Tuesday 29 August 2017

শুচি 
গুরু শব্দের অর্থ , শুচির , অন্তরের অন্তঃস্থলে একটি সফল গাছের বীজ বপন করেছে। গাছটি আগামীতে সুগন্ধি  ফুল- সুমিষ্ট ফল   দেবে। আশ্রয় দেবে  ,ছায়া দেবে আর্ত আতুরজনে। সুদূর কোন নদীর তীরে গড়বে মানুষ সভ্যতা।" গু " এর অর্থ আঁধার ,"রু "এর অর্থ অন্ধকার মুক্তির জ্যোতি। ও  অন্ধকার এর নিকষ কালো আকাশে রূপালি আলোর ঝিলিক দেখতে চাই। সেই আঁচে শুচির তাপ নিয়েছে দু বার। প্রথম বাবা -মা এবং দ্বিতীয় বার তাঁর শিক্ষা -সঙ্গীত গুরু মাধ্যমে। 
ওর প্রতিবেশীরা এখনও বলেন শুচি ডাক্তার হলে সমাজ সেবা করতে পারত। মেয়ে কোথায় বিয়ে হবে ,সেখানে মুক্ত মনে  কাজ করতে পারবে কিনা কে জানে। ওর কিছুকরার ইচ্ছাই যেন পূর্ণতা পায়। প্রথম প্রথম ওর বাবামায়ের সে কথা মনে হলেও ,পরক্ষণে মেয়ের ওপর ভরসা রেখেছেন। শুচি গানে মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছে। সকাল সাঁঝ চলে রেওয়াজ। দশটি ঠাটের রাগরাগিণীর ভাঙাগড়া চলছে।খাদ -মধ্য -তার সপ্তক এ গলার অনায়াস চলন। যে দিন ওর রেওয়াজ হয়না ,প্রতিবেশীদের মনে মেঘ জমে। কখন শুচির মলহার এর তানে বৃষ্টি নামবে। ভোরের  ভৈরবী -আহির ভৈরব ঘুম ভাঙায়। কখনো কাফী ,আশাবরী -গান্ধারী  রেওয়াজে পাড়াময়। ছুটিছাটা থাকলে ধরে গুরু গম্ভীর টোরি রাগ। গলার বাঁকে বাঁকে উষ্ণতার ঘাম বিন্দু ঝরে। তানপুরা নিয়ে চোখ বন্ধকরে যেন মা স্বরসতী স্বর সঙ্গমে ব্যস্ত।
ঠাকুমা ,দিদা বলেন ও জন্মের আগেই সংগীত শিক্ষা নিয়েছে। শুচি বলে সেটা আবার কেমন কথা। মা যে বলে ওর যখন দশ বছর তখন থেকে ও  গান শেখে। স্পষ্ট বাদী ও এবং এটা ওটা বোঝালে হবেনা। যুক্তি চাই। ওনারা বোঝালেন শুচির মা খুব ভালো গান করে ,যখন শুচি ওঁর মায়ের গর্ভে তখন ওর মা নিয়মিত রেওয়াজ করতেন। সুতরাং শুচির গানের খড়ি জন্মের আগেই হয়েছে। বেজায় খুশী। স্নাতক স্তরে ও প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছে। 
পরবর্তী পর্যায়ে ও  রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে গবেষণার সিদ্ধান্ত নেয়।  
ওর মহাবিদ্যালয়ে একটি রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের ছাত্রের সাথে পরিচয় হয়। ছেলেটির অনেক কিছু ভালোমন্দ  ওর সাথে মিলেযায়। কলেজ চত্বরে দুজনে টুকটাক কথায় কথায় হঠাৎ শরতের মেঘের ক্ষণিক বৃষ্টি। এক ছুট্টে কলেজ দালানের এক কোণে। শরতের আকাশে সাদা মেঘ ভেসে ভেসে যাচ্ছে।শুচি গুনগুনিয়ে ওঠে "অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া --দেখিনাই  কভু দেখিনাই এমন তরণী বাওয়া " --এই গানটা শুচি ওর মায়ের কাছে শিখেছে। আরও একটা গান মায়ের কাছে শেখা ভীষণ প্রিয় "কাঁদালে তুমি মোরে ভালোবাসারই ঘায়ে "--.এবার  গাইছে গানের স্কেল মেনে। চলিতে পথেপথে বাজুক ব্যথা পায়ে। গাইতে গাইতে হাসছে খিখিলিয়ে। 
মায়ের কাছ থেকেই রবীন্দ্রনাথ কে দেখাশোনা এবং ভালোবাসা। ও নিজেই কথা বলে যাচ্ছে আজ। ওই ছেলেটি শুনে যাচ্ছে। ছেলেটির নাম শ্রীনিবাসন। শ্রীনি নামে সবাই চেনে। ও  ভীষণ ভালো কর্ণাটকি গায়। পশ্চিমবঙ্গে দুই পুরুষের বাস। অনর্গল বাংলা বলে এবং রবীন্দ্রসংগীত এর ভক্ত। গায়ও ভালো। 
এমনই একদিন বিকেল বেলায় আকাশে কালোমেঘ ঘনিয়েছে। শুচি সাউন্ড সিস্টেমে গান চালিয়ে শুনছে "বিপুল তরঙ্গ রে "..পড়েছে লং স্কার্ট একটা টপ।  আর খোলা চুল পিঠে এলিয়ে পড়েছে। মুখের ওপর দুই গালে গোছাগোছা চুল থুতনি ছুঁয়েছে। জানলা খোলা প্রবল বেগে হাওয়া দিচ্ছে। মায়ের হাতদুটো ধোরে গানের তালে তালে ঘুরছে। বোন ও তালে তাল দিচ্ছে। বাবা বসে বসে আনন্দের হাসি হাসছেন।   পিতার তৃপ্তি। তৃপ্ত পূর্ণতার আচ্ছাদনে। এমন সময় কলিংবেল এ বেজে উঠলো "এস  এস  আমার  ঘরে এস "..পিয়ানোর শব্দ। ..মৌসুমী @ 


No comments:

Post a Comment