Thursday 31 August 2017

শুচি

 পৃথিবীতে  ঘনীভূত মন  সভ্যতায় ক্রমবর্ধমান বৈষম্য দৃশ্যমান।বরাবর সে স্পষ্টবক্তা ,এমনকি সাদা কে সাদা আর কালো কে কালো বলতে কোনো অশুভ শক্তি তাঁকে টলাতে পারেনা। অনেকটা সেই বাচ্চা ছেলেটার মতন। উলঙ্গ রাজা কে প্রশ্ন করেছিল রাজা তোমার কাপড় কোথায়। জ্ঞানের সুর সঞ্চালনা গানের সুরে বাঁধে ওর গবেষণা। রেওয়াজ রীতি ধীর লয় -মধ্য লয় -দ্রুত লয় এর মধ্যে ধৈর্য বাড়ে। কড়ি -কোমল স্বর গম তান এ নিঃস্বাস -প্রস্বাস বৃদ্ধি পায়। কথা শোনার ধী ঘটে। অন্য মানুষ কে মর্যাদা দিতে শেখায়।
মা -মাসি -পিসিদের ঘুমপাড়ানি গান বাচ্চা অবস্থায় স্মৃতি শক্তি বাড়ায়। খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো ,দোলদোল দুলুনি এই চলিত গান তার কথা অনায়াস বিচরণ। মনে রাখতে কোনও ব্রাহ্মী শাক খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
গর্ভাবস্থায় মা লঘু সংগীত শোনে অথবা পছন্দ সই সংগীতে মনোনিবেশ করেন তাহলে নবজাতক -নবজাতিকা অন্ততঃ দুষ্ট প্রকৃতি হতে সময় নেবে।তাঁর  গবেষণার বিষয় এগুলো। জানে না  কতটা ফলপ্রসূ হবে। স্নায়ুরোগ -ভুলে যাওয়া ব্যামো এমনকী মনোনিবেশ এ ব্যাঘাত কেন ঘটে তার ই এই গবেষণা।গান যদি মন্ত্র মুগ্ধ হয় তবে এই পদ্ধতি চিকিৎসা জগতে আলোড়ন তুলতে পারে। ভিন্ন স্বাদের সঙ্গীত সে হতে পারে বিবিধ মাত্রিক। জন্মানোর পূর্বে মা এবং পরিবারের সদস্য যদি এই পদ্ধতি মেনে চলেন তার পরের প্রজন্ম কী সুস্থ সবল শিশুর আগমন আশা করতে পারে ? কাজ চলছে ,শুচির বিভিন্ন  পরিবেশ পরিস্থিতির সন্তানসম্ভবাদের নিয়ে। বস্তি বলতে যা বোঝায় সেখানকার পরিবার নিয়ে। তাঁর সাথে চলছে উপযুক্ত পথ্য। ওষুধ আর বিশ্রাম। বাকী সব কিছুর জন্য শ্রীনি ওর পাশে।

মানুষ কেন তাঁবেদার হয় ,স্বজন পোষণ করে ?এ ওর পিঠ চাপড়ায় ,বলে তুমি ভালো তাহলে আমিও ভালো। সততার দিন কেন ছোট আর অসততার রাত কেন এত দীর্ঘ। এতো মহামারী। সভ্যতার সংকট। আত্মিক সংকট ,মনের সংকট। যোগ্য প্রশংসার অভাব। অভাবটা অভাবেরই অভাব। দ্বন্দ্ব ,ঠান্ডা স্রোতের জলোছ্বাস।গবেষণা মাধ্যম সংগীত বাছার অন্যতম কারণ। কিছু যদি উপায় খুঁজে পাওয়া যায়.। 

কবে যে শ্রীনি ওর কাছের বন্ধু হয়েগিয়েছে বুঝে ওঠার আগেই শুচির পাশেপাশে।যে দিন  সেই আকাশ কালো মেঘে বৃষ্টি নামবে নামবে  ,বিপুল তরঙ্গ গানের তালে এলোচুলে শুচি দরজা খুলেছিলো সেই দিন থেকে  ভালোলাগা ভালোবাসায় পৌঁছেছিল।ভালো লেগেছিলো ওঁর মায়ের আপ্যায়ণ। ওঁর মায়ের হাতের তৈরী লেবু জল। প্রাণ জুড়িয়ে মন ছুঁয়েছিল।  সকলেই খুব হাসি খুশি। শ্রীনি সেই দিন কথার ছলে বলে সে একজন নার্ভের ডাক্তার। আর রবীন্দ্রসংগীত তাঁর ভীষণ প্রিয়।
নার্ভের রুগীর মনের মুক্তি ঘটানোর পদ্ধতি যদি সংগীত হয়। সংগীত থেরাপি যদি  মন চাঙ্গা করে কেমন হয়। শ্রীনি সংগীতের ওপর স্পেশাল কোর্স করছে। সূত্র সংগীতে দুজনের ভালোবাসা।
গবেষণায় অনেকটা সফল আজ শুচি। ওর পেপার পড়তে ডাক পড়েছে বিদেশের নামী ই উনিভার্সিটিতে। পৃথিবীর  অস্থির জীবন যাপনে এর কতটা প্রভাব ফেলবে সেটাই পরখ করবে জগৎ। নিজের দেশে এখন  অনেক কাজ চলেছে গবেষণার ওপর । শুচি শুনেছে ওর গবেষণা পত্র সবার কাছে উন্মুক্ত হবে। আগ্রহী সকলে কি আছে সেথায়
  মৌসুমী @.

Tuesday 29 August 2017

শুচি 
গুরু শব্দের অর্থ , শুচির , অন্তরের অন্তঃস্থলে একটি সফল গাছের বীজ বপন করেছে। গাছটি আগামীতে সুগন্ধি  ফুল- সুমিষ্ট ফল   দেবে। আশ্রয় দেবে  ,ছায়া দেবে আর্ত আতুরজনে। সুদূর কোন নদীর তীরে গড়বে মানুষ সভ্যতা।" গু " এর অর্থ আঁধার ,"রু "এর অর্থ অন্ধকার মুক্তির জ্যোতি। ও  অন্ধকার এর নিকষ কালো আকাশে রূপালি আলোর ঝিলিক দেখতে চাই। সেই আঁচে শুচির তাপ নিয়েছে দু বার। প্রথম বাবা -মা এবং দ্বিতীয় বার তাঁর শিক্ষা -সঙ্গীত গুরু মাধ্যমে। 
ওর প্রতিবেশীরা এখনও বলেন শুচি ডাক্তার হলে সমাজ সেবা করতে পারত। মেয়ে কোথায় বিয়ে হবে ,সেখানে মুক্ত মনে  কাজ করতে পারবে কিনা কে জানে। ওর কিছুকরার ইচ্ছাই যেন পূর্ণতা পায়। প্রথম প্রথম ওর বাবামায়ের সে কথা মনে হলেও ,পরক্ষণে মেয়ের ওপর ভরসা রেখেছেন। শুচি গানে মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছে। সকাল সাঁঝ চলে রেওয়াজ। দশটি ঠাটের রাগরাগিণীর ভাঙাগড়া চলছে।খাদ -মধ্য -তার সপ্তক এ গলার অনায়াস চলন। যে দিন ওর রেওয়াজ হয়না ,প্রতিবেশীদের মনে মেঘ জমে। কখন শুচির মলহার এর তানে বৃষ্টি নামবে। ভোরের  ভৈরবী -আহির ভৈরব ঘুম ভাঙায়। কখনো কাফী ,আশাবরী -গান্ধারী  রেওয়াজে পাড়াময়। ছুটিছাটা থাকলে ধরে গুরু গম্ভীর টোরি রাগ। গলার বাঁকে বাঁকে উষ্ণতার ঘাম বিন্দু ঝরে। তানপুরা নিয়ে চোখ বন্ধকরে যেন মা স্বরসতী স্বর সঙ্গমে ব্যস্ত।
ঠাকুমা ,দিদা বলেন ও জন্মের আগেই সংগীত শিক্ষা নিয়েছে। শুচি বলে সেটা আবার কেমন কথা। মা যে বলে ওর যখন দশ বছর তখন থেকে ও  গান শেখে। স্পষ্ট বাদী ও এবং এটা ওটা বোঝালে হবেনা। যুক্তি চাই। ওনারা বোঝালেন শুচির মা খুব ভালো গান করে ,যখন শুচি ওঁর মায়ের গর্ভে তখন ওর মা নিয়মিত রেওয়াজ করতেন। সুতরাং শুচির গানের খড়ি জন্মের আগেই হয়েছে। বেজায় খুশী। স্নাতক স্তরে ও প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছে। 
পরবর্তী পর্যায়ে ও  রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে গবেষণার সিদ্ধান্ত নেয়।  
ওর মহাবিদ্যালয়ে একটি রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের ছাত্রের সাথে পরিচয় হয়। ছেলেটির অনেক কিছু ভালোমন্দ  ওর সাথে মিলেযায়। কলেজ চত্বরে দুজনে টুকটাক কথায় কথায় হঠাৎ শরতের মেঘের ক্ষণিক বৃষ্টি। এক ছুট্টে কলেজ দালানের এক কোণে। শরতের আকাশে সাদা মেঘ ভেসে ভেসে যাচ্ছে।শুচি গুনগুনিয়ে ওঠে "অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া --দেখিনাই  কভু দেখিনাই এমন তরণী বাওয়া " --এই গানটা শুচি ওর মায়ের কাছে শিখেছে। আরও একটা গান মায়ের কাছে শেখা ভীষণ প্রিয় "কাঁদালে তুমি মোরে ভালোবাসারই ঘায়ে "--.এবার  গাইছে গানের স্কেল মেনে। চলিতে পথেপথে বাজুক ব্যথা পায়ে। গাইতে গাইতে হাসছে খিখিলিয়ে। 
মায়ের কাছ থেকেই রবীন্দ্রনাথ কে দেখাশোনা এবং ভালোবাসা। ও নিজেই কথা বলে যাচ্ছে আজ। ওই ছেলেটি শুনে যাচ্ছে। ছেলেটির নাম শ্রীনিবাসন। শ্রীনি নামে সবাই চেনে। ও  ভীষণ ভালো কর্ণাটকি গায়। পশ্চিমবঙ্গে দুই পুরুষের বাস। অনর্গল বাংলা বলে এবং রবীন্দ্রসংগীত এর ভক্ত। গায়ও ভালো। 
এমনই একদিন বিকেল বেলায় আকাশে কালোমেঘ ঘনিয়েছে। শুচি সাউন্ড সিস্টেমে গান চালিয়ে শুনছে "বিপুল তরঙ্গ রে "..পড়েছে লং স্কার্ট একটা টপ।  আর খোলা চুল পিঠে এলিয়ে পড়েছে। মুখের ওপর দুই গালে গোছাগোছা চুল থুতনি ছুঁয়েছে। জানলা খোলা প্রবল বেগে হাওয়া দিচ্ছে। মায়ের হাতদুটো ধোরে গানের তালে তালে ঘুরছে। বোন ও তালে তাল দিচ্ছে। বাবা বসে বসে আনন্দের হাসি হাসছেন।   পিতার তৃপ্তি। তৃপ্ত পূর্ণতার আচ্ছাদনে। এমন সময় কলিংবেল এ বেজে উঠলো "এস  এস  আমার  ঘরে এস "..পিয়ানোর শব্দ। ..মৌসুমী @ 


Sunday 27 August 2017

শুচি
শুচি এবছর মাধ্যমিকে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম কুড়িতে স্থান পেয়েছে। বাড়ির সকলের ইচ্ছে ও বিজ্ঞান নিয়ে এগিয়ে চলুক। কিন্ত ওর পছন্দ কলা শাখা। ওর বাবা -মা দুজনেই শিক্ষা জগতের মানুষ। আদর্শবাদীও ,সুতরাং মেয়ের ইচ্ছে ডানায় নতুন রং চাপিয়ে না দিয়ে ওড়ার জন্য পাখনা দুটি কে আরও মজবুত কোরে দিলেন। শুচি ওঁর পছন্দেতেই রইল। শুচির একটি ছোট্ট বোনও আছে ,তাকে রশ্মি। সে খুব মিষ্টি ,দিদির অন্ধ সহযোগী।  বাড়িতে সংগীতের পরিবেশ। দুই বোন উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নেয়। শুচির গলায় রসগোল্লার রসে মধুর  ভৈরবী নৃত্য করে।
শুচি সংগীত নিয়ে উচ্চশিক্ষায় এগোচ্ছে। তবে কঠোর নিষেধ কোনও মাচা অনুষ্ঠানে গাওয়া চলবে না। ও বাধ্য মেয়ে। এছাড়া আর  কোনো বিধি -নিষেধ নেই। মা -বাবার ইচ্ছে মানুষ হোক ,মানুষের পাশে দাঁড়ায় যেন ওরা। মহাবিদ্যালয়ে ওঁর খুব প্রশংসা। ও হ্যাঁ ,শুচি রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে পড়ছে ,তার সাথে চলছে উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম। ছোট বেলা থেকে ও রূপের প্রশংসা শুনে এসেছে। প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে। ওর ও ভালো লাগে। কিন্তু ও বলে নিজেকে শুচি মাটি কে ভুলবিনা ,ওটাই তোর অস্তিত্ব।
মুখখানা পানপাতা বসানো ,চোখ -নাক সবকিছুই তাঁদের নিজের স্থানে সমৃদ্ধ। গায়ের রংখানা গম রঙে গমগম করে। চুল গুলো কবি চন্ডীদাসের কথায় "এলাইয়া বেণী ফুলেরও গাঁথনি "...লোকজনের না চলে নয়ন তারা।
ভাল -ভাল শুনে ক্লান্ত। লেখাপড়া -সংগীত -অঙ্কন -রূপের মাধুরী পূর্ণ ফুলের সাজি। পূজার অর্ঘ্য। এ যে প্রকৃতি দিয়েছে সাজায়ে তারে। ওঁর অভ্যেস প্রতিদিন শুতে যাবার আগে রবিঠাকুরের একটি কবিতা আর একটি গান গুনগুন করতে করতে ঘুমিয়ে পরে। আজও তাই সেই কবিতাটি ছোট্টমেয়ে র হারিয়ে গেছি আমি শেষ করে গাইছে "নিশিদিন মোর পরানে প্রিয়তম মম "..কোমল নিষাদ -গান্ধার -ধৈবত -ঋষভ নিখুঁত লাগানোর চেষ্টা চলছে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে।
কঠিন তাল সমৃদ্ধ গান বড়ো প্রিয়। শিক্ষক মন্ডলী ওর প্রতি বেশি যত্নবান। শুনেশুনে রপ্ত করে। গানে তাল -ছন্দ -মাত্রা -সম -ফাঁক নিয়ে খেলতে ভালোবাসে। দাদরা তাল কে এক তালে আনলে গানের মাধুর্য কেমন হয়। কাহারবা তাল কে ত্রিতালে আনলে কেমন হয়। ধামারের চোদ্দ মাত্রা ভেঙে সাত মাত্রা  তেওরা আনলে কেমন লাগে। এই ভাবনা ঘুরঘুর করে। ...মৌসুমী@