সাথে ওর দুই বাচ্চাদের নিয়ে তালিম দিতে শুরু করল। দিনে দিনে যেমন বাড়ে শশী কলা তেমন ই এদের সকলের মনোন্নতি ঘটতে লাগলো। ওদের সাথে সুরে ,ছন্দে এরাও সুরেসুরে কলকল করতে থাকে। .আশাবরী আর অভিপ্ৰীত বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। ওরাও গান ,কবিতায় আচ্ছন্ন। বাড়িটা সুরেলা ছন্দময় এবং সাংস্কৃতিক ভাবাপন্ন। শুচির বাবা একজন আদর্শ শিক্ষক কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। বাবা মেয়েদের স্বপ্নের নায়ক। সব মেয়েরা চায় বাবার মত হতে। জীবন সাথীও যেন বাবার মতো নীতি বোধের অধিকারী হয়। শুচির অর্ধেক আকাশ অনেকখানি সেই রকম। ওদের বাচ্চারা স্বাভাবিক ভাবে বড়ো হচ্ছে। গান ,কবিতা আর ওর বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের সাথী করে এগিয়ে চলছে। মুক্ত মনে মুক্তির খোঁজে। 
শুচি ওঁর গবেষণার ফল হাতে নাতে পেয়ে চলেছে। জন্মের সময় থেকে উপযুক্ত পরিবেশে ভ্রূণের বৃদ্ধি ঘটলে অনেকাংশে সুফল পাওয়া যায়। সুতরাং মানুষ টাটকা ফলপেতে আসক্ত। এই নেশা আজ শুচির বিদ্যালয়ে ভিড় জমিয়েছে। 

আজ শুচির বাবার চলে যাওয়ার বর্ষপূর্তি। বাবাও দূরারোগ্য ব্যাধির শিকার। মন ভার। কিন্তু ওঁর বিদ্যালয়ের বাচ্চারা এবং আশাবরী ,অভিপ্ৰীত রা সংগীত ,কাব্য ,ছন্দের সন্ধ্যা র  আয়োজন করেছে। উত্তরণের পথে পথে জুঁই ফুলের মালা , দীপ  ,ধূপের গন্ধে ভরেছে মন মন্দির। এই মন্দির মানব মানবীর মন্দির। এখানে মানুষ পূজারী। অসুস্থ মনের ঠাঁই নেই। সুস্থ  মানুষের তরী তে ঠাঁই হবে শুধু সুষ্ঠু ভাবে কাজ এর কাজী বলো ,পোপ বোলো আর ঋত্বিক বোলো সেই পথ দেখানোর নাবিকের।মৌসুমী @. 

Tuesday 5 September 2017

শুচি 
অন্ধকার আলোর হদিস আনে। মনের খাঁজে খোজঁপেরেছে মনের কোণের লুকোনো আশা। সে আশা আসা -যাওয়ার মাঝে আসন পেতেছে বিশ্বব্যাপী। রাতের আঁধারের পরে সুপ্রভাত আসবেই। প্রত্যেক সকাল নতুন কিছু বার্তা বয়ে আনে। ঘাত -প্রতিঘাত আসবে ,আসছেও। আসে দুঃখ -সুখের তেরো পার্বণ। সে পার্বণে পাঁচালী পড়তে ও  হয়। পাঁচালীর পঞ্চ ওলির সংগৃহিত মধু শুচির ক্ষণিকের ওলট পালট জীবনে মৌচাক বেঁধেছে। মৌতাত নিতে শিখেছে ,অন্য কে নিতে শেখাচ্ছে। 
শুচি কলেজে অধ্যাপিকা। সংগীত শিক্ষা ,তার প্রয়োগ  বিশ্ববিদ্যালয়ে র গণ্ডি পেরিয়ে চিকিৎসা জগতে সাড়া ফেলেছে। সঙ্গীত থেরাপি। মূমূর্ষু রোগীর জীবন এ বদল এনেছে। এই আলোয় অনেক ডালপালা রূপোলি রেখা এঁকেছে। কবিতা ,সুর ,ছন্দ ,গল্প গাছা আরও কতকি। সংগীত এর সুর না মানে কোনো বাধা ,না মানে কোনো সীমা রেখা। যে ব্যক্তি ভাবে ও আমার চরম শত্রু ,সেও  সুরে সুরে ভালোবাসায় দোল খাবে। শুচির গবেষণার ফলাফল। 
হাসপাতালে ডাক পড়ে ওঁর। অজ্ঞান করার পূর্বে লঘু সংগীতের সুর শোনানো অথবা কোন সুরটি মৃদু বাজানো যায়। পরামর্শ দেয় শুচি। কোনো মন রুগীদের সংগীত ,কবিতা পাঠে কউন্সেলিং করে। নেশা গ্রস্ত মানুষ দের সঠিক পথে আনতে এই সংগীত পদ্ধতি ভীষণ ভাবে কাজে দিয়েছে। বাবা নিজের কাজে ব্যস্ত ,ছেলে মেয়েরা নিজের জগতে। ছোট থেকে মা সন্তানদের বড় করেছে ,এখন ওরা বড় হয়েছে। মা এখন নিঃসঙ্গ জীবনে বাঁচার লড়াই চালাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বাবারাও। নিঃসঙ্গের সঙ্গী এই সংগীত থেরাপি। উঠতি বয়সের সন্ধিক্ষণের ছেলে মেয়েরা উদাসীন ,দিশাহীন। ওদের ঠিক দিশার দিশা এই থেরাপি। শুচি তৃপ্তির হাসি হাসে। এখনও অনেক কাজ বাকী। একটা নতুন কাজে হাত দিয়েছে। 
যত বয়স বাড়ছে রবি ঠাকুর জীবনে প্রাসঙ্গিক হয়ে ধরা দিয়েছে। 
অনেক কাজ বোন কে মানুষ করা। আবার বাবা কে সময় দেওয়া। আর রবি ঠাকুর এর গানের কথা ,সুর নিয়ে কাটা ছেঁড়া করা শান্ত শুচি কে অশান্ত করে। রবি ঠাকুর ওর জীবনে বাবা -মায়ের আসনে। সে যতটা পড়েছে এবং উপলব্ধি করেছে তাতে এই মানুষদের কার্যকলাপে হতাশ। দমবার পাত্রী সে নয়। সঙ্গী যখন শ্রীনি ,চলো ওদের চেনায় ,আবার চিনি। দুই পরিবারের মেলবন্ধন হল প্রজাপতির নিবন্ধিকরণে। 
শুচির ভাবনায় সূচিত হল চল্লিশটি মেয়ে -ছেলে নিয়ে অবৈতনিক কর্ম যজ্ঞ। এই বাচ্চারা অনাথ ,কেও আবার মানসিক বিকাশ হীনতার শিকার। শুচি আবেদন রেখেছে এই যজ্ঞে যারা ঋত্বিক হতে চান আসুন। অনেক সাড়া পেয়েছে। 
শ্রমে বিশ্বাস করে শুচি। এই কর্মশালায় প্রত্যেক বছর চল্লিশটি ছেলেমেয়ের খাওয়াদাওয়া ,চিকিৎসা এবং লেখাপড়া আর অবশ্যই সংগীত -কবিতা শেখা। আর স্বাবলম্বী হওয়া ,সর্বোপরি মানুষ হওয়া।
শুচি দেখে যে মানুষ ভুলে যায় , সব কিছু ,এমনকি নিজের অস্তিত্ব। তাঁদের প্রিয় গান -কবিতা বারবার বাজাতে থাকলে সেও গুনগুন করে। পুরোনো কবিতা আওড়াতে থাকে। বারংবার সেই কাজটি করতে হবে। সুফল মিলবে। 
সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত যাঁরা ,তাঁরাও এই পদ্ধতিতে সাড়া দিচ্ছে। উন্মাদ কেও শান্ত করা যাচ্ছে এই থেরাপিতে। 
চল্লিশটি সদস্য নিয়ে যাত্রা পথের একটা উদেশ্য আছে শুচির। শুচি জেনেছে রবীন্দ্রসংগীত চল্লিশটি তালে গাওয়া হয়েছে। এই চল্লিশ তাল, কিন্তু তালে একটাই গান।  রবীন্দ্র নাথের গান। যার বিভাজন নেই। যে তালেই গাও না কেন। তাই এই বেতালা জীবনে চল্লিশের তালে একটা সুরে সুর মেলানোর চেষ্টা। মানুষ হওয়ার মন্ত্র। 
মানুষ ছন্দে -সুরে  জীবন চালিকা শুচির সংগীত থেরাপি। সংগীত এর শিক্ষা পদ্ধতি কিভাবে মানুষের জীবন চালনার শক্তি হবে  সেটাই দেখার।সঙ্গীতের সিঁড়ি বেয়ে ,বিভিন্ন পদ্ধতি অনুধাবন করে এই জীবন এ চলতে চলতে গন্তব্যে পৌঁছবে ওঁর  বিশ্বাস।  মৌসুমী @ .

Saturday 2 September 2017

শুচি 
শৈশব থেকে দুই বোনের প্রাণায়াম নিত্য দিনের। অভ্যেসে কবে যে পরিণত হয়েছে কে জানে। ওমকার উচ্চারণে ঈশ্বরের শক্তি ব্রহ্মাণ্ডময় তরঙ্গায়িত। অজানা শক্তি ,বায়ু তরঙ্গে ভাসমান। সে শক্তি আত্মস্থ করে ওম শব্দে। আনন্দ ভালোবাসার ধন এ ধনী শুচির রাগাশ্রয়ী শ্রেষ্ঠ এবং রবীন্দ্রসংগীত শুভকর। ওর চিন্তায় রবি ঠাকুরের গান সংস্কৃত উচ্চারণে শুদ্ধসংগীতে ধরা দেয়। "ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসায় "..ধরাদিয়ে যায় মেঘমলহার -মিঞাকি মলহার এর তানে। চোখ বন্ধ করে তানপুরায় নাড়া বেঁধে বন্ধনহীন গ্রন্থি তে লঘু -উচ্চাঙ্গ সংগীত বেঁধে রাখে। যেন পদ্ম পাতায় ঢাকা কুন্দ ফুলের জলঝরানো মালা। জলের খানিকটা পদ্মপাতায় টলটল করছে। একেবারে টাটকা। 

সন্ধেবেলা রেওয়াজ করে প্রতিদিন। এক জ্যোৎস্না ভরা রাতের আকাশে জ্যোৎস্না রশ্মির মৃদুল দোলায় দ্রুত -মধ্য লয় গলার দানাদানা কাজ গুলো টের পাচ্ছে। সে এক ইন্দ্রিয়াতীত অনুভূতি। কখনো বৃষ্টি মুখর দিনে আলসে ভরা দুপুর বেলা বৃষ্টিস্নাত গাছের দিকে চেয়ে চলেছে গানের লহরী। এছাড়াও নানান কাজকম্ম ,উনিভার্সিটি নিয়ে ব্যস্ত। 
প্রতিদিনের অভ্যেস নিজের রোজনামচা লেখা। লেখার শেষে আজ হঠাৎ পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে দেখে কতকিছু পাওয়া না পাওয়ার স্মৃতি। পাওনা ,আফশোস ,অনুশোচনা আরও অনেক। চাঁদের আলো বিছানায় ,অপেক্ষাকৃত কম আলোয় স্মৃতি খুঁজে চলেছে। মাঝে মাঝে দিনলিপির খাতাটা বুকে চেপে ধরছে ,ঘ্রাণ নিচ্ছে। সেই ছোট বেলার গন্ধ ,মায়ের হাতের। মায়ের কাপড়ের ভালোলাগার গন্ধ। বিশেষকরে মা রান্না করতে করতে কাপড়ে হাতমুছতে মুছতে বলত শুচি -রশ্মি হোম ওয়ার্ক গুলো হল তোদের। মনে পড়ে দুষ্টুমি করলে মা বলতো দাঁড়া তোদের বাবা আসুক সব বলে দেব। বাবা কে ভয় পেতোনা মা সেটা জেনেও বলতো। বাবা ওদের বন্ধু। চুপিচুপি বাবার সাথে খেলা ,বায়না কত কিছুই না করত। 
মনে এল স্কুলের মাস্টার মশাই দিদি দের কথা। সবাই স্নেহ করতেন। এমনকি দাড়োয়ানের কথা। টিফিন শেষ হলেই বলতো ক্লাসে যাও। মনে পড়ে স্কুলের গেটের ওপারে ফুচকাকাকু কে। বলতো ওকাকু একটু তেঁতুল মাখা দাও তাড়াতাড়ি টিফিনের শেষ ঘন্টা পড়ে যাবে। বসন্তে শান্তিনিকেতন যাওয়ার কথা। গৌড় প্রাঙ্গনেবসন্তউৎসব ,গাছে পলাশের মেলা ,পারুলের উঁকিঝুঁকি। যা ছিল কালো ধলো গানের শেষে শালপাতার দোনায় রাখা আবীর ছড়িয়ে দেওয়া। তখন এ ওর কপালে ,গালে একটু আবির ছুঁয়ে দেওয়া। আবার বিকেলে বৈতালিক। কত স্মৃতি আজ ভিড় করেছে। বোলপুর যেতে আসতে আউলবাউল এর গানশোনা আবার সুরেসুরে গলা মেলানো। 
মা বলতো বেগম আখতারের জোছনা করেছে আড়ি গানটা গাইতে। বারবার গাইতে বলতো গাইতে গলি দিয়ে চলে যায় লুকিয়ে রূপোলি শাড়ী। পড়তেপড়তে শুচির বুকফেটে চোখবেয়ে জলের ধারা নেমে এলো। 
প্রকৃতির নিয়মে আকাশের কালো মেঘ দেখে অভ্যস্থ। কিন্তু জীবনে এই মেঘের গায়ে দ্বিতীয় মেঘ দেখেছিলো। এতো কালো মেঘ কোনোদিনও দেখেনি। ডক্টরেট পাওয়ার পরেপরে মায়ের দূরারোগ্য খবর। তখন আর কিছুই করার ছিল না। মায়ের চলে যাওয়ার দিন বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে পারেনি। সেই দিন ও অভিভাবিকা। আজ পাতা ওল্টাতে গিয়ে অঝোরে কাঁদছে। যত পারিস কেঁদে নে। কেও দেখবে না ,কেও নিষেধ করবে না। বুকের ওপর খাতাটা রেখে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে শুচি ।মৌসুমী @