Wednesday 27 December 2017

 প্রিয় আমার্ 
#মৌসুমী রায় 
মনে এলো কতক কতক কথা ক্ষণেক স্মৃতির ঘরে।তোর আসার অনুভূতি ,
আমার শরীর জুড়ে। এক পলকে বিদ্যুৎ ঝলকে রূপালি আলোকে ,
জমা মেঘের বৃষ্টিধারায়, রাতের জোছনা আভার  উঁকি অন্তরে,
সুখের ঘরের আভাস ঘিরে। 
শুধালে ছুঁয়ে যাওয়া মনের গভীর খাদে ,প্রতিধ্বনি হলো মনের কিনারে। 
প্রশ্নে প্রশ্ন সাজানো মনে মনে  অনেক ভাষার ভাসা ভাসা   অভিজ্ঞতা,
টলমল পায়ে চলার আকুলতা ,সুখে দুখে ,থাকব সাথে।
অঙ্গীকার নয় ,এশুধুই ভালোবাসা , বাঁধা নয় অলস মায়া ডোরে ।

কত কত কথা   বইল মিষ্টি  হাওয়ার বদান্যতা আর ব্যাকুলতায়।
ঝাপসা দেখার আঁধার রাতের চাঁদের জোছনায় ভাসলো ভাষার বন্যা।
ফাল্গুনের পূর্ণিমা রাতে নদীর কিনারায় নৌকা বাঁধা ঘাটের পানে চেয়ে থাকা।
কোথাও কিছু কম পড়েনি ,কানায় কানায় ভরে থাকা মুগ্ধতা।

অল্প আলোয় অবুঝ শিশুর কথা   যখন  ভাবে মন ,কিন্তু বলে মুখ।
ঘন যামিনীর মাঝে নাদেখা কে দেখা ,অচেনা কে চেনার অব্যক্ত ভাষা।
সৃষ্টিকালের মাটির তাল এখন এক মহীরুহ হওয়ার পথে। তবুও অনন্ত অশান্ত মন।
শুভ কামনা ,যত হকের আশীর্বাদ যেন ওই সৃষ্টির গোড়ায় ঢালে উদারতা ।

এটাই শুধুই অন্তরের অন্তঃস্থলের বাসনা ,কামনা। যদি ভালো কিছু হয়ে থাকে।
হকের সমস্ত আশীষ টুকু নিঃশেষে সৃষ্টির উপর বর্ষায়।

ভালো থাকার আশীর্বাদ চেয়ে নেওয়ার চোখ আকাশ পানে চায়।
হয়ত খুবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভূতি ,মনে জাগে এভারেস্ট লঙ্ঘনের প্রাপ্তি।

নিজের ভালোলাগা কখন যেন প্রিয়জনের  ভালোলাগা ,ভালোবাসায় রূপান্তর ঘটে।
আজও সেই  সময় ,ক্ষণ অচেনা ,অজানা  এক আবিষ্কার। এতে নিজের অধিকার ,
এর ফলাফল সুদূর প্রসারী বহন বার্তায় । 

ওই যে  তারায় তারায় ভরা  আকাশ মাঝে  সূয্যি চাঁদের যুগল ক্ষেত্র । 
কামনায়ওঁদের মত মুক্ত মনের হলে ই অন্ধকার হবে আলো। আঁধারে জ্বলজ্বল করবে স্বাতী ,
অরুন্ধতী ,ধ্রুবতারা সবের কাণ্ডারী ।

অল্প নিয়ে থাকার আকাঙ্খায় বৃহত্তর পথের অতিক্রমের আশা।
 সকল ক্ষণের সাথে অবস্থান।সে যে আঁধারে আলোর চাদর পেতেছে।
প্রখর তাপের পরে এক পশলা বৃষ্টি ,আহা সে স্মৃতি আজ গভীর শ্বাসের তৃপ্তি মাঝে।
স্ন্হের পরশে ,পূর্ণ আবেশে পরম প্রাপ্তি আলোর দিশারী।      

Wednesday 18 October 2017

পূর্ণিমা 
# মৌসুমী রায় 
বীরভূম জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম  এ ভুজঙ্গ ভূষণ সেন শর্মার নিজ গৃহে কালী পূজার প্রস্তুতি চলত দুর্গাপুজোর দশমীর পরের দিন থেকে। কারণ পুকুর ঘাট থেকে এঁটেল মাটি তুলে এনে শখানেক প্রদীপ গড়তে হত ,শুকোতে দিতে হতো , এমনকি আগুনে পুড়িয়ে একেবারে শক্ত পোক্ত করে একটা বাঁশের ছিলা দিয়ে বানানো ঝুড়ি তে ভরে চিলেকোঠার ছোট্ট ঘরে এককোনে রেখে দেওয়াহত ,বাচ্চাদের নাগালের বাইরে।  প্রদীপের সর্ষের    তেল থেকে সলতে সব কিছুই বাড়ির তৈরী  ; জমির সর্ষে পিষিয়ে তেল হত ,বাড়িতে কার্পাস তুলোর গাছ আবার শিমুল তুলোরও। কাপাস তুলোর সলতে পাকানো হতো । গিন্নিমারা  দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে ছালের কাপড়পড়ে সলতে পাকাতেন। সে এক ধুম বটে বাড়িতে। ওই সব দেখতে গিয়ে পড়াশোনা মাথায় উঠতো আরকি। পড়তেও হত পুজোর ছুটির পরে পরে ক্লাসে ওঠার পরীক্ষা। কি রাগ হতো কী বলব। সব রাগ পড়ত ওই বিদ্যা সাগর মহাশয়ের ওপর। 

সমস্ত কাজ নিপুণহাতে সম্পন্ন করত ওই বাড়ির পরিচারিকা সুষমা মুর্মু আর ওর মেয়ে পুন্নুমা ছাড়াও আরও একজন ওই বাড়ির মেয়ে শ্রমণার ছোটবেলার বন্ধু শামীম। পুন্নুমার নাম পূর্ণিমা কিন্তু ওর বাড়ির সবাই পুন্নিমা আর পুন্নুমা বলেই ডাকত ,  এবাড়ির সকলে পূর্ণিমা বলে। পূর্ণিমার গায়ের রং শ্যামলা ,চোখদুটো উজ্বল সবসময় যেন কথা বলে ;আর নাক টা চাপা হলেও ওকে কৃষ্ণকলি অনায়াসে বলা যাই ;সুষমা পিসির তাতে সাই নেই ,সুতরাং ওকে পুন্নুমা ডাকতে হবে। আর শামীম ? শ্রমণা দের   গাঁয়ের ,পাশের গাঁয়ে থাকে ,ছোটবেলা থেকে এবাড়িতে ওর আব্বু হাকিম শেখের সাথে আসত ,সেইথেকে শ্রমণারা তিন বন্ধু। হাকিম চাচা আবার ভুশুনসেনের সর্বক্ষণের বিশ্বস্ত সঙ্গী। ভুজঙ্গ ভূষণ কে সকলে ভুশুনসেন নামেই ডাকতেন ,ও হ্যাঁ সেন মহাশয় তাঁর নামে ধারে ভারে কাটেন ;তিনি যা বলবেন তাই হবে এই কথা সকলের জানা। 

 প্রথম প্রথম বাড়ির গিন্নিমার  ছোঁয়াছুঁয়ি ,এটা ধরবেনা ,ওটা নাড়বেনা গোছের শুচি বায়ু চাগাড় দিত। এমনকী কলাইকরা সানকি থালায় ওঁদের খেতে দিতেন ,সিমেন্ট বাঁধানো মেঝের এঁটো শুকরি গোবর দিয়ে ধুতে বলতেন ;বাড়ির খিড়কি দরজা থেকে সদর সমস্ত টা ই গোবর জলের লেপন থাকত। পাকা বাড়ির সর্বত্র গোবর এর গন্ধে তিষ্ঠোনো যেতনা।  সেন  বাড়িতে কত লোকজন আসতেন , প্রথম অভ্যর্থনা হতো এক কাঁসার ডিস্ এ গুড়ের বাতাসা আর কাঁসার ঘটিতে জল ; কাঁসার গেলাসে ও  জল টলটল করত, এমনকি গেলাসটি এমন চকচক করতো যে মুখ দেখা যেত। তাহলে হবে কি একচুমুক দিলেই গোবর গোবর গন্ধ। লোকজন বাতাসা খেয়েই তুষ্ট হতেন তেষ্টায় ছাতি ফাটলেও জলমুখো হতেননা। 
এসব ভুশুনসেনের নজর এড়াতনা , তাই গোয়ালঘরের গোবর ওই গোয়াল পর্যন্ত রইল ,বাড়ির অন্দরমহলে প্রবেশ নিষিদ্ধ হল।
কালীপুজোর আগে যখন শ্রমণারা তিনবন্ধু ছোটছিল তখন সুষমা পিসি সব করত। মানে প্রদীপ তৈরী করা থেকে শুকানো ,শুকনো প্রদীপ চিলেকোঠা থেকে নামানো। সব পরিশ্রমের কাজ সুষমা পিসির ,আর গিন্নিমাদের কাজ  সেই প্রদীপ জ্বালিয়ে মন্দিরে মন্দিরে দেওয়া ,খিড়কি থেকে সদর পর্যন্ত  পুত্র বধূরা সাজাতেন। প্রদীপ জ্বালানোতে সুষমার ছোঁয়া অশুচি হবে। 
এমনই এক কালীপুজোর আগের রাত্রে ভূতচতুর্দশী তে পুর্ণিমা বলে  দাদামশাই,এ কেমন রীতি গো তোমাদের ;আমরা সাঁওতাল বটি ,নীচু জাত কিন্তু চোদ্দ শাক তুলে আনি ,প্রদীপ গড়ি ,তোমাদের খাবার জল আনি। কিন্তু মন্দিরে উঠে দীপাবলির দিনে দীপ জ্বালাতে পারিনা। কেননা আমরা নীচু জাত। আবার শামীম দিদি , আমি  শ্রমণা দিদি একসাথে খেলাকরি ,স্কুলে যাই সেখানে স্যার ,দিদিমণিরা তফাৎ পড়ান না। তাহলে শামীমদিদি ,আমি ,আমার মা কেন দীপ জ্বালাবোনা বলতে পারো ? অঝোরে পূর্ণিমার দুই গাল অশ্রুধারায় সিক্ত ,সিক্ত ঠোঁট দুটি প্রতিবাদের ভাষায় কাঁপছে। 
আজ প্রতিবাদ ভাষার সার্থক জন্ম লাভ করেছে ,সবাই স্তব্ধ সুঁচ পড়লে তার শব্দ ও যেন অনুরণন সৃষ্টি করবে। 

এখনও থামেনি পূর্ণিমা বলেই চলেছে অবহেলা ,অনুকম্পা ,অশ্রদ্ধার ,বঞ্চনার কথা। 
মাকালী ?সেওতো এক মেয়ে ; তোমরা  জানো এই দেবী কোন জাতের ?তোমরা ভয়ে পুজো করো ,শ্রদ্ধা নেই তোমাদের। কালীও মেয়ে আমরাও মেয়ে। আমাদের অপমান মাকালী র অপমান। আগে নিজের ঘরের কালীমাতা কে সম্মান দাও। উঁচু জাত ,নিচুজাতের দোহাই দিও না। পরিশ্রমের ভাগ নীচু জাতের আর ফলাফলের ভাগ তোমাদের। 
কান্না তখন আর্তনাদের ভাষায়। 
রাশভারী ভুজঙ্গ ভূষণ সেনের  আনুমানিক পাঁচকিলো গ্রাম ওজনের হাত টি স্নেহের পরশ নিয়ে পূর্ণিমার মাথায় যেন সুরক্ষার ছাতা ; রোদ ,বৃষ্টি থেকে দুর্যোগ থেকে রক্ষা করলো। তিনি  বাজখাই কণ্ঠস্বরে গলা টা খাঁকড়িয়ে হুঙ্কার দেন। 
আজ দীপাবলি সবাই খুশির আলোতে এস।
 বড় বড় মাটির সরাতে একশত প্রদীপ সাজিয়ে জ্বালানো হল। পূর্ণিমা ,শামীম ,শ্রমণারা ,বাড়ির বাচ্চারা গোটা বাড়িতে আলোর বন্যা বইয়ে দিলো। মন্দিরে মন্দিরে প্রদীপ জ্বালালো। পুরোনো সেই শিবতলা , যেখানে শ্রমণারা  জ্বালানো প্রদীপের থালা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সকলে গাইত "আলোর ডালায় বরণ  করি মাগো ,  সকাল সাঁঝে মনের ঘরে জাগো। " আজ সুষমা পিসি ,  শামীম, পূর্ণিমারাও গাইছে ,দীপাবলির রাতে মনের আলোগুলো জ্বালাচ্ছে। 

ওঁদের এখন অনেক বয়স হয়েছে ঠাকুমা ,দিদিমা হয়েছে। যে যেখানে থাকুকনা কেন , এখনো কালীপুজোয় পূর্ণিমারা একসাথে নিজের গ্রামে যায় ,প্রদীপ জ্বালায়  ,গান গায় কাঁপাকাঁপা গলায়।  শ্রমণার পাঁচ ভাই কে ভাইফোঁটা দেয়।  সারা বছরে সুস্থতা কামনা করে ওরা সকলের।   পরের বছর আবার আসব এই আশায়  আশায় থাকে।  

Friday 6 October 2017

সদানন্দ
শেষ পর্ব 
#মৌসুমী রায় 
আজ ষষ্ঠীর সকালে বাবার সাথে ভগবতী তলায় এক প্রস্থ বাজিয়ে এসেছে। ফিরে এসে দেখে  বাড়ির বাচ্চারা ঘুমথেকে তখনও ওঠেনি। সদা যখন বাড়িতে থাকে তখন ওর মা একটু দেরি কোরে ঘুমথেকে ওঠায়। যাইহোক বাড়ির গিন্নিমা সদার বাবা কে আর সদা কে চা ,বিস্কুট দিয়েছে। এই বিস্কুট তার ভালো লেগেছে। বাড়ির জেঠিমা আরও কখানা দিয়ে বলেন সদা খেয়ে নে চটপট। সদাইয়ের  শান্ত স্বভাবে সকলের ভালোবাসা পেয়ে থাকে। 
ষষ্ঠীর বোধন হবে বাবা বলেছে আজ বোধনের বাজনা হবে। গাঁয়ে পুজো হয় কিন্তু সেভাবে সদা জড়িয়ে পড়েনি কোনোদিন। খেলাধুলা করেই পুজোর দিনকাটাতো। যে বাড়িতে সদারা আছে ওই বাড়িতেই পুজোর জোগাড় জানতি হচ্ছে। বড়ো পিতলের পড়াতে একছড়া কলা ,কাঁঠাল পাতা গুলো কে নৌকার মতো করে তার মধ্যে কত কি রাখা হয়েছে। প্রদীপ ,ধূপ আরও কতকি। বাবা বললেন এগুলো দিয়ে গণেশের বৌ কলাবৌ তাকে বরণ করা হবে। এটাকে বরণ ডালা বলে। দুগ্গা মায়ের এই একটি পুত্রবধু বুঝলি সদা। তুই যখন বড়ো হবি তখন তোর বৌ কে তোর মা এভাবে বরণ করবে। সদা লজ্জা পেয়ে বলে ধ্যাৎ। মায়ের কথা সদার মনে পড়ে গেলো। মা একা একা পুজো তে কিভাবে কাটাবে। ভাবতে ভাবতে বোধনের বাজনা বেজে ওঠে। 
বোধনের বাজনা ঢাকে বাজছে আর সদা কাইনানা সুরে তালে তালে বাজছে। পুরোহিত যখন মাঝে মাঝে বলছে ঢাকি ,কাঁসি বাজাও তখন। সদাই ,নিতাই নামে কেও ডাকেনা ,বলে ঢাকি ,কাঁসি। দুগ্গা মণ্ডপে বাচ্চারা নতুন জামা পড়ে খেলছে। কেও আবার স্লিপ খাচ্ছে ,ছোঁয়াছুঁয়ি খেলছে। ওই দিকে চোখ চলে যাচ্ছে সদার। ওর ইচ্ছে করছে ওদের সাথে খেলা করতে। বাবা মাঝেমাঝে এই সব দেখছে, সদার মনের কথাও বুঝছে। পুরোহিত বরণ করছে কলাবৌ কে। হুলুধ্বনি ,শাঁখ বাজছে তার সাথে ঢাক ,কাঁসি বেজে চলেছে। তাল বেশ রপ্ত করেছে সদা। 
একটা কলা গাছকে কিভাবে মায়েদের মতো সাজালেন পুরোহিত সদা একমনে দেখলো। প্রথমে কলাগাছের কোমড় পর্যন্ত কলাগাছের ছালদিয়ে শক্ত কোরে বাঁধলো। তারপর গাছের মাঝবরাবর একটি বৃন্তে একজোড়া শ্রীফল মানে বেল ফল বেঁধে দিলো। একটা লালপাড় শাড়ি পড়িয়ে দুগ্গা থানের পাশের ঘরে রাখল। বাবা বললেন এই কলাবৌ কে চতুর্দোলায় চাপিয়ে পুকুরে ঘট ভরতে যাওয়া হবে কাল। আজ কে মা দুগ্গা মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী হলেন বুঝলি সদা।
সকালে সপ্তমীর বাজনা বাজিয়ে ঘট্ ভরা হলো। সদার মা ও আজ ঘট ভরল। সদার কচি আঙুল গুলো টনটন করছে বাজাতে বাজাতে। 
কলাবৌয়ের কাছে বাড়ির ছেলেরা মাথায় কোরে ধানের সড়া পেঁচা (কাঠের ) এনে রেখেছে। সপ্তমীর সন্ধ্যারতি হয়েগেলো। আজ অনেক ক্ষণ বাজিয়েছে। পা টাও ব্যথা করছে। বাবাকে কিছুবলেনি সদা ,পাছে বাবার কষ্ট হয়। .খাওয়া হল ,ঘুমঘুম আসছে বাইরে মাইক বাজছে। গান বাজছে গৌরী এলো দেখে যা লো ,ভবেরও ভবানী আমার ভবন করিল আলো। ঢাকের আওয়াজ কাঁসির আওয়াজ শুনতেশুনতে ঘুমিয়ে পড়েছে।
বাবা  বলেছে অষ্টমী পুজোতে অনেক ক্ষণ বাজাতে হবে। ক্ষণের পুজো হবে। বলীর বাজনা হবে। এখানে বলী হয়না ,এটাই রক্ষে। নিতাই ঢাকি জেনেই বায়না ধরেছিলো। নিপুন হাতে বাবার  সাথে সঙ্গত করলো সদা। 
আর দুদিন পরেই মায়ের কাছে যাবে সদা। খুব আনন্দ হচ্ছে। নবমী ,দশমী র সকাল বাজালো। বিসর্জনে পাড়ার দাদা ,কাকারা বাজাবে। নাচবে ধুনুচি নিয়ে ,ঢাক বাজানোর প্রতিযোগিতা হবে। 
সদার আঙুলগুলো কালসিটে পড়েগিয়েছে। ব্যথায় টনটন করছে। বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। খুব বেদনা করছে নারে সদা। সদা ঘাড় নাড়ে। বাবা বলেছে দ্বাদশীতে বাড়ি যাবে। তবে এবার আর অত হাঁটতে হবে না ,ভ্যানে নিয়ে যাবে। একাদশীতে গাঁয়ের বাড়িবাড়ি ঢাক বাজিয়ে আসবে। সব বাড়ির গিন্নিরা চালভাজা।,মুড়ি ,নাড়ু ,মুড়কি ,চাল ,সর্ষে তেল ,বাস তেল দেবে। সদা বলে তাই হবে বাবা। গাঁয়ের পুজো থেকেও নতুন ধুতি ,জামা ,মায়ের শাড়িও পেয়েছে। 
পথেযেতে মায়ের জন্য হিমানী পাওডার ,চিরুনি ,আলতা সিঁদুর কিনেছে বাপব্যাটা। 
মা আজ পুকুরে নাইতে দেবেনা সদা কে। পুকুর থেকে জল তুলে রেখেছে মা।  বাছার নাজানি কত কষ্ট হয়েছে। লোকের বাড়িথেকে পুজোতে এটাওটা পেয়েছে। ভালোমন্দ রেঁধেছে। 
সদা রাস্তা থেকে হাঁক পারছে মা। ছুট্টে ধুলো পায়ে মায়ের কোলে। সাথে সাথে পোঁটলা খুলে নাড়ু মায়ের মুখে দিয়ে দিলো। 
সদার আঙুল গুলো দেখে মায়ের চোখে জলের ধারা বইতে লাগলো। অভাবে থাকলেও আর সদাকে কাঁসি বাজাতে পাঠাবে না। পুজোর খুঁটিনাটি সবগল্প ,ওই বাড়ির জেঠিমা যে সদাকে একদিন খুব যত্ন করেছে মা কে সব বৃত্তান্ত বলাহল। 
ইসকুল খুললে দিদিমণি দেরও সব গল্প করে পুজোর। তবে খুব কষ্ট হয়েছে। আঙুল গুলো দেখিয়ে বলে এগুলো কালো হয়ে গিয়েছিলো। ব্যথা করত হাতে ,পায়ে। দিদিমণির আলোচনা করে ঠিক করলেন আর সদাই কে এই কাজ করতে দেওয়া হবেনা। পড়াশুনো কোরে মানুষ হতে হবে। এই গাঁয়ের পঞ্চায়েত প্রধানের সাথে কথা বলে ঠিক হলো ,শিশু  শ্রম বন্ধ করতে হবে। এর উপায় গাঁয়ের ধনী মানুষের সাহায্য।,পঞ্চায়েত এর সাহায্য আর দিদিমণিদের আর্থিক সাহায্যে ফান্ড হবে। গ্রামের যুবক ,যুবতীরা দ্বায়িত্ব পালন করবে। পুজোয় নতুন জামা ,জুতো দেওয়া হবে। সারা বছর মিডডে মিল চালু থাকবে। সদাইয়ের মতো ছেলে মেয়েরা যেন আগামীতে দেশের সুস্থ নাগরিক হয়ে ওঠে। আর কোনোদিন নিজের নামের বদলে ঢাকি ,কাঁসি বলে কেও ডাকবে না। 

Thursday 5 October 2017

সদানন্দ
১ 
#মৌসুমী রায় 
শুনেছ সদার মা বীরভূমের প্রসাদপুর গাঁ থেকে পুজোতে ঢাকির বায়না পেলাম। কাঁসির বায়নাটাও নিলাম গো। সদা কে সাথে লিয়ে যাব ,এবার কটা টাকা বেশি আসবে। বাপ্ ব্যাটা মিলে বাজাব ,ছ -সাত দিন ব্যাটা টা ভালো মন্দ খেতে পাবে। তোমার লেগেও বেঁধে আনবো বুঝলে সদার মা। শুনে সদার মা ভালোমন্দ কিছু বুঝে উঠতে পারেনা। একবার ভাবে বেশ হবে বাছা আমার পুজোর দিনে এটা সেটা খেতে পাবে। বাড়ি থাকলে কলমি শাক আর ভাত খায় ,মাঝে মাঝে চুনো মাছের অম্বল। একটু চাকুন চিকুন হবে। 
সদার নাম সদাই গাঁয়ে সদা বলে ডাকে আর সদাইয়ের বাবার নাম নিতাই ঢাকি। মায়ের নাম ধরে কেউ ডাকেনা ,সবাই বলে সদার মা। সদার ছয় -সাত বছর হবে। গাঁয়ের শিশু শ্রেণী থেকে এবারে প্রথম শ্রেণীতে উঠেছে। বাবা অত লেখাপড়ার মর্ম বোঝেনা ,বলে সদা বড় হয়ে বাবার থেকেও বড়ো ঢাকি হবে। কিন্তু সদার মায়ের চেষ্টা ও লেখাপড়া শিখে শিক্ষক হোক। সদার মত যারা নিত্য অভাবে দিনকাটে তাদের শিক্ষিত কোরে তুলুক। ঢাকির পেশায় যেন উপার্জন করতে না হয়। এ পেশা যে ভাবের ঘরে অভাবের। 
সদার মা ওকে প্রতিদিন গাঁয়ের প্রাথমিক ইস্কুলে পাঠায়। পড়াও হয় আবার একবেলার খাবারও হয়। ইদানিং দিদিমণিরা মিডডে মিলের বেঁচে যাওয়া খাবার বাচ্চাদের ভাগকরে দেয়। বাড়ি আনে ওরা ছোট ভাইবোন রা খায়। সদার ভাইবোন নেই ও একাই ,তাই মা বাবার জন্য আনে। 
দিদিমণিরা সদাই কে খুব ভালো বাসেন। পড়াতে মনোযোগ খুব ছেলেটার ,আবার খেলাধূলাতেও। ইস্কুলে স্পোটর্সে দৌড় প্রতিযোগিতা আর অঙ্ক প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় সেই শিশু শ্রেণী থেকে। দিদিমণিরা যে টিফিন আনে সেটাতেও সদার ভাগ থাকে। দুটো কচি হাত খাবারে ভোরে যায়। চাঁদ মুখ করে খেয়ে নিয়ে টিউবয়েল থেকে ঢকঢক করে জল খেয়ে নেয়। সদার তৃপ্তি চোখদুটো কথা বলে। দিদিমণিরা মাঝে মধ্যে ওর গাল টিপে দেয়। সদার বাবা গাঁয়ে সবার থেকে কমা। কিন্তু মানুষ হিসেবে খুব ভালো। সাত চড়ে রা নেই। সদা কে সকলে খুব ভালোবাসে। 
সদার বাবার সাথে কাঁসি বাজাতে যাওয়ার মন নেই। ইস্কুলে যেতে ভালো লাগে। তারপর ওর ইসকুল ছুটি পঞ্চমীতে। বাবা বলছে তৃতীয়া তে বেড়োতে হবে। চতুর্থীর দিন পৌঁছতে হবে ,পঞ্চমীর সকাল থেকে ঢাকির বায়না। পুজোর পরেই পরীক্ষা। বুঝিয়ে সুঝিয়ে মা বাবার সাথে পাঠালো। সাথে মুড়ি চিড়ে গুড় নিয়েছে বাবা। ইস্টিলের ঘটিতে জল নিয়েছে। পথে খাবে। ফুরোলে আবার ভরে নেবে। পাঁচ ক্রোশ হেঁটে তবেই বাসে চাপতে পারবে। 
আসার সময় ঘোমটার আড়ালে মায়ের চোখে জল দেখেছিলো। পুজোতে সবাই মা এর কাছে থাকে শুধু সদার মা ওর সাথে থাকবে না। খুব মন খারাপ আজ। 
জমির আল ধরে বাপ্ ব্যাটা হাঁটছে। দুধারে সবুজ ধান গাছ ,কোনোটাতে ধানের শিস হয়েছে। শরতের নীল আকাশ আর রোদের ঝিকিমিকি আবার হাওয়ায় ধানগাছ গুলো দুলছে। মাঝে মধ্যে আলতো হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সদা। হাঁটে আর মাঝে মাঝে গান গায় আনন্দ লোকে মঙ্গলা লোকে। বাবা বলে বেশ তো গান টা। কোথা শিখলি সদা বাবা শুধাই। বলে ইসকুলে প্রার্থনা হয়। জানো বাবা আরো গান হয় বন্দে মাতরম আর জনগণ। দিদিমণিরা বলেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা জনগণ আর আনন্দলোকে। বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বন্দে মা তরম। বাবা সদার কথা গান শোনে আর মাঝে মাঝে বলে জোরে পা চালা বাস টা ফগলে না  যায়। পায়ে ব্যথা করে সদার হাঁটতে হাঁটতে। চিড়ে গুড় খেয়ে আবার হাঁটে। বাস ধরে স্ট্যান্ডে নামে। আবার হাঁটতে হাঁটতে প্রসাদপুর পৌঁছায়। গাঁয়ে ঢোকার মুখে পঞ্চমীর ঢাক বাজাচ্ছে বাবা  আর তালে তালে কাঁসি বাজছে সদার কচি হাতদুটোতে। ভগবতী তলায় বাবা ঢাক বাজানোতে গাঁয়ের বাচ্চা বুড়ো হাজির।  বাবা বলে দিয়েছে ঢাক বাজলেই কাঁসি বাজাতে হবে। 
খানিক বাদে বাপ্ ব্যাটাকে একটা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো। পুজোর কটাদিন এখানেই থাকবে ওরা। ওর মত কয়েকটা বাচ্চা নতুন জামাপরে খেলা করছে। ------








Thursday 21 September 2017

আজ শরতে 
#মৌসুমী রায় 
শ্বেত পদ্মাসনা শ্বেত পুষ্পাভরণা নীল কমলে অরুণালোকে শোভনা ,
নীলাম্বরে  আগমনী সুরে মহামায়ার সাজে রক্তিম চন্দনে গন্ধানুলেপনা। 

আশ্বিনের  শারদ স্পর্শে ভোরের শিশিরে ধন ধান্য ধন্য পৃথা ভব সংসারে ,
চেতনার চৈতণ্যে সকল শুভ দৃষ্টি দানে ,দুঃখ নিন্দা অপমান বহু দূরে।

 নর নারী সমান অঙ্গীকারে ,  শিব পার্বতী রূপে আকাশে সূর্য চন্দ্র বিরাজমান , 
মহালয়ায় মাধবী তলায় বালিকা বেলা দুগ্গা দুগ্গা খেলায় আপন মন।

কন্যা ,বঁধু ,বধু ,মাতা একই অঙ্গে কভু  দেখেছ  কোথাও এত,   রূপ ?
শিবের দুগ্গা ,  তোমার  আমি ঘরে বাইরে তেমন জ্বালে দীপালোক ধূপ।

সপ্ত নারী জ্ঞানে কীর্তি ,শ্রী ,বাক ,স্মৃতি ,মেধা ,ক্ষমা ,ধৃতি যাঁরা ,
মহামায়ার মানে গঙ্গা ,গীতা ,সীতা ,সত্যা নন্দা সতী পতির সত্যি ব্রতা।

বিভেদ নাই ,কেউ বলোনা  "নারীর এত মান ভালো নয় গো কিশোরী ",
সাধ্যে সাধ পূরণে শ্যাম শ্যামার  মান বাড়াতে অপর্ণা আমার বাড়ি।

আমার মুক্তি ,মুক্ত আগমনীর আকাশে বোধনে বন্দি কে বা ওরে ?
শিব পার্বতী রূপে  বাঁধন ছেঁড়া নৃত্যে নর নারী জ্যোৎসনা  জোয়ারে।

অখ্যাতি তোমার আমার  দুগ্গা  যাঁরা,  আরশি নগরে পড়শি বসত করে ,
তোমরা যে সকল শিবের দল দুগ্গাদের রক্ষা কোরো স্নেহে যতন ভরে।

তুমি আমি  দুগ্গা বিভেদ ভুলে ,ধরা ধামের মানুষ আনন্দ সাগর নেয়ে ,
শারদ প্রাতে কাশের দোলে নদীর কোলে তরী চলে উজান বেয়ে।

উমার লক্ষী ,সরস্বতী ,গার্গী ,লোপা ,প্রজ্ঞা পারমিতা অনাম্নী নারী , ধরিত্রী ,
মহামানব মানবী মন্ত্র দীক্ষা নিয়ে সাথের স্বাতী সাথী হব যুগান্তরের যাত্রী।






Thursday 7 September 2017

শুচি 
শেষ পর্ব 
ভিন্নতালের বাচ্চারা এখন একটি তালে সুর বেঁধেছে। শুচির আনন্দ আর ধরে না। ঘরে নতুন সদস্য আসছে। সুতরাং হাতে কলমে কর্ণ চক্ষুর বিবাদ ভঞ্জন ঘটাতে হবে। গর্ভস্ত সন্তান এই পরিবেশে একটু একটু বাড়তে থাকলে তার প্রভাব কী পড়ে ? পরীক্ষা প্রার্থনীয়। 
ওই বাচ্চাদের নিয়ে প্রথম শুরু করে দম বাড়ানোর  জন্য ,ওষ্ঠ ,দন্ত ,তালুর এবং জিভের সঞ্চালনে শব্দ সৃষ্টি অনুশীলন। কথা বলতে গেলে থেমে থেমে ,কেটে কেটে এবং বুকভরে শ্বাস নিয়ে শব্দ পরিবেশন। এতে মাধুর্য বাড়ে আবার কণ্ঠ সুরে ভরে ওঠে। কিছু ছেলেমেয়ে বাচন ভঙ্গিতে পারদর্শী। শুচি গীতবিতান পরে শোনায় ,ওরা আবার সেগুলো ছন্দে দমের ব্যবহারে সাজিয়ে তোলে। কণ্ঠস্বরের ওঠানামা যে বাচ্চারা অত স্বচ্ছন্দ নয় তারাও তালেতালে তালি দেয়। সুরে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে। যা ওদের নিস্পৃহ চোখ দুটোতে ফুটে ওঠে। ওদের মা বাবা এখন এই থেরাপি তে উৎসাহিত। ওদের প্রতিক্রিয়া ভালোলাগা ,মন্দলাগা উভয় আছে। এতদিন যারা বাতিলের খাতায় রেখেছিলো এদের তারা জানবে এই ছেলেমেয়েদের ও ভালো ,মন্দ দুইয়ের অনুভূতি আছে। 
কিছু বাচ্চাদের গানের প্রতি ভালোলাগা আছে। গানের প্রতি বিশেষ নজর দেবার প্রস্তুতি চলছে। তাদের বোঝানো হয় গানের উপজীব্য ভক্তি ,শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস। কণ্ঠস্বর ,সুরবোধ ,স্বরলিপি ,উচ্চারণ ,নিঃশ্বাস -প্রশ্বাস ,শুনে শুনে রপ্ত করা। তালের পরিমিতি বোধ এবং সংযম ভীষণ জরুরী। জীবনে চলার পথে সংযম এবং তালের যেমন প্রয়োজন তেমনি সংগীতে। 
এভাবে চলতে চলতে সাত মাস অতিক্রান্ত। শুচি আজকাল অনুভব করে যখন গান -কবিতা পরিবেশন করে তখন গর্ভস্থ শিশুটির সঞ্চালন তালে তালে এবং সুরেসুরে। গলার ওঠানামা শিশুর চঞ্চলতা টের পাওয়া যায়। শুচির গর্ভে দুটি শিশু ছন্দে ,সুরে বড় হচ্ছে। 
শুচি দেখে , যে বাচ্চারা মানসিক দিকদিয়ে পিছিয়ে তারা গোড়াতে খুব চঞ্চল এবং অবাধ্য গোছের। এমনকি কিছু স্বাভাবিক বাচ্চারাও খুব অস্থির প্রকৃতির। তাদের বড় হওয়ার পরিবেশ ছিল অস্থিরতায় ভরা। এই একবছরে ওদের পরিবর্তন মন কে তৃপ্তি দেয়। শুনে শুনে বিশেষ ছেলেমেয়েরা কিছু করার চেষ্টা করছে। ওরা নিজেদের মত শব্দকরে ,আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে।অন্যান্য সহকর্মীদের হাতে মাস খানেকের দায়িত্ব দিয়ে নতুন সাথীদের সঙ্গে সময় কাটাতে চায় শুচি। সেই উপলক্ষে বাচ্চারা একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অপটু হাতের ঘর  সাজানো , কিছু গান ,কবিতা  পরিবেশন করে ওরা। 
শুচি সেদিন গান গেয়েছিল " তোমায় নতুন করে পাবো বোলে হারায় ক্ষণে ক্ষণ ও মোর ভালোবাসার ধন ,তুমি আমার নও আড়ালের তুমি আমার চির কালের "---
 শ্রীনি সবাই কে  মিষ্টি মুখ করালো। শুচি একটি মেয়ে এবং একটি ছেলের জন্ম দিয়েছে। ওরা সবাই সুস্থ আছে। 
শুভ সংবাদে আকাশ বাতাস চঞ্চল। মাস দুয়েকের আগেই শুচি এই বাচ্চাদের সাথে ওর দুই বাচ্চাদের নিয়ে তালিম দিতে শুরু করল। দিনে দিনে যেমন বাড়ে শশী কলা তেমন ই এদের সকলের মনোন্নতি ঘটতে লাগলো। ওদের সাথে সুরে ,ছন্দে এরাও সুরেসুরে কলকল করতে থাকে। .আশাবরী আর অভিপ্ৰীত বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। ওরাও গান ,কবিতায় আচ্ছন্ন। বাড়িটা সুরেলা ছন্দময় এবং সাংস্কৃতিক ভাবাপন্ন। শুচির বাবা একজন আদর্শ শিক্ষক কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। বাবা মেয়েদের স্বপ্নের নায়ক। সব মেয়েরা চায় বাবার মত হতে। জীবন সাথীও যেন বাবার মতো নীতি বোধের অধিকারী হয়। শুচির অর্ধেক আকাশ অনেকখানি সেই রকম। ওদের বাচ্চারা স্বাভাবিক ভাবে বড়ো হচ্ছে। গান ,কবিতা আর ওর বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের সাথী করে এগিয়ে চলছে। মুক্ত মনে মুক্তির খোঁজে। 
শুচি ওঁর গবেষণার ফল হাতে নাতে পেয়ে চলেছে। জন্মের সময় থেকে উপযুক্ত পরিবেশে ভ্রূণের বৃদ্ধি ঘটলে অনেকাংশে সুফল পাওয়া যায়। সুতরাং মানুষ টাটকা ফলপেতে আসক্ত। এই নেশা আজ শুচির বিদ্যালয়ে ভিড় জমিয়েছে। 

আজ শুচির বাবার চলে যাওয়ার বর্ষপূর্তি। বাবাও দূরারোগ্য ব্যাধির শিকার। মন ভার। কিন্তু ওঁর বিদ্যালয়ের বাচ্চারা এবং আশাবরী ,অভিপ্ৰীত রা সংগীত ,কাব্য ,ছন্দের সন্ধ্যা র  আয়োজন করেছে। উত্তরণের পথে পথে জুঁই ফুলের মালা , দীপ  ,ধূপের গন্ধে ভরেছে মন মন্দির। এই মন্দির মানব মানবীর মন্দির। এখানে মানুষ পূজারী। অসুস্থ মনের ঠাঁই নেই। সুস্থ  মানুষের তরী তে ঠাঁই হবে শুধু সুষ্ঠু ভাবে কাজ এর কাজী বলো ,পোপ বোলো আর ঋত্বিক বোলো সেই পথ দেখানোর নাবিকের।মৌসুমী @. 

Tuesday 5 September 2017

শুচি 
অন্ধকার আলোর হদিস আনে। মনের খাঁজে খোজঁপেরেছে মনের কোণের লুকোনো আশা। সে আশা আসা -যাওয়ার মাঝে আসন পেতেছে বিশ্বব্যাপী। রাতের আঁধারের পরে সুপ্রভাত আসবেই। প্রত্যেক সকাল নতুন কিছু বার্তা বয়ে আনে। ঘাত -প্রতিঘাত আসবে ,আসছেও। আসে দুঃখ -সুখের তেরো পার্বণ। সে পার্বণে পাঁচালী পড়তে ও  হয়। পাঁচালীর পঞ্চ ওলির সংগৃহিত মধু শুচির ক্ষণিকের ওলট পালট জীবনে মৌচাক বেঁধেছে। মৌতাত নিতে শিখেছে ,অন্য কে নিতে শেখাচ্ছে। 
শুচি কলেজে অধ্যাপিকা। সংগীত শিক্ষা ,তার প্রয়োগ  বিশ্ববিদ্যালয়ে র গণ্ডি পেরিয়ে চিকিৎসা জগতে সাড়া ফেলেছে। সঙ্গীত থেরাপি। মূমূর্ষু রোগীর জীবন এ বদল এনেছে। এই আলোয় অনেক ডালপালা রূপোলি রেখা এঁকেছে। কবিতা ,সুর ,ছন্দ ,গল্প গাছা আরও কতকি। সংগীত এর সুর না মানে কোনো বাধা ,না মানে কোনো সীমা রেখা। যে ব্যক্তি ভাবে ও আমার চরম শত্রু ,সেও  সুরে সুরে ভালোবাসায় দোল খাবে। শুচির গবেষণার ফলাফল। 
হাসপাতালে ডাক পড়ে ওঁর। অজ্ঞান করার পূর্বে লঘু সংগীতের সুর শোনানো অথবা কোন সুরটি মৃদু বাজানো যায়। পরামর্শ দেয় শুচি। কোনো মন রুগীদের সংগীত ,কবিতা পাঠে কউন্সেলিং করে। নেশা গ্রস্ত মানুষ দের সঠিক পথে আনতে এই সংগীত পদ্ধতি ভীষণ ভাবে কাজে দিয়েছে। বাবা নিজের কাজে ব্যস্ত ,ছেলে মেয়েরা নিজের জগতে। ছোট থেকে মা সন্তানদের বড় করেছে ,এখন ওরা বড় হয়েছে। মা এখন নিঃসঙ্গ জীবনে বাঁচার লড়াই চালাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বাবারাও। নিঃসঙ্গের সঙ্গী এই সংগীত থেরাপি। উঠতি বয়সের সন্ধিক্ষণের ছেলে মেয়েরা উদাসীন ,দিশাহীন। ওদের ঠিক দিশার দিশা এই থেরাপি। শুচি তৃপ্তির হাসি হাসে। এখনও অনেক কাজ বাকী। একটা নতুন কাজে হাত দিয়েছে। 
যত বয়স বাড়ছে রবি ঠাকুর জীবনে প্রাসঙ্গিক হয়ে ধরা দিয়েছে। 
অনেক কাজ বোন কে মানুষ করা। আবার বাবা কে সময় দেওয়া। আর রবি ঠাকুর এর গানের কথা ,সুর নিয়ে কাটা ছেঁড়া করা শান্ত শুচি কে অশান্ত করে। রবি ঠাকুর ওর জীবনে বাবা -মায়ের আসনে। সে যতটা পড়েছে এবং উপলব্ধি করেছে তাতে এই মানুষদের কার্যকলাপে হতাশ। দমবার পাত্রী সে নয়। সঙ্গী যখন শ্রীনি ,চলো ওদের চেনায় ,আবার চিনি। দুই পরিবারের মেলবন্ধন হল প্রজাপতির নিবন্ধিকরণে। 
শুচির ভাবনায় সূচিত হল চল্লিশটি মেয়ে -ছেলে নিয়ে অবৈতনিক কর্ম যজ্ঞ। এই বাচ্চারা অনাথ ,কেও আবার মানসিক বিকাশ হীনতার শিকার। শুচি আবেদন রেখেছে এই যজ্ঞে যারা ঋত্বিক হতে চান আসুন। অনেক সাড়া পেয়েছে। 
শ্রমে বিশ্বাস করে শুচি। এই কর্মশালায় প্রত্যেক বছর চল্লিশটি ছেলেমেয়ের খাওয়াদাওয়া ,চিকিৎসা এবং লেখাপড়া আর অবশ্যই সংগীত -কবিতা শেখা। আর স্বাবলম্বী হওয়া ,সর্বোপরি মানুষ হওয়া।
শুচি দেখে যে মানুষ ভুলে যায় , সব কিছু ,এমনকি নিজের অস্তিত্ব। তাঁদের প্রিয় গান -কবিতা বারবার বাজাতে থাকলে সেও গুনগুন করে। পুরোনো কবিতা আওড়াতে থাকে। বারংবার সেই কাজটি করতে হবে। সুফল মিলবে। 
সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত যাঁরা ,তাঁরাও এই পদ্ধতিতে সাড়া দিচ্ছে। উন্মাদ কেও শান্ত করা যাচ্ছে এই থেরাপিতে। 
চল্লিশটি সদস্য নিয়ে যাত্রা পথের একটা উদেশ্য আছে শুচির। শুচি জেনেছে রবীন্দ্রসংগীত চল্লিশটি তালে গাওয়া হয়েছে। এই চল্লিশ তাল, কিন্তু তালে একটাই গান।  রবীন্দ্র নাথের গান। যার বিভাজন নেই। যে তালেই গাও না কেন। তাই এই বেতালা জীবনে চল্লিশের তালে একটা সুরে সুর মেলানোর চেষ্টা। মানুষ হওয়ার মন্ত্র। 
মানুষ ছন্দে -সুরে  জীবন চালিকা শুচির সংগীত থেরাপি। সংগীত এর শিক্ষা পদ্ধতি কিভাবে মানুষের জীবন চালনার শক্তি হবে  সেটাই দেখার।সঙ্গীতের সিঁড়ি বেয়ে ,বিভিন্ন পদ্ধতি অনুধাবন করে এই জীবন এ চলতে চলতে গন্তব্যে পৌঁছবে ওঁর  বিশ্বাস।  মৌসুমী @ .

Saturday 2 September 2017

শুচি 
শৈশব থেকে দুই বোনের প্রাণায়াম নিত্য দিনের। অভ্যেসে কবে যে পরিণত হয়েছে কে জানে। ওমকার উচ্চারণে ঈশ্বরের শক্তি ব্রহ্মাণ্ডময় তরঙ্গায়িত। অজানা শক্তি ,বায়ু তরঙ্গে ভাসমান। সে শক্তি আত্মস্থ করে ওম শব্দে। আনন্দ ভালোবাসার ধন এ ধনী শুচির রাগাশ্রয়ী শ্রেষ্ঠ এবং রবীন্দ্রসংগীত শুভকর। ওর চিন্তায় রবি ঠাকুরের গান সংস্কৃত উচ্চারণে শুদ্ধসংগীতে ধরা দেয়। "ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসায় "..ধরাদিয়ে যায় মেঘমলহার -মিঞাকি মলহার এর তানে। চোখ বন্ধ করে তানপুরায় নাড়া বেঁধে বন্ধনহীন গ্রন্থি তে লঘু -উচ্চাঙ্গ সংগীত বেঁধে রাখে। যেন পদ্ম পাতায় ঢাকা কুন্দ ফুলের জলঝরানো মালা। জলের খানিকটা পদ্মপাতায় টলটল করছে। একেবারে টাটকা। 

সন্ধেবেলা রেওয়াজ করে প্রতিদিন। এক জ্যোৎস্না ভরা রাতের আকাশে জ্যোৎস্না রশ্মির মৃদুল দোলায় দ্রুত -মধ্য লয় গলার দানাদানা কাজ গুলো টের পাচ্ছে। সে এক ইন্দ্রিয়াতীত অনুভূতি। কখনো বৃষ্টি মুখর দিনে আলসে ভরা দুপুর বেলা বৃষ্টিস্নাত গাছের দিকে চেয়ে চলেছে গানের লহরী। এছাড়াও নানান কাজকম্ম ,উনিভার্সিটি নিয়ে ব্যস্ত। 
প্রতিদিনের অভ্যেস নিজের রোজনামচা লেখা। লেখার শেষে আজ হঠাৎ পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে দেখে কতকিছু পাওয়া না পাওয়ার স্মৃতি। পাওনা ,আফশোস ,অনুশোচনা আরও অনেক। চাঁদের আলো বিছানায় ,অপেক্ষাকৃত কম আলোয় স্মৃতি খুঁজে চলেছে। মাঝে মাঝে দিনলিপির খাতাটা বুকে চেপে ধরছে ,ঘ্রাণ নিচ্ছে। সেই ছোট বেলার গন্ধ ,মায়ের হাতের। মায়ের কাপড়ের ভালোলাগার গন্ধ। বিশেষকরে মা রান্না করতে করতে কাপড়ে হাতমুছতে মুছতে বলত শুচি -রশ্মি হোম ওয়ার্ক গুলো হল তোদের। মনে পড়ে দুষ্টুমি করলে মা বলতো দাঁড়া তোদের বাবা আসুক সব বলে দেব। বাবা কে ভয় পেতোনা মা সেটা জেনেও বলতো। বাবা ওদের বন্ধু। চুপিচুপি বাবার সাথে খেলা ,বায়না কত কিছুই না করত। 
মনে এল স্কুলের মাস্টার মশাই দিদি দের কথা। সবাই স্নেহ করতেন। এমনকি দাড়োয়ানের কথা। টিফিন শেষ হলেই বলতো ক্লাসে যাও। মনে পড়ে স্কুলের গেটের ওপারে ফুচকাকাকু কে। বলতো ওকাকু একটু তেঁতুল মাখা দাও তাড়াতাড়ি টিফিনের শেষ ঘন্টা পড়ে যাবে। বসন্তে শান্তিনিকেতন যাওয়ার কথা। গৌড় প্রাঙ্গনেবসন্তউৎসব ,গাছে পলাশের মেলা ,পারুলের উঁকিঝুঁকি। যা ছিল কালো ধলো গানের শেষে শালপাতার দোনায় রাখা আবীর ছড়িয়ে দেওয়া। তখন এ ওর কপালে ,গালে একটু আবির ছুঁয়ে দেওয়া। আবার বিকেলে বৈতালিক। কত স্মৃতি আজ ভিড় করেছে। বোলপুর যেতে আসতে আউলবাউল এর গানশোনা আবার সুরেসুরে গলা মেলানো। 
মা বলতো বেগম আখতারের জোছনা করেছে আড়ি গানটা গাইতে। বারবার গাইতে বলতো গাইতে গলি দিয়ে চলে যায় লুকিয়ে রূপোলি শাড়ী। পড়তেপড়তে শুচির বুকফেটে চোখবেয়ে জলের ধারা নেমে এলো। 
প্রকৃতির নিয়মে আকাশের কালো মেঘ দেখে অভ্যস্থ। কিন্তু জীবনে এই মেঘের গায়ে দ্বিতীয় মেঘ দেখেছিলো। এতো কালো মেঘ কোনোদিনও দেখেনি। ডক্টরেট পাওয়ার পরেপরে মায়ের দূরারোগ্য খবর। তখন আর কিছুই করার ছিল না। মায়ের চলে যাওয়ার দিন বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে পারেনি। সেই দিন ও অভিভাবিকা। আজ পাতা ওল্টাতে গিয়ে অঝোরে কাঁদছে। যত পারিস কেঁদে নে। কেও দেখবে না ,কেও নিষেধ করবে না। বুকের ওপর খাতাটা রেখে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে শুচি ।মৌসুমী @ 

Thursday 31 August 2017

শুচি

 পৃথিবীতে  ঘনীভূত মন  সভ্যতায় ক্রমবর্ধমান বৈষম্য দৃশ্যমান।বরাবর সে স্পষ্টবক্তা ,এমনকি সাদা কে সাদা আর কালো কে কালো বলতে কোনো অশুভ শক্তি তাঁকে টলাতে পারেনা। অনেকটা সেই বাচ্চা ছেলেটার মতন। উলঙ্গ রাজা কে প্রশ্ন করেছিল রাজা তোমার কাপড় কোথায়। জ্ঞানের সুর সঞ্চালনা গানের সুরে বাঁধে ওর গবেষণা। রেওয়াজ রীতি ধীর লয় -মধ্য লয় -দ্রুত লয় এর মধ্যে ধৈর্য বাড়ে। কড়ি -কোমল স্বর গম তান এ নিঃস্বাস -প্রস্বাস বৃদ্ধি পায়। কথা শোনার ধী ঘটে। অন্য মানুষ কে মর্যাদা দিতে শেখায়।
মা -মাসি -পিসিদের ঘুমপাড়ানি গান বাচ্চা অবস্থায় স্মৃতি শক্তি বাড়ায়। খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো ,দোলদোল দুলুনি এই চলিত গান তার কথা অনায়াস বিচরণ। মনে রাখতে কোনও ব্রাহ্মী শাক খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
গর্ভাবস্থায় মা লঘু সংগীত শোনে অথবা পছন্দ সই সংগীতে মনোনিবেশ করেন তাহলে নবজাতক -নবজাতিকা অন্ততঃ দুষ্ট প্রকৃতি হতে সময় নেবে।তাঁর  গবেষণার বিষয় এগুলো। জানে না  কতটা ফলপ্রসূ হবে। স্নায়ুরোগ -ভুলে যাওয়া ব্যামো এমনকী মনোনিবেশ এ ব্যাঘাত কেন ঘটে তার ই এই গবেষণা।গান যদি মন্ত্র মুগ্ধ হয় তবে এই পদ্ধতি চিকিৎসা জগতে আলোড়ন তুলতে পারে। ভিন্ন স্বাদের সঙ্গীত সে হতে পারে বিবিধ মাত্রিক। জন্মানোর পূর্বে মা এবং পরিবারের সদস্য যদি এই পদ্ধতি মেনে চলেন তার পরের প্রজন্ম কী সুস্থ সবল শিশুর আগমন আশা করতে পারে ? কাজ চলছে ,শুচির বিভিন্ন  পরিবেশ পরিস্থিতির সন্তানসম্ভবাদের নিয়ে। বস্তি বলতে যা বোঝায় সেখানকার পরিবার নিয়ে। তাঁর সাথে চলছে উপযুক্ত পথ্য। ওষুধ আর বিশ্রাম। বাকী সব কিছুর জন্য শ্রীনি ওর পাশে।

মানুষ কেন তাঁবেদার হয় ,স্বজন পোষণ করে ?এ ওর পিঠ চাপড়ায় ,বলে তুমি ভালো তাহলে আমিও ভালো। সততার দিন কেন ছোট আর অসততার রাত কেন এত দীর্ঘ। এতো মহামারী। সভ্যতার সংকট। আত্মিক সংকট ,মনের সংকট। যোগ্য প্রশংসার অভাব। অভাবটা অভাবেরই অভাব। দ্বন্দ্ব ,ঠান্ডা স্রোতের জলোছ্বাস।গবেষণা মাধ্যম সংগীত বাছার অন্যতম কারণ। কিছু যদি উপায় খুঁজে পাওয়া যায়.। 

কবে যে শ্রীনি ওর কাছের বন্ধু হয়েগিয়েছে বুঝে ওঠার আগেই শুচির পাশেপাশে।যে দিন  সেই আকাশ কালো মেঘে বৃষ্টি নামবে নামবে  ,বিপুল তরঙ্গ গানের তালে এলোচুলে শুচি দরজা খুলেছিলো সেই দিন থেকে  ভালোলাগা ভালোবাসায় পৌঁছেছিল।ভালো লেগেছিলো ওঁর মায়ের আপ্যায়ণ। ওঁর মায়ের হাতের তৈরী লেবু জল। প্রাণ জুড়িয়ে মন ছুঁয়েছিল।  সকলেই খুব হাসি খুশি। শ্রীনি সেই দিন কথার ছলে বলে সে একজন নার্ভের ডাক্তার। আর রবীন্দ্রসংগীত তাঁর ভীষণ প্রিয়।
নার্ভের রুগীর মনের মুক্তি ঘটানোর পদ্ধতি যদি সংগীত হয়। সংগীত থেরাপি যদি  মন চাঙ্গা করে কেমন হয়। শ্রীনি সংগীতের ওপর স্পেশাল কোর্স করছে। সূত্র সংগীতে দুজনের ভালোবাসা।
গবেষণায় অনেকটা সফল আজ শুচি। ওর পেপার পড়তে ডাক পড়েছে বিদেশের নামী ই উনিভার্সিটিতে। পৃথিবীর  অস্থির জীবন যাপনে এর কতটা প্রভাব ফেলবে সেটাই পরখ করবে জগৎ। নিজের দেশে এখন  অনেক কাজ চলেছে গবেষণার ওপর । শুচি শুনেছে ওর গবেষণা পত্র সবার কাছে উন্মুক্ত হবে। আগ্রহী সকলে কি আছে সেথায়
  মৌসুমী @.

Tuesday 29 August 2017

শুচি 
গুরু শব্দের অর্থ , শুচির , অন্তরের অন্তঃস্থলে একটি সফল গাছের বীজ বপন করেছে। গাছটি আগামীতে সুগন্ধি  ফুল- সুমিষ্ট ফল   দেবে। আশ্রয় দেবে  ,ছায়া দেবে আর্ত আতুরজনে। সুদূর কোন নদীর তীরে গড়বে মানুষ সভ্যতা।" গু " এর অর্থ আঁধার ,"রু "এর অর্থ অন্ধকার মুক্তির জ্যোতি। ও  অন্ধকার এর নিকষ কালো আকাশে রূপালি আলোর ঝিলিক দেখতে চাই। সেই আঁচে শুচির তাপ নিয়েছে দু বার। প্রথম বাবা -মা এবং দ্বিতীয় বার তাঁর শিক্ষা -সঙ্গীত গুরু মাধ্যমে। 
ওর প্রতিবেশীরা এখনও বলেন শুচি ডাক্তার হলে সমাজ সেবা করতে পারত। মেয়ে কোথায় বিয়ে হবে ,সেখানে মুক্ত মনে  কাজ করতে পারবে কিনা কে জানে। ওর কিছুকরার ইচ্ছাই যেন পূর্ণতা পায়। প্রথম প্রথম ওর বাবামায়ের সে কথা মনে হলেও ,পরক্ষণে মেয়ের ওপর ভরসা রেখেছেন। শুচি গানে মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছে। সকাল সাঁঝ চলে রেওয়াজ। দশটি ঠাটের রাগরাগিণীর ভাঙাগড়া চলছে।খাদ -মধ্য -তার সপ্তক এ গলার অনায়াস চলন। যে দিন ওর রেওয়াজ হয়না ,প্রতিবেশীদের মনে মেঘ জমে। কখন শুচির মলহার এর তানে বৃষ্টি নামবে। ভোরের  ভৈরবী -আহির ভৈরব ঘুম ভাঙায়। কখনো কাফী ,আশাবরী -গান্ধারী  রেওয়াজে পাড়াময়। ছুটিছাটা থাকলে ধরে গুরু গম্ভীর টোরি রাগ। গলার বাঁকে বাঁকে উষ্ণতার ঘাম বিন্দু ঝরে। তানপুরা নিয়ে চোখ বন্ধকরে যেন মা স্বরসতী স্বর সঙ্গমে ব্যস্ত।
ঠাকুমা ,দিদা বলেন ও জন্মের আগেই সংগীত শিক্ষা নিয়েছে। শুচি বলে সেটা আবার কেমন কথা। মা যে বলে ওর যখন দশ বছর তখন থেকে ও  গান শেখে। স্পষ্ট বাদী ও এবং এটা ওটা বোঝালে হবেনা। যুক্তি চাই। ওনারা বোঝালেন শুচির মা খুব ভালো গান করে ,যখন শুচি ওঁর মায়ের গর্ভে তখন ওর মা নিয়মিত রেওয়াজ করতেন। সুতরাং শুচির গানের খড়ি জন্মের আগেই হয়েছে। বেজায় খুশী। স্নাতক স্তরে ও প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছে। 
পরবর্তী পর্যায়ে ও  রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে গবেষণার সিদ্ধান্ত নেয়।  
ওর মহাবিদ্যালয়ে একটি রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের ছাত্রের সাথে পরিচয় হয়। ছেলেটির অনেক কিছু ভালোমন্দ  ওর সাথে মিলেযায়। কলেজ চত্বরে দুজনে টুকটাক কথায় কথায় হঠাৎ শরতের মেঘের ক্ষণিক বৃষ্টি। এক ছুট্টে কলেজ দালানের এক কোণে। শরতের আকাশে সাদা মেঘ ভেসে ভেসে যাচ্ছে।শুচি গুনগুনিয়ে ওঠে "অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া --দেখিনাই  কভু দেখিনাই এমন তরণী বাওয়া " --এই গানটা শুচি ওর মায়ের কাছে শিখেছে। আরও একটা গান মায়ের কাছে শেখা ভীষণ প্রিয় "কাঁদালে তুমি মোরে ভালোবাসারই ঘায়ে "--.এবার  গাইছে গানের স্কেল মেনে। চলিতে পথেপথে বাজুক ব্যথা পায়ে। গাইতে গাইতে হাসছে খিখিলিয়ে। 
মায়ের কাছ থেকেই রবীন্দ্রনাথ কে দেখাশোনা এবং ভালোবাসা। ও নিজেই কথা বলে যাচ্ছে আজ। ওই ছেলেটি শুনে যাচ্ছে। ছেলেটির নাম শ্রীনিবাসন। শ্রীনি নামে সবাই চেনে। ও  ভীষণ ভালো কর্ণাটকি গায়। পশ্চিমবঙ্গে দুই পুরুষের বাস। অনর্গল বাংলা বলে এবং রবীন্দ্রসংগীত এর ভক্ত। গায়ও ভালো। 
এমনই একদিন বিকেল বেলায় আকাশে কালোমেঘ ঘনিয়েছে। শুচি সাউন্ড সিস্টেমে গান চালিয়ে শুনছে "বিপুল তরঙ্গ রে "..পড়েছে লং স্কার্ট একটা টপ।  আর খোলা চুল পিঠে এলিয়ে পড়েছে। মুখের ওপর দুই গালে গোছাগোছা চুল থুতনি ছুঁয়েছে। জানলা খোলা প্রবল বেগে হাওয়া দিচ্ছে। মায়ের হাতদুটো ধোরে গানের তালে তালে ঘুরছে। বোন ও তালে তাল দিচ্ছে। বাবা বসে বসে আনন্দের হাসি হাসছেন।   পিতার তৃপ্তি। তৃপ্ত পূর্ণতার আচ্ছাদনে। এমন সময় কলিংবেল এ বেজে উঠলো "এস  এস  আমার  ঘরে এস "..পিয়ানোর শব্দ। ..মৌসুমী @ 


Sunday 27 August 2017

শুচি
শুচি এবছর মাধ্যমিকে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম কুড়িতে স্থান পেয়েছে। বাড়ির সকলের ইচ্ছে ও বিজ্ঞান নিয়ে এগিয়ে চলুক। কিন্ত ওর পছন্দ কলা শাখা। ওর বাবা -মা দুজনেই শিক্ষা জগতের মানুষ। আদর্শবাদীও ,সুতরাং মেয়ের ইচ্ছে ডানায় নতুন রং চাপিয়ে না দিয়ে ওড়ার জন্য পাখনা দুটি কে আরও মজবুত কোরে দিলেন। শুচি ওঁর পছন্দেতেই রইল। শুচির একটি ছোট্ট বোনও আছে ,তাকে রশ্মি। সে খুব মিষ্টি ,দিদির অন্ধ সহযোগী।  বাড়িতে সংগীতের পরিবেশ। দুই বোন উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নেয়। শুচির গলায় রসগোল্লার রসে মধুর  ভৈরবী নৃত্য করে।
শুচি সংগীত নিয়ে উচ্চশিক্ষায় এগোচ্ছে। তবে কঠোর নিষেধ কোনও মাচা অনুষ্ঠানে গাওয়া চলবে না। ও বাধ্য মেয়ে। এছাড়া আর  কোনো বিধি -নিষেধ নেই। মা -বাবার ইচ্ছে মানুষ হোক ,মানুষের পাশে দাঁড়ায় যেন ওরা। মহাবিদ্যালয়ে ওঁর খুব প্রশংসা। ও হ্যাঁ ,শুচি রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে পড়ছে ,তার সাথে চলছে উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম। ছোট বেলা থেকে ও রূপের প্রশংসা শুনে এসেছে। প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে। ওর ও ভালো লাগে। কিন্তু ও বলে নিজেকে শুচি মাটি কে ভুলবিনা ,ওটাই তোর অস্তিত্ব।
মুখখানা পানপাতা বসানো ,চোখ -নাক সবকিছুই তাঁদের নিজের স্থানে সমৃদ্ধ। গায়ের রংখানা গম রঙে গমগম করে। চুল গুলো কবি চন্ডীদাসের কথায় "এলাইয়া বেণী ফুলেরও গাঁথনি "...লোকজনের না চলে নয়ন তারা।
ভাল -ভাল শুনে ক্লান্ত। লেখাপড়া -সংগীত -অঙ্কন -রূপের মাধুরী পূর্ণ ফুলের সাজি। পূজার অর্ঘ্য। এ যে প্রকৃতি দিয়েছে সাজায়ে তারে। ওঁর অভ্যেস প্রতিদিন শুতে যাবার আগে রবিঠাকুরের একটি কবিতা আর একটি গান গুনগুন করতে করতে ঘুমিয়ে পরে। আজও তাই সেই কবিতাটি ছোট্টমেয়ে র হারিয়ে গেছি আমি শেষ করে গাইছে "নিশিদিন মোর পরানে প্রিয়তম মম "..কোমল নিষাদ -গান্ধার -ধৈবত -ঋষভ নিখুঁত লাগানোর চেষ্টা চলছে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে।
কঠিন তাল সমৃদ্ধ গান বড়ো প্রিয়। শিক্ষক মন্ডলী ওর প্রতি বেশি যত্নবান। শুনেশুনে রপ্ত করে। গানে তাল -ছন্দ -মাত্রা -সম -ফাঁক নিয়ে খেলতে ভালোবাসে। দাদরা তাল কে এক তালে আনলে গানের মাধুর্য কেমন হয়। কাহারবা তাল কে ত্রিতালে আনলে কেমন হয়। ধামারের চোদ্দ মাত্রা ভেঙে সাত মাত্রা  তেওরা আনলে কেমন লাগে। এই ভাবনা ঘুরঘুর করে। ...মৌসুমী@

Sunday 11 June 2017

কথা র সানাই
সমাপন

"তোমার আনন্দ ওই এল দ্বারে,এল এল এল গো "----গানটি পাড়ায় সকলে শুনছে ।মাঝে মাঝে সানাই এর সুর । রবি ঠাকুর আর সানাই এর ছন্দ । আশাবরী -ভৈরবী -ভৈরব সুরের সাগরে অমৃত চেটে পুটে নিচ্ছে বিসমিল্লার পাগলা সানাই । লোকজন একটু ইয়ে -মানে কিছু বলার চেষ্টা করেছিল ।মুখরের মা পাত্তা দেয়নি ।তিনি  একাই মুখরকে এই পর্যন্ত এনেছেন । বাকি টা দেখাই যাক ।মুখরের  বাড়ি আজ সরগরম ।লোকজন এর আনাগোনা ।গত রাতে  ভিয়েন  বসেছিল আবাসনের ছাদে ।নানান মিষ্টি -বোঁদে সব হয়েছে ।সবাই ফেলে ছোড়ে খেতে পারবে ।যাকে বলে আন্না করে ।
আজ মুখর আর মিশুকের বিয়ের দিন ।দুই পরিবার মিলে ঠিক  করেছে ।বিয়ের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে ।ভবিষ্যৎ কেমন কাটবে ওঁদের ।সমস্ত পরীক্ষা করে দেখা যায় , ঠিক ঠাক সব কিছুই ।উত্তরাধিকার ?  সাধারন -অসাধারন দুই ই হতে পারে ।অভিভাবক যে টা বুঝবেন সেই মতো ব্যবস্থাপনা । চিকিৎসকের পরামর্শ ;এর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ওদের আছে ।সেটি প্রয়োজন ।কথা মতো কাজ ।
মুখরের মা ,মিশুকের বাবা মা সবাই  আজ ব্যস্ত । সকাল থেকে জল সইতে যাওয়া -গায়ে হলুদ -নান্দীমুখ ।এয়ো স্ত্রী রা খুব ব্যস্ত । ভাল ভাবে ওদের মতো করে বিবাহ সম্পন্ন ।বেশ ভালই চলছে ।দুইজন দুজনের খুব ভাল বন্ধু ।ওদের  মত ওরা থাকে । চিকিৎসকের টেস্টের নতুন পদ্ধতি তে নতুন খবর বাড়িতে ।নতুন সদস্যের আগমন হতে চলেছে ।"আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে"---- পরিবার খুশি খুশি ।মুখরের মা মাঝে কাঝে চিন্তা করেন । পূর্বের কথা ভেবে । এখন তাঁর ভগবান ভরসা । কালেকালে গভীর হল সম্পর্ক ।  আবার নতুন খবর এক নয় দুই অতিথি আসছে ।দ্বিগুণ আনন্দ দুই দিদির আর দাদার ।
কালে কালে জন্মিল তনয় -তনয়া ।এখন কেও ওদের নামকরণ করেন নি । ঘটনার  পুনরাগমন না হয় । মতামত -উভয় পরিবারের ।চোখ - কান পরীক্ষার পর ।মাস খানেক পর সব পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ ।
ওরা কথা আর সানাই ।নামে ডাকলেই তাকায় -হাসে ।চোখ চারটি স্বাভাবিক ।দুই দিদির দেখভাল ।মুখর - মিশুক কোলে নেয়।  আদর করে ।আনন্দে শব্দ করে।  খুশী হলে মুখর ওর মায়ের কোলে গিয়ে মাথা রাখে । মিশুক মা -বাবা -ভাই কে জড়িয়ে ধরে । ওদের পরিবার জানে এগুলো মিশুকের আনন্দ প্রকাশ ।এখন এরা যৌথ পরিবার । ঠাকুমা -দিদা আবার নতুন মা দুই জন । বাচ্চা -দের এক বছর পূর্ণ ।কথা আর সানাই এখন আধো আধো বলে ।মা -বাবা -দাদা বলে আর টলোমলো করে ।ধরলে দাঁড়ায় ।পা ফেলতে অতটা সড়গড় হয়নি ।
ওদের সাথে অনর্গল কথোপকথনে বাড়ি এখন কথার সানাই । সুরের অনুরণন  একজন কে বেশি সোহাগ করলে অন্য জনের খুনসুটি ।বাড়িতে খুশীর হাওয়া । ধুমধাম করে জন্ম দিন পালন হল ।সবাই আশীর্বাদ করলেন। সকলের  আমন্ত্রণ । চিকিৎসক ,মুখর -মিশুকের দিদিমনি রা সবাই এসে ছিলেন ।  এসেছিলেন মুখর মিশুক কুঠির কর্মচারীরা ।এ খন অপেক্ষায় আগামী পথ চলার । আগামী পথিকদের  হোক শুভ যাত্রা -------
                                                                                                                     মউসুমী 

Saturday 10 June 2017

কথা র সানাই
পর্ব -৩
"অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে চলবে না ।এবার হৃদয় -মাঝে লুকিয়ে বো -সো ,কেউ জানবে না ,কেউ বলবে না ।"--- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের  পূজা পর্যায় মুখরের মায়ের ভীষণ প্রিয় ।গান টি তিনি আবৃত্তি করছেন টেনে -টেনে  জোরে জোরে ।টুকটাক কাজ -কম্ম চলছে তার সাথে ।সে মায়ের মুখে আবৃত্তি আগেও দেখেছে ।আস্তে -আস্তে মায়ের মুখের কাছে কান পাতে। মায়ের কোলে মাথাদিয়ে শুয়ে পড়ে ।মা জানে মুখরের ও প্রিয় এটি ।প্রিয় রবীন্দ্রনাথের ছবিটি ।
মুখর দেখে ,  মা আর ও একটা টেনে টেনে কি বলে। সে বোঝে না ।একটা রেশ থাকে ।মা সেইটা করলে ; সে রবি ঠাকুরের ছবির কাছে যায় এবং গীতবিতানের ওপর হাত রাখে ।এটা মুখরের অভ্যাস ।মা এটি তৈরি করেছেন ।

"যদি এ আমার হৃদয় দুয়ার বন্ধ রহে গো কভু -দ্বার ভেঙ্গে তুমি এস মোর প্রানে---"মুখরের মায়ের প্রিয় গান ।বাড়িতে গানটি বাজে-- আর মা অঝোরে কাঁদে । মায়ের চোখের জল মুছিয়ে দেয় ।  আবেগ -অনুভুতি মুখরের ভীষণ ।অপছন্দ হলে তার প্রকাশ একটা বিকট শব্দ ।মা জানে সেটা ।

মুখরের শরীর খারাপ হলে মায়ের চিন্তা দ্বিগুণ ।একে তো মন খারাপ, তার ওপর  ডাক্তার কোনও পরীক্ষা করতে দিয়েছেন তো মুখর কে ধরে রাখার লোকজন খুঁজতে হয়। তখন সে শক্তিমান হয়ে ওঠে । বাকি সব মায়ের কথা শুনে থাকে।
মুখর যেখানে আঁকতে যায় সেখানে মুখরের বয়সী একটি মেয়েও আঁকে । সেও বিশেষ ।তার নাম মিশুক। তার মা তাকে নিয়ে আসে। যাতায়াতে মুখর -মিশুক- দুই মায়ের, খুব ভাব হয়েছে। ওরা যখন আঁকে দুই মা তখন ভাবনা চিন্তা করে ।বলাবলি করে তাঁদের অবর্তমানে এদের কি হবে---
কার হাতে দিয়ে  যাবে ।এইসব -এর মাঝে কবে যে তাঁদের বন্ধুত্ব হয়ে যায় টের পায়নি । মিশুকের বাবা  আছেন -মিষ্টিভাই ও আছে ।সে এখন মাধ্যমিক দেবে ।দিদি কে খুব ভাল বাসে ।দিদি কে; কেও কিছু বললে মন খারাপ করে ভাই ।দুই বাড়ির যাতায়াত বাড়ে । মুখর  মিষ্টি দুজন দুজনের বন্ধু হয়ে গিয়েছে।  ওরা নিজেদের আনন্দ বিশেষ শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করে। .....
 কয়েক বছর পর মুখরের মা দেখে মুখর ভালই আঁকছে। এই আঁকা নিয়ে যদি মুখর এগিয়ে যেতে পারলে মন্দ হয় না । দিদিমনি মুখরের মা কে বলেন ওকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে ।তিনিও সহযোগিতা করবেন। পরামর্শ দেন  মাকে -তাঁর নিকটজনের জন্য  গিফট হিসেবে  টেবিল ক্লথ -রুমাল - এর  ওপর মুখর কিছু আঁকা ঝোঁকা করুক । নিজে হাতে মুখর ,তাদের  দিক ।মুখরের জন্ম দিনে  । কথা মত কাজ ।সকলে খুব খুশী। উৎসাহ দিল প্রত্যেকে।রুমাল থেকে আজ  ও শাড়ি -পাঞ্জাবী -কুর্তি সবে তেই দিদিমনির সাহায্যে আল্প বিস্তর নক্সা কাটছে । মা ,মুখরের প্রথম ;যিনি মুখরের শিল্পের উদ্বোধক ।মিশুকের মা -বাবাও উৎসাহিত  ।শুভ কাজে বিলম্ব নয় ।
 মুখর- তার মা -দিদিমনি -মিশুক-মিশুকের পরিবার সকলের সহযোগিতায় একটি  ব্যবসা শুরু করেছে ।নাম দেওয়া হয়েছে "মুখরের মিশুক কুঠি "------
                                                    ---মউসুমী

Friday 9 June 2017

কথা র সানাই
পর্ব -২
জন্মের পর থেকে সকলের নয়ন মণি মুখর ।সবাই মিলে নানান শব্দের খেলা খেলে ।কেও নাম ধরে ডাক দেয় তো আবার কেও পাখির ডাক ,কেও নানান জীব জন্তুর।ঝুমঝুমি বাজান হচ্ছে ।কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া আসছে না ।কয়েক দিন পর ডাক্তার দেখানো হলে  পরীক্ষা করে জানান ; মুখর কান এ শুনতে পায় না ।এটি তার জন্ম থেকেই ।
শুনেই মা -বাবা খানিকক্ষণ স্তব্ধ--- বাড়ি ফিরে সিদ্ধান্ত , মুখর কে আর পাঁচটা বাচ্চার মতই মানুষ করতে হবে । ভেঙ্গে পড়লে চলবে না ।দ্বিতীয় সান্তানের পথে হাঁটলেনও না ।  পাছে মুখর অবহেলার শিকার হয় । যদি দ্বিতীয় তে পুনরাবৃত্তি ঘটে ।
মুখর পাঁচ এ পা দিয়েছে ।চিকিৎসকের পরামর্শ সাধারন বাচ্চা দের সাথে মেলামেশা করাতে হবে।সেই চেষ্টা শুরু ---
কেও বলে এই ওষুধ -ওই ওষুধ ।ছুটোছুটি চলছে। শেষ সমাধান--মুখর বিশেষ সন্তান ।ওর শিক্ষা পদ্ধতি ও বিশেষ। 
বাবা -মা মুখর কে বিশেষ বিদ্যালয়ে ভর্তি করালেন ।সেখানে দেখেন অনেক এই ধরনের ছেলেমেয়ে । বন্ধু হয়ে উঠলেন  অভিভাবক রা ।  বাচ্চারাও নতুন জীবন খুঁজে পেল ।প্রত্যেকের চোখের চাওয়া ভিন্ন ভিন্ন ।কিন্তু উচ্ছ্বাস প্রকাশের বার্তা কম বেশী প্রায় এক ধরনের ।
মুখরের আভিভাবকের চোখেমুখে বিরক্তির প্রকাশ কমই হত। মনের কষ্ট মনেই পুষে রাখতেন । প্রকাশ্যে অপ্রকাশিত ।

বিদ্যালয়ের পড়াশুনো ছাড়াও মুখর সাঁতার এ যায় ।তার বিশেষ পদ্ধতির সাঁতার প্রশিক্ষণ । দিনে দিনে সাঁতারে দক্ষ হয়ে উঠতে লাগল ।তার সাথে একদিন দেখাগেল  মুখর বাড়ির দেওয়ালে পেন্সিল নিয়ে চিত্র বিচিত্র --কি যেন কাটছে । মনে হয় কি যেন বলতে চায় ও ।
ওদের শেখান এমন অঙ্কন শিক্ষিকার কাছে দেওয়া হল ।সেই খানেও সে বেশ জমিয়ে দিয়েছে ।এভাবেই মুখর কে নিয়ে ভালমন্দে দিন কাট ছে ।
সাত -আট বছর যখন  ---মুখরের জীবনের ছন্দ পতন । বাবা অফিস থেকে ফিরল কিন্তু তার সাথে খেলা ধূলা করল না ---আদর করলনা---সেদিন অনেক লোকজন এসেছিল বাড়িতে ।বাবা শুয়ে ছিল ।বাবা কে সবাই মালা পড়িয়ে নিয়ে গেল ।  মা ,কাঁদছিল  মুখর মায়ের চোখের জল ছুঁয়ে ;মায়ের কোলে শুয়ে পড়েছিল ।কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিল টের পায়নি ।

প্রতিদিন মুখর বাবার আসার অপেক্ষায় থাকে ।মাঝে মাঝে বিশেষ শব্দ করে --দরজা খলে---- রাগের প্রকাশে শব্দটা উৎকট হয়ে ওঠে। ছুটে নিজের ঘরে চলে যায় ।মুখর-মা -বাবা ,তিনজনের ফটোর সামনে দাঁড়ায় ।
মনে কষ্ট মুখরের মা বোঝে  আচরণে ।দিনে দিনে সইল ---মুখর এখন যেন খুব যত্নবান মায়ের প্রতি ।মায়ের জামা -কাপড় গুছিয়ে রাখে ।বাড়ির অনেক কাজকম্ম করে ।মা স্কুল থেকে ফিরলে খুব আনন্দ ।ওর মত করে মা কে ওর স্কুলের কথা বন্ধুদের কথা বোঝায় ।রবিবারে মায়ের সাথে বাজার যায়। বেশ বোঝমান ,দুষ্টুমি একটু করে ।মা বলে অ্যায়ই ----।ওমনি খুশীর প্রকাশ ,মায়ের কোলে শুয়ে পড়া ।হুম; আজকাল রান্নাবান্নাও একটু আধটু করে । মায়ের সাথে  খুন্তি নাড়ে । মা উৎসাহ দেয় ...। স্বাবলম্বী হচ্ছে মুখর ।মা এইটাই চায়।-------
                                                                                                                         মউসুমী  



Thursday 8 June 2017

কথা র সানাই
পর্ব -১
মুখর আজ ১৮ বছরে পা দিল । মায়ের ব্যস্ততা অন্য দিনের থেকে বেশি ।লোকজন আসবে তাঁদের আদর -নিমন্ত্রণ এর আয়োজন করতে ভোর ভোর স্নান সেরেছে--গৃহ দেবতার পূজা সারা হয়েছে ।মুখর আজ আইন মোতাবেক সাবালক। খুশি-ভাবনা মেশান অনুভূতি।মুখর ও আজ সকাল-সকাল নিজের প্রাত্যহিক কাজকম্ম করে নিয়েছে। এমনিতে খুব লক্ষ্মী ছেলে। ঘরদোর অগোছালো পছন্দ করেনা।আজ ও পরিপাটি । মা-ছেলে দুজনেই ব্যস্ত।  অনেক কাজ মা  বলেন বাবু এটা কর তো , -ওটা করত। ও  শুধুমাত্র মা এর কথাই  শুনে থাকে। 
জন্মদিনে কাছের মানুষদের ডেকেছিল ; যারা মুখরের পছন্দের।  সকলে আসাতে খুব আনন্দ। মাঝে মাঝে উত্তেজিত হয়ে বিশেষ শব্দের মাধ্যমে জানান   দিচ্ছে ।মা জানে এটা ওর ভাল লাগার প্রকাশ ।মা মুচকি হেসে মাথায় হাত টা আলতো ছুঁয়ে দিল ।রাত্রে যে যার বাড়ি ফিরেগেল।গুছিয়ে গাছিয়ে শুতে শুতে আজ  একটু দেরী। খানিকক্ষণ পর মা  এপাশ ওপাশ করছে দেখে ; মুখর তাঁর দুটি হাত মায়ের মুখের কাছে নিয়ে দেখে মা এর  চোখে জল আর ঠোঁট  জোড়া দাঁতের কামড়  দেওয়া ।দুই হাত দিয়ে মায়ের চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে এক গেলাস জল দেয়। পরম তৃপ্তি আজ মায়ের ।
জন্মদিনের এটি ছিল মায়ের পরম পাওনা । সত্যি আজ মুখর সাবালক ।অনুভূতি-সহানুভূতি সবই বিশেষ ভাবে আছে ।
মুখর শান্ত। ঘুমিয়ে পড়েছে ও। সারারাত মাথার ওপর ঘুরন্ত পাখার দিকে চেয়ে ।আকাশ -পাতাল ভাবনায় মগ্ন ।কখন ভোরের পাখি কলকাকলি করে চলেছে  অন্যমনস্ক তে টের পায়নি । সকাল এ অনেক কাজ ।নিজের  স্কুল -ছেলের স্কুল  আছে । আজ রান্না করতে হবে না।এটাই রক্ষে ।সারারাত মুখর  কে নিয়ে মুখরের বাবা র সাথে  মনে মনে কথায় --কোথায়  পৌঁছে গিয়েছিল ।
আঠেরো বছর আগে যে দিন ডাক্তার বাবু জানালেন ঘরে নতুন সদস্যের আগমন । সেদিন থেকে মা -বাবা দুজনেই আনন্দে উদ্বেল । পরিকল্পনা এটা করব  -ওটা করব । কবে যে দশ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেল ।
যেদিন মুখর হল ডাক্তার বাবুরা বলেছিলেন ওজন কম । তাই ওকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে । তবে মা -বাচ্চা দুজনেই সুস্থ । যথা সময়ে মা -বাচ্চা বাড়ি এল ।খুব খুশী  সকলে ।দশদিন পরে দেখাগেল বাড়িতে রঙ্গিন খেলনা গুলোর দিকে চেয়ে আছে। বয়স্ক মা -কাকিমা - জেঠিমা বলল চোখ ঠিক আছে । এবার কান ঠিক আছে কিনা দেখতে হবে।---------








Sunday 28 May 2017

বড়মা 
সমাপ্তি 
ছোট নাতনির বিয়ে তে শারীরিক ক্ষমতা একদম পড়তির দিকে। কিন্তু মনের শক্তি বিপুল -বিশাল।এ বিয়ে বুঝি  , অন্য নাতি -নাতনির বিয়ে ব্যবস্থাপনা থেকে একটু আলাদা। ভিয়েন তো প্রতিটি অনুষ্ঠানে ই হয়ে থাকে। একটা মজার কথা বোলে রাখা ভাল । ছোট নাতনির বিয়েতে মিষ্টি সবাই পাচ্ছে ,কিন্তু তাঁর পুত্র কে কেও একটাও দিচ্ছে না ।বৃদ্ধ ছেলের জন্য লুকিয়ে কয়েকটা এনে বলেন এগুনো তাড়াতাড়ি খেয়ে নে ।ছেলেও তেমনি ।বলামাত্র উদরপূর্তি । মা - ছেলে চুপচাপ ।যেন কিছুই হইনি ।তাঁর ছেলের মিষ্টি খাওয়া নিষেধ ।তাঁর মধুমেহ হয়েছে ।কিন্তু মায়ের মন সবাই খাবে ,তাঁর ছেলে খাবে না ।এ হেন অন্যায় তিনি বরদাস্ত করবেন না । মা এবং ছেলের মধুর সম্পর্কের অটুট বন্ধন ।

 এবার একটু ইয়ে, মানে বাড়িতে কথা হচ্ছে আলো জ্বলবে। সেতো হ্যাজাকের আলো জ্বলে। এবার নাকি নাইট জ্বলবে। তিনি লাইট কে নাইট বলতেন। সমস্ত ল তাঁর ন। নাতিনাতনীর ছেলেমেয়েরা বলত বড়মা আবার বল নাইট। তিনি হাসতেন। হ্যাঁ তাঁর উত্তেজনা মাত্রা একটু হলেও বেশি , জীবনের পড়ন্ত বেলায়। নাইট মানে কী ?সে বড় নাতির বাসাতে দেখেছে।কিন্তু গাঁয়ের বসতবাড়ীতে সেকি সম্ভব?   বাড়ির বউদের রঙ্গীন কাপড় নিয়ে প্রবেশ দ্বার তৈরী হল। তার সাথে যুক্ত হল কলা গাছের থোড়ের মত দেখতে সাদা সাদা কিযেন একটা।গাঁয়ের সবাই এসে বলছে "ভাঁড়ল কেনে গো দোরে "----সন্ধ্যে নামল-- সেই থোড়ের মতো আলো জ্বলে উঠলো। আনন্দে করতালি বেজে উঠল। গাঁয়ে এই প্রথম এভাবে আলো জ্বলল তাও আবার লম্বা লম্বা সাদা সাদা। কলা গাছের থোড় কে ভাঁড়ল বলা হয় ।  বিবাহ সম্পন্ন হলো সুষ্ঠু ভাবে।

আস্তেআস্তে তাঁর স্বাস্থ্য ভাঙতে শুরুকরল। ডাক্তার বদ্যি দেখান হল। তাঁর পুত্রটিও কবিরাজ। তিনি দেখলেন এবং বুঝলেন তাঁর জীবনের রসদ ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু তাঁর তো মা তাই তিনি উদ্বিগ্ন যে অন্য চিকিৎসক যদি জীবন নদী বয়ে চলার ওষুধ দিতে পারে। তাঁরাও একই কথা বললেন। তিনি সম্পূর্ণ ভাবে শয্যা নিলেন। উত্থান শক্তি রহিত। তাঁর যত্নআত্তি করতেন খুব মধ্যম নাতবৌ টি।মায়ের সাথে ছেলেরও স্বাস্থ্য ভাঙতে লাগল। তাঁর কারণ ছেলের ডাক এ রুগী দেখতে হত বেশী।এ হেন পরিশ্রম তাঁর স্বাস্থ্য ভগ্নের কারণ।  খুব তাঁর  নামডাক। তাঁর বাবার থেকেও বেশী। ছেলের সুখ্যাতি মনে হত মায়ের, যেন যে কর্মে তিনি ব্রতী ছিলেন তাঁর চূড়ান্ত ফলাফল পেয়েছেন।

দিনে দিনে ভালোর থেকে মন্দের বাতাস  তাঁর শরীরে বেশি বইছে। চৈত্রের এক দুপুরে এতদিনের বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করলেন তিনি। কিন্তু তাঁর পুত্র মায়ের বন্ধনে জড়িয়ে পড়লেন। মায়ের চলে যাওয়ার দিন তাঁর চোঁখের জলের বাঁধ ভেঙে ছিল। মাঝে মাঝে উচ্চারণ মা --মাগো। তাঁর চলে যাওয়ার দিন গ্রামের লোকজন বলাবলি করতে লাগল "সৎ মা কে বলবে "--"মা , ব্যাটা অন্ত প্রাণ ছিল -ব্যাটাও মা বলতে অজ্ঞান "--বাড়ির ছোট সদস্যরা নিজেদের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলনা। গ্রামের লোকজন কার কথা বলছে আজকের দিনে। কোনদিন এ ব্যাপারে বাড়িতে কোনো কথার উত্থাপন হয়নি। সেই কথাটি গ্রামের মানুষ ভেবে ছিল -ভাবনাটা তাদের। তাই আজও বাড়িতে তিনি বড়মা। 
তিনি চলে যাওয়ার দিন বাড়ির পোষ্য জীবজন্তু র  দস্যি পনা স্তব্ধ হয়েগিয়েছিল। কোনও শব্দ করেনি। বাড়াবাড়ি মনে হলেও এটাই বাস্তব -সত্যি ঘটনা। সেদিনের স্নানাদির সময় পোষা সারমেয়টি বাড়ির সকলের পুকুরে স্নানের পর সেও স্নান সেরে সকল কে সুরক্ষা দিয়ে পিছনপিছন বাড়িতে এসেছিলো। এক কোনে চুপটি করে বসে ছিল। তাঁর স্বামীর চলে যাওয়ার দিন যা হয়েছিল তাঁর পুনরাবৃত্তি ঘটে নি ।সকলেই চোখের জলে বিদায় জানিয়ে ছিল ।প্রসংশায় ভরিয়ে ছিল ।শেষ যাত্রায় তাঁর ছিল সকল কর্মের উচ্চারণ। একমত সবাই । আজও তিনি এই প্রজন্মের দাদুর মা ।
 কে বলে বড়মা আজ প্রভাতে নেই -কে বলে তাঁর উত্তরাধিকার নেই। সব আছে বড়মা -আছে আজও বেঁচে চারপ্রজন্মের সদস্যদের মধ্যে। তোমার কথা এখানেএখনও  বলাবলি হয় গো বড়মা -------- তুমি শুনছ ---------




Friday 26 May 2017

বড়মা 
পর্ব -চার
নব বধু  আদর যত্নে আছে। দুই শাশুড়িমার শাসনেও। নিজের মত থাকে --বকুল ফুল তুলে এনে মালা গাঁথে। পূজার আসনে দেয়। বকুল ফুলের প্রেমে বকুল বিছানো গানটি গুনগুন করে। শাশুড়িমার কথা এবং উচ্চারণ তাঁর কেমন যেন  ঠেকে। মিষ্টি অথচ তাঁর মত নয়। " কে এয়েচে -নুচি -নেবু -নংকা -নোয়া -বৌমা এঁটো রয়েছে নাফিয়ে চল দেখি তো মা। "বেশ মজা লাগে তাঁর। মাঝে মাঝে মা, ছেলে কে লুকিয়ে নারকেল নাড়ু খেতে দিচ্ছে। এভাবেই দিনকাটতে কাটতে বাড়িতে নতুন সদস্যের আগমন। নতুন গোপাল আদরের ধন। মা -বাবা -ঠাকুমা -পিসিঠাকুমা সকলের ভালোবাসায় বাচ্চাটি বিছানায় শোয়ার ফুরসৎ পায়না।গোপালের গায়ের রং শ্যামউজ্জ্বল। সে নিয়ে প্রতিবেশীদের কথা উঠলে পিসিঠাকুমা বলতেন "রাং লয় -পিতল লয় -গোপাল আমাদের শুধুই সোনা ".--- কালো গাই এর দুধ গোপাল কে খাওয়ানো হত। কয়েক বছর পর তাঁর ভাইও এল। পরিবার বড় হতে লাগল।ভাইটির গায়ের রং ধবধবে সাদা। প্রতিবেশী রা ডাকে কালো সোনা আর ধলো সোনা। আরও চার ভাইবোন সংসারের সদস্য। জমজমাট কবরেজবাড়ি। 
ইতিমধ্যে পিসিঠাকুমার বার্দ্ধক্যজনিত কারণে দেহাবসান ঘটে।

 ঠাকুমা বড় নাতবৌ দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বড় নাতি আর কবরেজ হন নি। সরকারি চাকুরীজীবি ছেলে। হবু  নাতবৌ খোঁজা শুরু। সেই সময় ডাকযোগে চিঠি আসত -সে কবে এসে পৌঁছাবে তার দিন ক্ষণ  গুনে বলা যেত না। সে তাঁর মত আসবে। কিন্তু এদিকে যে সবুর সইছেনা। ছেলের বাবা -ছেলের মা কে ভালোবাসা মাখানো স্বরে বলেন "গোপালের মা আজও তো খবর হল না ".--অন্য সময় স্ত্রীর সাথে কথা হয়না। নানা লোকে নানা কথা বলবে। যে যুগে যে চল। 
বড়ছেলের বিয়ে হল ধুমধাম করে। বড় নাতবৌটি তাঁর মনের মতন। যেমনটি চেয়েছিলেন তেমনটি। চোখের আড়াল করতে চাইতেন না। নব বধুটিও ছোটছোট দেবর -ননদের মাঝে খুশিতেই থাকত।বড় নাতির ঘরে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তানের আগমন হল।  নাতিনাতনি দের ঠাকুমা বললেন "মেয়ে হয়েছে বলে নাতবৌ কে কেউ নুকিয়ে চুরিয়ে  কিচ্ছুটি বোলো না ---ও মেয়ে আমাদের ঘরের নক্ষী। "---বাড়িতে ছোট্ট মেয়েটি সকলের প্রিয়। মেয়েটি গ্রামের বাড়িতে গরমে কান্না কাটি করলে বড়মা বলতেন  "আহা ,নাইট -পাখায় জম্ম ; ওর কষ্ট নাগচে ,পাখা কর ।" আরও নাতি পুতির আনাগোনা চলতে লাগল। মেজো নাতি -বড় নাতনির বিয়ে হল ধুমধাম করে। ঠাকুমার তখন বয়স হয়েছে আস্তে আস্তে ক্ষমতা হস্তান্তর ঘটছে। সেই কাজে তাঁর ভীষণ সহযোগিতা। তিনি বলতেন "নেকা পড়া করিনি কোনদিন "---
কিন্তু তাঁর জ্ঞান এর ভান্ডার" তারিফ এ কাবিল" । সময়ের কাছে তিনি ভীষণ দায়বদ্ধ। হ্যাঁ কি যেন বলছিলাম --মেজ নাতির বিয়েতে তাঁর বড় নাতি  বলে ,তাঁর পাত্র ভাই কে,   বরযাত্রীদের রওনা হতে দেরী -দেরী বরেরও --পাত্রীর বাড়ি পৌঁছতে হবে।তখন তো আর চলভাষের চলন ছিলনা।  বড় নাতির কথার এবং সময়ের খেলাপ না পসন্দ ।  ওনারা চিন্তা করবেন তাই "আমি পাত্রীর বাড়ি চললাম --বরকেও যেতে হবেনা বরযাত্রীকেও না "----..ঠাকুমা বড় নাতি কে বলে ; বিয়েটা মেজো নাতির ; তাঁর নয়।  হাসি -মজা -ঠাট্টা --....সকলে এভাবেই আনন্দ করত -----ঠাকুমা তাঁর ছেলের নাতিনাতনিদেরও প্রিয় ছিলেন। তাঁর হাতে ভাঁড়ার ঘর এর কুলুপ।  বাচ্চারা বায়না জুড়ত বড়মা নাড়ু -মুড়কি দাও। কত যে নাড়ু -মুড়কি -নিজের হাতে তৈরি করতেন । চিঁড়ে -মুড়ি -সিঁড়ির নাড়ু । বিরক্ত হতেননা কোনও সময়। কষ্ট সহ্যের মাত্রাও সীমাহীন। অতিথি আপ্যায়ন করতেন ।হাতের তৈরি খাবার  দেওয়া হত । গ্রামে কিছুই পাওয়া  যেত না।
বাড়িতে গাই এর দুধ থেকে সুস্বাদু মিষ্টি তাঁর মত করতেন ।সবাই তাঁর হাতের বানানো খাবার সক্লের প্রিয় ।
 কখনো কখনো বাড়ির বলদজোড়ার তান্ডবে শিং এর গুঁতোতে রক্ত ঝরেছে যন্ত্রনা মুখেচোখে কিন্তু তিনি বিকার হীন ----তাঁর মনের যন্ত্রনা থাকলেও কাকপক্ষীতেও টের পায়নি।বয়সের ভারে শরীর ভেঙেছে।
 মোড়ল দের  ভ্রূকুটি অগ্রাহ্য করে ছেলে তাঁর শখ আহ্লাদ পূরণ করেন । কুলুঙ্গিতে তাঁর থাকত ছোট্টএকটি আরশি আর একটি কাঁকই মানে চিরুনী। ছেলে বড় হওয়ার পর মা কে চুল আঁচড়াতে বলেন। নাতবউ এর প্রসাধন নাতবউ ঠাকুমাকে মাখিয়ে দেয় । বক্তব্য ওই বিধি বিধান পালন করতে হবে না। যা সইবে তাই রইবে।-----
  তাঁর ছোটনাতনীর বিয়ের জন্য ব্যস্ততা। তিনি দেখেযেতে চান।সেই সময় সবে গ্রামে বিদ্যুৎ আসতে শুরু করেছে। -----   

Thursday 25 May 2017

বড়মা 
পর্ব -তিন 
এখন গ্রামের লোকজন সদয় কবরেজ পরিবারের উপর।কিভাবে সন্তান মানুষ করতে হবে। সবার উপরে তাদের দায়িত্ব ওই পঞ্চদশী যার অকালবৈধব্য নেমে এল।  তাঁর জীবন নির্বাহের বিধান দানের ব্যস্ততা- আলোচনা  তুঙ্গে। সেই যুগে ওই বাচ্চা মেয়েটির জীবন অসহনীয় করে তুলেছিল। প্রথমেই তাঁর চুলগুচ্ছ কেটে ফেলাহয়েছিল অনেকটা কদম ফুলের মত তাঁর আকৃতি।  সাদা খান শাড়ি কোন রঙের প্রবেশাধিকার নেই। নির্জলা একাদশীর উপবাস।প্রতিদিন সেদ্ধ পক্ক একবেলা অন্যবেলা খৈ -মুড়ি।
কেন জানিনা অল্প দিনের মধ্যেই মা -ছেলে -পিসিমার মধ্যে সখ্যতা তৈরী হয়েছিল। সমাজের সব নিয়ম কানুন মেনেছিল তাঁর মা ওই ছেলের মুখচেয়ে। মা -ছেলে কখনো বন্ধু তো আবার মা তাঁর অভিভাবক। দুই মহিলা তখন থেকেই শক্ত মনের অধিকারী হলেন। ছেলেকে মানুষ করতে হবে। সম্পত্তি রক্ষা করতে হবে। গাঁয়ে বলাবলি করতে লাগল নানান কথা -শুরুহল সমালোচনা।দুই নারী এক কান খোলা রাখলেন অন্য কান বন্ধ রাখলেন। 
ছেলে কে নবদ্বীপ টোলে পাঠ নিতে পাঠানো হল। সে তাঁর নিজের মত বড় হতে লাগল। এনারা বাড়ির হাল ধরলেন। 
কয়েক বছর পরে হঠাৎ সদর দরজার দিক থেকে ডাক এল "মা -পিসিমা আমি এসেপড়েছি -কোথায় গেলে তোমরা "--পড়াশোনা শেষ করে বাড়ি ফিরলো। ছেলে তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে কবিরাজ হলেন। বাড়িতেই ওষুধ তৈরীর ব্যবস্থা করলেন। নানান লোকজন নানান কাজে ব্যস্ত। ওষুধ ঘর তৈরী হল। রুগীর আনাগোনা বাড়তে লাগল। দূরদূরান্ত থেকে রুগীর ঢল্। ছেলের হাতযশ খুব। চতুর্দিকে নাম -ডাক। মা -পিসিমা আনন্দে মশগুল। সেও তাঁর বাবার মত ডাক এ যায়। সেও নিদান দিতে পারে -দিতে পারে  পক্ষাঘাত গ্রস্থ রুগী কে স্বাবলম্বী হওয়ার মকরধ্বজ।
 নাড়ির স্পন্দনের ওঠা নামার ফলে নানাবিধ অসুখের ফরমান। ওষুধে আরোগ্য লাভ করায় রুগী তাঁর নবজীবনের আনন্দে । তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র। সকলে বলে বাপের ছেলে। মায়ের কথা -পিসিমার কথা কেও বলেনা। বলেনা তো বলেনা তাতে ওঁনাদের কিচ্ছুটি যায় আসে না।

ছেলে বড় হয়েছে এবার বিবাহের তোড়জোড় চলছে। ছেলের তাঁর মা এর উপর সম্পূর্ণ ভরসা। যথা সময় কনের খোঁজ মিলল। তাঁকে চাক্ষুস করতে হবে। পাশের গাঁয়ে থাকে তাঁর বাল্য বন্ধু। তাঁর সাথেই মেয়ে দেখতে যাওয়া। কনে  সপ্তম মানে পড়ছে। সুশ্রী ও বটে।ধুতি -পাঞ্জাবী পড়ে  ছেলে- ছেলের বন্ধু কনে দেখতে গেলেন । নাম -ধাম জানলেন মেয়ের। মেয়েটি কে প্রশ্ন করলেন তাঁর" তর্কবাচস্পতি "এবং "কুজ্ঝ্বটিকা"--বানান জানা আছে কী ? মেয়েটির উত্তর- তাঁর দ্বিতীয় ভাগ পড়া আছে। অনায়াসে উত্তর । তথা বানান জানাল    মেয়েটি। গান জানে কিনা প্রশ্নেরও উত্তর এল গানের মাধ্যমে। "বকুল বিছানো পথে তুমি যে গিয়াছ চলিয়া "--সুর -বেসুরের মধ্যে মন্দ লাগল না। মেয়েটির সরলতা তাঁদের ভাল লেগেছিল। মা -পিসিমা কে ছেলের সম্মতি জানান হল। ধুমধাম করে বিবাহ সম্পন্ন হল। কবরেজ বাড়ি সরগরম। -----

Wednesday 24 May 2017

বড়মা 
পর্ব -দুই 
পত্নী বিয়োগ চিন্তার সাগর এ ভাসছেন  কবরেজ মশায়। ইতিমধ্যে রুগী দেখার ডাক এসেছে বর্ধমান জেলার মাদারবাটি থেকে। বোনের কাছে সদ্য মাতৃহারা ছেলেকে বুঝিয়েসুঝিয়ে রেখে গেলেন। স্বাস্থ্য পরিষেবা তাঁর জীবনের মন্ত্র।বেশিরভাগটাই তাঁর বীনাপারিশ্রমিকের।তাঁর নামের জয়গান করেন লোকজন।  বিপদ -আপদ সহায় সম্বলহীনদের তিনি নিদান কারী আবার আরোগ্যনিকেতন। 
তিনি ডাকের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন সাথে পাহারাদার - সেই বংশ দণ্ড -ওষুধের পুঁটলি  অন্যান্য সামগ্রী। এবারের ফেরার আর নাম গন্ধ নেই তাঁর। লোকমারফত আসা -যাওয়ার খবর পাওয়া যেত। সেও হচ্ছেনা। বর্ধমান গ্রাম কে  আগের লোকের মুখেমুখে বলা হত  পশ্চিমের দেশ। গাঁ -গঞ্জের লোক চাষাবাদের সময় খাটতে যায়।তাদের মারফৎ খবরাখবর পাওয়া যেত।  এখন সেই মরশুম নয়। খরা চলছে।  
ভাবনাচিন্তার মধ্যে হঠাৎ সন্ধ্যে নামার মুখে গোধূলি বেলায় গরুরগাড়ি এসে থামল কবরেজবাড়ির সদর দরজায়। কবরেজ মশায়ের বোন ভাইপো কে নিয়ে দেখতে এসেছেন তাঁর সাথে প্রতিবেশীদের জটলা "কে এলা গো লতুন মানুষ গাঁয়ে"। 
এক পঞ্চদশী শ্যামলা বরণী ঘোমটা মাথায় নিরাভরণী কন্যে। পা দুটি আলতা মাখা। উঁচুকরে গাছকোমড় শাড়ী তে বেশ লাগছে। ঘরে প্রবেশ করে ছেলেকে কবরেজ মশায় বলেন এখনথেকে এই তোমার মা।বোনকে বলেন তোর সই। 
মা এবং পুত্রের বয়সের ব্যবধান চার -পাঁচ  বছরের।কয়েকমাস মাস কাটলো হঠাৎ কবরেজ মশাইয়ের শরীরে ক্লান্তি ঘিরে এল। চিকিৎসক মানুষ নিজের আয়ুকাল সম্বন্ধে সচেতন। তিনি চিন্তা ভাবনা করে  এই গ্রাম থেকে চারমাইল দূরে একগ্রামে জায়গা জমি  কিনে বাড়িঘর তৈরী করলেন। সেখানে তাঁর স্বজাতির বাস।স্ত্রী -ছেলে -বোন দের সঙ্গে নিয়ে ওই গ্রামে বাস করতে শুরু করেন।তাঁর যাতায়াত ছিল দুই গ্রামেই। গ্রামের লোকজন কবরেজমশাই এর যাবার দিন অরন্ধন পালন করেছিল।
 নতুন গাঁয়ে যাবার দিন থেকে অসহযোগিতা। একদিকে তাঁর নাম ডাক -অপরদিকে দ্বিতীয় বার -----।মোড়লদের আঁচে ঘি পড়েছিল সেদিন থেকে।  রাশভারী মানুষটির সামনে কেউ কিছু না বললেও কথা চালাচালি চলছে তার খবর আনছে তার ভগিনী। কবরেজ মশায় তার ধারধারেননা। বছর ঘুরতে না ঘুরতে গ্রীষ্মের দুপুরে মাত্র ঊনচল্লিশ বৎসর এ  সন্যাস রোগে আক্রান্ত। ঘৃতকুমারী   মাথায় লাগাতে বলার অবসরটুকু পেয়েছিলেন। কিছু ক্ষণের মধ্যে সবকিছু শেষ। গাঁয়ের লোকজন জমায়েত হল। নানান বিধান দিতে লাগলেন। সবচেয়ে বড়বিধান দাগলেন গাঁয়ের মোড়ল।বিধানটি হল কবরেজমশাই এ গাঁয়ে হঠাৎ ঘরবেঁধেছেন সুতরাং তিনি এখনও তাঁদের পঙতিতে গ্রহণ -বিসর্জন এর যোগ্য নন। মৃত দেহ পড়ে রইলো। কেও ছুঁলো না।
 অথই জলে  বালিকাবধূ -বালক পুত্রটি এবং কবরেজমশাই এর ভগিনী। বাচ্চাটাকে আঁকড়ে মা এবং পিসিমার কান্নায় -- কান পাতা কঠিন হলেও দুই কান সমৃদ্ধ মানুষের অভাব প্রকট । বাড়ির দেওয়াল থেকে কান্না ফিরেফিরে আসছিল।
খারাপ খবর মুখেমুখে রটতে থাকে।  লোক এল তাঁর সেই পুরনো নিজের গ্রামথেকে।অন্য গ্রামে থাকতেন কবরেজমশাই এর এক তুতো ভাই। তিনিও এলেন। প্রায় একদিন পরে তাঁর পরবর্তী কাজকর্ম সম্পন্ন হল।পরের দিনথেকে শুরু হল নতুন দিনলিপি। দিনলিপির সাল -তারিখ ছেলেটির মা এবং পিসিমা।ছেলেটি বড় হতে লাগল -------   

Tuesday 23 May 2017

বড়মা 
পর্ব -এক 
আজথেকে প্রায় একশত বৎসর পূর্বের ঘটনা। বীরভূম জেলার প্রত্যন্তঃ গ্রামে এক কবিরাজ পরিবারের বাস।গ্রামের অন্যান্য জনসাধারণ বিভিন্ন শ্রেণীভুক্ত।  দারিদ্রসীমার নীচে তাঁদের  বাস। কিন্তু ওরা মানুষ অর্থাৎ মান ও হুঁশ দুটোই বর্তমান -প্রকট। কবিরাজ পরিবারটি বংশপরম্পরায় একটি পুত্রসন্তান এবং দুটি -তিনটি কন্যাসন্তানের অধিকারী। জমিজমা আছে সাথে আছে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া গৃহদেবতার পূজা। আজও সেটি চলেআসছে। গ্রামের সকলে মান্যি করে -শরীর অসুস্থ হলে ওষুধপত্র দেওয়া ,পথ্য বিধান দেওয়া  থেকে পথ্য সামগ্রী যোগান এই সবই কবিরাজ পরিবার করে থাকে।নাড়ী স্পন্দন দেখে তাঁর আয়ুকাল বলে দিতেন কবরেজ মশায় । সকলে একডাকে  কবরেজ বাড়ী নামে চিনত। 
কবরেজ মানুষটি ছিলেন উদার মনের। খাদ্য রসিক -রাশভারী প্রকৃতির -এককথার মানুষ -পরোপকারী। তিনি একেকবারে একটি গোটা পাঁঠার মাংস সাবাড় করে দিতেন। রেগে গেলে সামলানো মুশকিল হত। কিন্তু পরক্ষনেই বরফ গলা জল। এহেন গুণ -দোষ নিয়েই তাঁর জীবন। গ্রামের মানুষ -আত্মীয় স্বজনের কাছে তিনি মসিহা। হিন্দু মুসলিম উভয়ই তাঁর বন্ধু। কবরেজের জমি চাষাবাদের দুইই ভাগীদার। দুই সম্প্রদায়ের মানুষজনের অবাধ যাতায়াত। পূজা থেকে পরব সবকর্মেই এই কবিরাজ বাড়ি।মুসলিমদের পরবে কবিরাজ বাড়িতে আসত সুগন্ধী চাল -ঘি -সেমুই -দুধ যাবতীয়। তাঁরা বলতেন এধে খাবেন। র বলতে পারতনা রেঁধে কে এধে বলত।  

ছোট বয়সে পিতৃহারা -মাতৃহারা হন। কিন্তু এক কায়স্থ পরিবার তাঁর এবং বোনের  উপযুক্ত হতে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন।সময়ে তিনি দ্বার পরিগ্রহ করেন। অপূর্ব সুন্দরী ছিলেন তাঁর পরিবার। কবরেজ মহাশয় ছিলেন দীর্ঘকায়। গাত্র বর্ণ ছল শ্যামউজ্জ্বল ।ভগিনীর বিবাহ হয়ে ছিল। বাল্যবিধবা হওয়ায় তাঁর শ্বশুরবাড়িতে ঠাঁই হয়নি।ভগিনীর বড় দাদা একরোখা প্রকৃতির ছিলেন।  বোনের অনাদর না হয় তাই নিজের বাড়িতে বোন কে আনলেন। বলেন এটা আমারও বাড়ী আবার তাঁর ও বাড়ি। ননদিনি আর বৌদিদি দুই বন্ধুর মত হয়ে উঠলো।  
ঘর আলোকরে কবরেজ গিন্নির কোলে এল শিশু সন্তান। পরম্পরা মেনে শিশুটি পুত্রসন্তান। এভাবেই দিনচলছিলো। কবরেজ মহাশয় কে প্রায় ডাক এ রুগী দেখতে যেতে  হয়।সাথী একজন সর্বক্ষণের সহযোগী -ওষুধের পুঁটলি এবং লণ্ঠন। পাহারাদারের হাতে সরষের তেল মাখানো পাকাবংশদণ্ড। ডাকাতের ভীষণ উপদ্রব। আত্ম রক্ষার্থে। পথ চলতে মাঝে মধ্যে ভেসে ওঠে "কে যায় এত রাতে ?"---উত্তর আসে কবরেজ যায়।আশ্বাস দেয় চিন্তা নেই "আমরা জেগে আছি "--  
দূরদূরান্তে যেতেহতো রুগী দেখতে। কখনও ফিরতে ফিরতে চার -পাঁচ দিন লেগে যেত।  পায়ে হেঁটে যাওয়া আসা। কালেভদ্রে গরুরগাড়ি।  শিশু তাঁর মা এবং পিসিমার কাছে বড় হতে লাগল। তাঁর সাথে গ্রামের মানুষের সহযোগিতা। 
ছেলেটি  সবে দশ কি এগারোয় পা দিয়েছে হঠাৎ ছন্দপতন। তাঁর মাতৃ বিয়োগ হল। কবরেজ মশায় পড়লেন অথৈ জলে---.




                          
  

Sunday 21 May 2017

অধরা মাধুরী 
অন্তিম পর্ব
#মৌসুমী রায়

বিদায় বন্ধু। যেতে নাহি দিব --কথোপকথন চলছে মনের মাঝে। এতসবুজ আগে কখনও দেখাহয়নি। জঙ্গলের মাদকতা বিভোর করেছে। আজ জিড়িয়ে নিয়ে আগামীকাল ফেরার পালা। মনের খিদে আটকানো ভীষণ কঠিন। মন ভরতেই চায়না। শেষ নেই যে -শেষ কথা কে বলবে। যাবার আগে মন খারাপের আসন না পেতে আবার একটু ঘুরে আসি। একটু মিষ্টি মুখ। যেমন লুচি দিয়ে যতই সুস্বাদু মিষ্টি খাওয়া যাক না কেন -ওই যে শেষ লুচি টি ফুটো করে চিনি দিয়ে খাবার কিযে তৃপ্তি বোঝানো যায়না কাউকে। সেই ফুলকো লুচি আর চিনি হলো মৌয়ের লাভা এবং ঋষভ ভ্রমণ । ওখানে রাস্তায় দেখলাম ঋষি লেখা আছে। সে আছে তার মত। 
লাভা যাওয়ার পথে প্রকৃতির সাজ। রঙের সাজুয্য নান্দনিক। সমতলে যেমন যাত্রা পথে প্রায়শঃ ধানক্ষেত দেখাযায় তেমনই ডুয়ার্স থেকে পাহাড় পথে চাবাগানের সমারোহ। ঢেউ খেলানো সবুজ চাদর বিছানো। চাবাগিচায় মেয়েরা টুকরি নিয়ে চা পাতা তুলছে। একটি কুঁড়ি দুটি পাতা। মেয়েরা নরম মসৃণ আঙুলের যাদুতে সম্পন্ন করছে। চাগাছের বীজ এবং ফুল ও নজর কাড়লো।
পাহাড় পথে  কখনো মেঘ -রোদ -আবার বৃষ্টি। দেবদারু -পাইন গাছের বন।আবার কোথাও দুটি গাছ একসাথে জড়িয়ে বড় হচ্ছে যে যার মত। কোনও বিদ্রোহ নেই। তাঁদের স্লোগান বাঁচো বাঁচাও।  প্রকৃতি সৌন্দর্যে মন খিদে আরও বাড়ছে।লাভা পৌঁছে দেখা পেলাম বৌদ্ধ দের উপাসনা গৃহ -বৌদ্ধ স ন্যাসীদের পড়াশোনার স্থান। বুদ্ধদেব  শান্ত স্নিগ্ধতায় বিরাজমান। সন্যাসীরা তাঁদের কথাবার্তা কাজকম্মে নিমগ্ন। 
তাঁর সংলগ্ন লাভা উচ্চবিদ্যালয়। পাশেই বাচ্চাদের পড়াশোনা করার বিদ্যালয়। যখন পৌঁছানো গেল লাভায় তখন বাচ্চাদের ছুটি হয়েছে। কিযে মিষ্টি লাগছে ওদের যেন একেকটি পাহাড়ী ফুল। যত্নে ঈশ্বর সাজিয়েছেন। 
তার মাঝে বড়ো বিদ্যালয়ের জলযোগের সময় হয়েছে। ঘন্টাপড়লো -ওরা কেও সংলগ্ন মাঠে খেলা শুরুকরল -আবার কেও নিজেদের ভাষায় বাকবিনিময়ে  মশগুল।  
একটি জলাধার প্রকল্পের কাজ ও নজরে এলো। খাওয়া দাওয়ার পর, মানে পেটের খিদে মিটিয়ে মনের খিদে মেটাতে তখন বেশ লাগছে।  লাভা আসার পুর্বে গাড়িচালক ঋষি বা ঋষভ ভিউপয়েন্ট ঘুড়িয়ে নিয়ে এল। ঋষভ এর রাস্তা খুব বন্ধুর। গাড়ি আটকে যাই যাই তখন প্রকৃতি দেখব কী -ঈশ্বর নাম জপছি। এভাবে যেতে যেতে প্রকৃতি কে যে ভাবে দেখাগেলো বর্ণনার অতীত। পাখির ডাক -কোনপাখি ডাকছে তার নজর করার যো নেই।গাছের পাতার রঙে রংমিলান্তি। কাঞ্চনজঙ্ঘা বরফ সাজে সেজে আছে।মুকুট -গলার হার -টায়রা -টিকলি -নথ সবই পড়েছে। নীলাকাশের মাঝে -বরফ ভেঙে ডিঙিয়ে যাওয়া সাধ্যি নাই যে আমার ক্ষমতার কাছে।   ওপারে ভূটান -সেখানে রোদঝলমল। সবুজ ঘেরা পাহাড় মাঝে বাড়ির ছাদগুলো রোদের ছটা চোখ টানছে।দুপুরের পর থেকে পাহাড় অন্য রূপ ধারণ করে। সুতরাং সুন্দর কে দেখার জন্য এই মানব জাতিকে বাঁচতে হবে। অগত্যা ফিরতে হবে মাটির টানে।  ফেরার পথে আবার পাহাড় -ফুল -পাখি বন্ধুদের বিদায় জানানোর পালা। ওরাও  জানালো তবে বিদায় নয়। জানালো ভালথাকার মন্ত্র। বললো আবার দেখাহবে বন্ধু। 
মাধুরী অধরা। মনচক্ষু এর সমঝদার।মুখে  বোলে বা ছবিতে বোঝানো যায়না। সত্যি তুমি অধরা মাধুরী ধরেছো ছন্দ বন্ধনে। 

Saturday 20 May 2017

অধরা মাধুরী 
পঞ্চম পর্ব
 #মৌসুমী রায় 

গত রাত থেকে মৌয়ের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে সেই কথা টি। সেইটি প্রায় সে গীতা শ্লোকের মতো মনে মনে আউড়ে যাচ্ছে। কখন ভোর হবে আর সেই কথাটি সুরে বাজবে। প্রথমতঃ তরাই -ডুয়ার্সের আকর্ষণ। সঙ্গী হলো উত্তরবঙ্গের স্থানগুলির নামকরণ। লাটাগুড়ি -ময়নাগুড়ি -ধূপগুড়ি -বিন্নাগুড়ি -ফাঁসিদেওয়া -হাসিমারা -রাজাভাতখাওয়া -কুনকি -গরুমারা -জলদাপাড়া আরও কতকি। নামেই সে প্রেমে পড়েছে। তারসাথে সেই কথাটি --
কথাটি হল ফরাসী প্রবাদ এ আছে যে একটি গাছ অনেক সময় পুরো জঙ্গল ঢেকে দেয়। 
ডুয়ার্স তো গাছেগাছে বিপ্লব ঘটিয়েছে -আর তাঁর বিপ্লবী ভাই বোনেরা বিপ্লব অমর করেছে। সেই বিপ্লবীরা বনের জীবজন্তু -কীট -পতঙ্গ। ডুয়ার্সের জঙ্গল এর শিল্প প্রদর্শন নয় এর সৌন্দর্য শিল্প বিপ্লব। 

ভোরহতে না হতেই তৈরী জঙ্গল ভ্রমণের উদ্যেশ্যে। সাথে গাড়ীর চালক আর পরিচয় সহায়ক।ভোরের মিষ্টিহাওয়া -বনের মিষ্টি গন্ধ -পাখীর ডাক দিয়ে যাওয়া -ঝিঁঝি পোকার সুর -ছন্দবদ্ধ নিয়ে যাত্রা শুরু। যাত্রাপ্রসাদ জঙ্গল সফর। যাত্রাপ্রসাদ নামকরণ একটি হাতীর নামানুসারে।  যেতেযেতে ময়ূর পেখম টাকে রাস্তার উপর ঝাড়ু দিয়ে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গাড়ীর শব্দে ওমনি ফুড়ুৎ। পাখিরা গাছে দোল দিয়ে নানান সুরে গাইছে। বনমোরগ খুঁটেখুঁটে কী খাচ্ছে -চকিতে হরিনের আগমন -প্রস্থান। পরিচয় সহায়কের দৃষ্টির তারিফ করতে হয়।কোথায় ময়ূর তাঁর পেখম রেখেছে সেটিও চালক -সহায়কের নজর এড়ায় না। ভীষণ দক্ষ।  তাঁদের সরলতা অনুভব করলে  মনে শান্তি আনে।তাঁদের  মুখে হাসিলেগে -আর পর্যটক কে হাতী -গন্ডার -বাইসন দেখানোর চেষ্টা। পর্যটক বনের জীবজন্তু  দেখলেই ওদের কিযে আনন্দ না দেখলে বোঝানো যাবেনা।হ্যাঁ যাত্রাপ্রসাদে হাতীর দল ঘুরছে -নানান বর্ণ -প্রজাতির পাখির ঝটপট শব্দের  আসাযাওয়া মনের ছবিতে এঁকে রাখছে। যন্ত্র ছবিতে ধরতে গেলে তাঁদের খেলাখেলি দেখাযাবেনা। 
সফর সেরে লাটাগুড়ি তে ফেরা। লাটাগুড়িতেই ডেরা বাঁধা। আবার বিকেল বেলা মেডলা জঙ্গল। ... এখানে প্রথমে মহিষের গাড়ি করে জঙ্গলে পৌঁছনো। সেখানেও গন্ডার -বাইসন -হাতি -ময়ূর -ময়ূরী -হরিণের দেখা। সবে বৃষ্টি হয়েছে বড়বড় ঘাসে হাতীর থামের মত পা পড়তেই জলের ফোয়ারা -যা পূর্বে দেখিনি। লবনপাত্র রাখা আছে সেখানে লবন-গুড় খেতে আসে গণ্ডারের দল।সন্ধ্যে হবেহবে ফেরার পথে আদিবাসী নাচনী আখড়ায় নৃত্য -সংগীত প্রদর্শন। আদিবাসী সুর -নৃত্য ভঙ্গিতে আজও তাঁরা তাঁদের কৃষ্টি বাঁচিয়ে রেখেছে।  তার সাথে চা -বিস্কুট। টিকিট ব্যবস্থার মাধ্যমে এগুলি পরিচালিত।সাথে পাওয়া যাচ্ছে চাবি বন্ধন -ধূপকাঠি। সবই আদিবাসীদের তৈরী।টিকিটের সাথে এগুলি পর্যটকদের দেওয়াহয়।  এর অর্থ আদিবাসী কল্যাণে খরচ হয়। ২০০৬ সাল থেকে এর যাত্রাশুরু। রাত্রি হয়েছে ফিরতে ফিরতে জঙ্গলের মাঝবরাবর রাস্তা -গাড়িরচালক পিকু জানায় হঠাৎ হঠাৎ হাতি আসে এই রাস্তায়। জোৎস্না মাখানো বনের পথে বনের সৌন্দর্য উছলে পড়ছে।  মাঝেমাঝে গাড়ির আলো বন্ধকরে দলবদ্ধ জোনাকির আলো দেখাচ্ছে। রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছিলো। 
সেই আবেশ কাটতে না কাটতে পরের দিন টানা তিনঘন্টা জঙ্গল সফর। ভাম এরসাথে দেখা তাঁর গায়ের গন্ধ আতপ চালের মত। বাইসন তার বাচ্চাদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতি তার পরিবার নিয়ে বেরিয়েছে। পর্যটকদের ছবিও তুলতে দিচ্ছে। বেতগাছের পাতা ভেঙে সামনের পা দিয়ে আয়ত্তে এনে মুখে পুড়ছে। গরমকাল -হাতি স্নিগ্ধ হওয়ার জন্য মাটিসমেত ঘাস উপড়িয়ে পিঠে রাখছে। বকের সারি গন্ডারের পিঠে চেপে চলেছে। 
ওরা কত সুন্দর এই কথাটি মনেমনে উচ্চারিত হল। ---তোমার প্রেমে ধন্য করেছ মোরে ডুয়ার্স। ---চোপড়ামারী যাত্রাপথে হাতিনাদেখলেও ধনেশ পাখির দেখামিললো -দেখামিললো মদনটাক পাখির। প্রকৃতির সাথে তাদের সহাবস্থান মনের আনন্দ এক অন্য মাত্রা পায়। ---ডুয়ার্স বলছে "এখুনি কি হলো তোমার যাবার বেলা --হায় অতিথি। দেখ আমার হৃদয় তলে সারা রাতের আসন মেলা। "-----

Friday 19 May 2017

অধরা মাধুরী 
চতুর্থ পর্ব
#মৌসুমী রায়

ইতিহাস কথা বলে।স্বচক্ষে দেখার ইচ্ছে-দেখা বাস্তবতার সামিল। উত্তরবঙ্গের বক্সা দূর্গ তাঁর নিদর্শন। ইতিহাস কে ছুঁয়ে দেখার বাসনায় বক্সা উদ্দেশ্যে রওনা।পদ যুগল আশ্রয় করে সঙ্গী সহায়ক নিয়ে চলা শুরু।  চড়াই -উতরাই পথ। চলতি পথে ক্লান্তি পথ আটকানোর চেষ্টায়।কিন্তু মন তখন জেগে উঠেছে -বলছে যা দেখে যা স্বাধীনতা এনেছেন যারা তাদের কষ্ট -তাদের চিন্তা ধারা। 
এভাবেই মনে মন কথায় কথায় কখন পৌঁছে গেলাম বহু প্রতীক্ষিত বক্সা দূর্গে। এখানেই স্বাধীনতা সংগ্রামী দের বন্দী করে রেখেছিলো ইংরেজরা। তাঁদের কী কষ্ট যাপন করতে হয়েছিল তা আজও দ্বন্দ্ব  -দীর্ণ অবস্থায় দণ্ডায়মান।রক্ষনা বেক্ষনের বড়ই অভাব। অন্যান্য বন্দীদের সঙ্গী বন্দী ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস। তাঁকে নিয়েই ইংরেজদের মাথার গন্ডগোল। সুতরাং বক্সা দুর্গ যে কী দুর্গম স্থান তা সহজেই অনুমেয়। ১৯৩১ সালে বন্দীরা শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে তাঁদের অসহনীয় অত্যাচার -নির্যাতনের কথা পত্র মারফৎ জানান। কবিগুরু যারপরন্যায় ব্যথিত 
  তাঁদের কষ্টে। তিনিও তাঁদের প্রত্যুত্তর পত্র পাঠান। তিনিও সমব্যাথী। লেখার মাঝে একজায়গায় লিখছেন "ফোয়ারার রন্ধ্র হতে -উন্মুখর উর্দ্ধ স্রোতে"--। দুটি চিঠির ফলক নির্মিত সেখানে। বন্দীদের পানীয় জল থেকে বঞ্চিত করার প্রকল্প নেয় ইংরেজরা।দূর্গ লাগোয়া জলাশয় বন্ধকরে দেয়। আজও সেখানকার বসবাসকারী জনগণ তাঁর ফল ভোগ করেচলেছে। 
একদিকে ইতিহাস ছুঁয়ে দেখার আনন্দ অপরদিকে স্বাধীনতা সংগ্রামী দের সংগ্রাম দুয়ের দ্বন্দ্বে  দ্বিখণ্ডিত। 
ফেরার পথে মনে হলনা পাহাড়ে ওঠার কষ্টের কথা।
  
পাশেই বয়েচলেছে জয়ন্তী নদী।কত ইতিহাসের সাক্ষী।কত জল বয়ে গিয়েছে -বইবে আরো কত ---
সেও এক অনন্য সুন্দরী দেহে -মনে। রূপে শুধু ভোলায়না গুণেরও মাধুকরী। বক্সার মধুর ক্লান্তি কে অনায়াসে লাঘব মন্ত্রে অনুরণন ঘটায় তাঁর বহমান ধারার ধারায়। 
ইতিহাস সাথেই চলেছে আর নিজেরা নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। ঈশ্বর কে শুধু কৃতজ্ঞতা -অনেক দিয়েছ নাথ। 
চলতে চলতে পথে রাজাভাতখাওয়া। দুই রাজার সন্ধি এবং ভাত খাওয়া। সেই ভাত খাওয়া আজও ভারত -ভুটান খেয়েচলেছে -চলবেও। শুধু খাওয়া নয় চলছে তার সাথে দাওয়া -ও। ------
  

Thursday 18 May 2017

অধরা মাধুরী
তৃতীয় পর্ব 
#মৌসুমী রায় 

পথের সাথী জলঢাকা। পথ চিনিয়ে নিয়ে চলেছে নদী নতুন ঠিকানার খোঁজে। চলতে চলতে নদীর কোথাও জল তো কোথাও নুড়ি পাথর। এই সেই মধ্যবর্তী জলস্থল এ এক সুন্দরীর খোঁজ মিলল। প্রকৃতি তাঁর চন্দন -কুমকুম -ওড়না দিয়ে কনে সাজিয়ে রেখেছে। নামটি তাঁর ঝালং। পাহাড় ঘেরা সাজে তাঁর বসত নীল আকাশের মাঝে। তার এ পাড়েতে ভারত মাতা -ও পাড়েতে ভূটান।ঝালংএর মন মর্জি ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। মেঘ পিওনের চিঠির প্রাপ্তি স্বীকারের ওপর। মনে মেঘ হলে বৃষ্টি আসবেই।সেই মেঘ কে বৃষ্টি ধারায় আনতে মিলবে পাহাড়ের মিষ্টি মেয়ের হাতের তৈরী ধোঁয়া ওঠা মোমো -চা -কফি। সাথে রৌদ্র -ছায়ার খেলা। ঝালং ঘিরেছে সবুজ গাছ -পাহাড় -নদী -ফুল -পাখি। 
চলতে পথে মিলল দেখা ভারতবর্ষের উত্তরবঙ্গের শেষ গ্রাম। নামটি তাঁর বিন্দু। পূর্ণচ্ছেদ -বিন্দু। প্রকৃতির কোনো পূর্ণচ্ছেদ নেই -তার ব্যাপ্তি অতল -অসীম। বিন্দু নামটি সাহিত্যের বিন্দুবাসিনীর কথা মনে পড়ায়। পাহাড় ঘেরা সাজে বিন্দু নীল আকাশের মাঝে। বিন্দু পরম স্নেহের বন্ধনে সেতু বন্ধন করেছে ভুটানের সাথে। তাঁদের আতিথেয়তা দিচ্ছে আমাদের দেশের অতন্দ্র প্রহরী সৈনিক।
এখানেই জলঢাকা বিদ্যুৎ প্রকল্প।  হৃষ্টপুষ্ট সারমেয়র দল চলেছে সাথে। ছবি তুলতে পারদর্শী কিন্তূ রেগে গেলে ভয়ংকর।
সৌন্দর্য চোখে -মুখে নিয়ে ফেরা। বিদায় জানাতে আবার ঝালং -পাহাড় -নদী -পাইন হাজির। আবার এস ফিরে। ভালো থেকো -প্রকৃতি বাঁচিয়ে রেখো। ফেরার পথে অন্য  পথের খোঁজ পেড়েছে বক্সা -জয়ন্তী রা। ----

Wednesday 17 May 2017

অধরা মাধুরী 
দ্বিতীয় পর্ব
#মৌসুমী রায় 

উত্তরবঙ্গের নেওরা নদীর তীরবর্তী এই লাটাগুড়ি। নেওরা নদী আর তার আশেপাশে বসতি -গাছগাছালি প্রকৃতিরে সাজায়ে তুলেছে।আদিবাসী মানুষজনের আনাগোনা -তাদের অল্পসল্প শাকসবজি নিয়ে বসানো হাট -সেখানে কেনাবেচা চলছে। মেয়েরা হাঁড়িয়া নিয়ে বসেছে-সেখানে কিছু পুরুষের আনাগোনা। রাস্তার দুই পাশে যতদূর চোখ যায় শুধুই চাবাগান আর চাবাগান -সবুজে চোখ ধাঁধায় -চোখ আরাম পায়।   চাগাছের মাঝে মাঝে নামকরণ করা বড়ো বৃক্ষ -সেই বৃক্ষ কে আলিঙ্গন কোরে আছে গোলমরিচের গাছ।প্রকৃতির সহাবস্থান মন কে থামিয়ে ভাবতে শেখায় -তোমরা মানুষেরা এভাবে বাঁচো -দেখো ভালো থাকবে।  
গাছেগাছে নানান ফুলফুটেছে -এদের আকৃতি প্রকৃতি দক্ষিণবঙ্গের ফুলের তুলনায় বেশ পুষ্টি লাভ করেছে। রাতের বেলা এদের সৌন্দর্য দিনের আলোর মতো উজ্জ্বল।রাতের জঙ্গল যেন সৌন্দর্যের মধ্যে ভয়ংকর সুন্দরী খেতাব আদায় করে নিয়েছে।  উপভোগ করতে করতে  গা  ছমছম অনুভূতি। সাথে বুনো মিষ্টি গাছের গন্ধ মন মাতাল। গ্রাম্য ভাব আবার তার সাথে মানুষজন এতো মিষ্টি যে তাদের ভাষাতেও সেটা নজর কারে। 
নদীটির নাম মূর্তি -সে তার রূপের পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছে। ঝিরিঝিরি বইছে বারোমাস। তারজন্য সে আজ চারানা কাল চারানা দাবি করেনা। বলে যেন এস কাছে একটু হাতে -পায়ে জল নাও স্নিগ্ধ হও। এখানে বৃষ্টিপড়ে বারোমাস -গাছগুলো ছায়া দেয় -আগল দেয় মা -বাবার ভালোবাসার মত। বৃষ্টির জল মাটির বুকের মাঝে বন্দি।
মেঘথেকে পড়ে মৃত্তিকাতে মেশে। ধরণী সবুজেসবুজ বনানী বিথীকায়।মূর্তিনদির যাত্রাপথে ময়ূর -ময়ূরী -বন মোরগ -রংবেরংয়ের পাখির সাথে দেখা। কখনো হরিণ -হঠাৎ তার ছুটে যাওয়া -সবই পলক এর মাঝে। 
কত যে নদী -আর নদী -যেন প্রকৃতির গলায় রূপালী গলাবন্ধ এঁকেছে।   পাহাড়ের গায়ে পড়িয়েছে যে কণ্ঠহার সে জলঢাকা ।পাহাড় -নদী -গাছ -ফুল -পাখি নিয়ে এগিয়ে চলেছে পথ দেখিয়ে জলঢাকা। নতুন পথের সন্ধানে। ------

Tuesday 16 May 2017

অধরা মাধুরী 
প্রথম পর্ব 
#মৌসুমী রায়

সকাল সকাল অন্য বেলা অবেলার মতো আজ বেলাটা নয়। একটু অন্য রকম -আজ মৌ এর ব্যস্ততম দিন। সময়ের মধ্যে সব কাজকম্ম গুছিয়ে ফেলতে হবে। রাত দশটায় কোলকাতা রেল গন্তব্য থেকে রেলগাড়িতে ওঠা। উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের উদ্দেশ্যে রওনা। আনন্দে মন আহ্লাদে আটখানা। অনেক জায়গায় ঘোরা ঘুরি হয়েছে- ডুয়ার্স এই প্রথম। কাগজ -পত্রপত্রিকায় পড়া আর স্বচক্ষে দেখা অনেক তফাৎ। আনন্দধারা ভুবন ব্যাপিয়া মনন ছাপিয়া জীবন এর প্রথম পাহাড় -নদী -জঙ্গল মহা মিলনক্ষেত্র। 
নতুন মাল রেল গন্তব্যে পৌঁছনোর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত যাত্রাপথে যে কি সৌন্দর্য বোধকরি রেলগাড়িতে না চড়লে উপভোগ করা যেতনা।সবুজে সবুজ বনানী প্রান্তর -সবুজের তোরণ রচনা করেছে আহ্বান করার জন্য। পাখিদের কলকাকলি শঙ্খ ধ্বনি মনে হচ্ছে। চারিদিকে চাবাগিচা সবুজ আঁচল পেতে রেখেছে মায়ের মত। মন উদাস করা সবুজ নানান গাছের গন্ধ -উফ কী মাদকতা।  যা শুধু নিজের ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য -মনের ছবিতে এঁকে রাখা। চোখ বন্ধকরে সুগন্ধ নাও -অনুভব করো। বলতে পারি প্রকৃতি তুমি কত সুন্দর। 
যেতেযেতে পথ দিতে চায় -নিতে চায় না কিছু। তাঁর রূপ -রস -গন্ধ বনের পথের মনের সঙ্গী। হঠাৎ ময়ূর তার পেখম নিয়ে দুলকি চালে রাস্তা ঝাড়ু দিতেদিতে যাচ্ছে। গাড়ির শব্দে দ্রুত বনের মধ্যে। রঙ্গীন প্রজাপতির দল উড়ে এসে গায়ে পাখনা ছুঁয়ে দিয়ে গেল। যাত্রা পথে ঝিঁঝিঁ পোকার মিলিত সুরবন্দনা -ছন্দ। কখন লাটাগুড়ি আবাস এ পৌঁছে দিল বোঝা গেল না। সারাদিনের ক্লান্তি আমার করলো রমণীয় চলার পথের সাথীরা।---- 


Saturday 6 May 2017

আমাদের অঙ্গনে 

শিপ্রা নদীর ধারে বসত ও গো চির উজ্জয়িনী -
কালের ধারক -বাহক সিংহস্থ মহাকুম্ভ ,
বৈশাখ সূর্য -মেঘ রাশি স্থাপন -চন্দ্র তুলায় বসি -
তুঙ্গে বৃহস্পতি -সিংহে স্নাত দ্বাদশ দম্ভ। 

তব পরিচয়তে ধ্রুপদ -পালি ভাষা সংস্কৃতে -
সমৃদ্ধ চালে -চলনে কালিদাস মেঘদূতে ,
সেথায় নগর নটীর বসন মেখলায়  মেঘ -
পরশ আনে দাবদাহের পরে স্নিগ্ধ বৃষ্টি বিন্দুতে।

মৃচ্ছকটিকম নাগরী উজ্জয়িনী বসন্তসেনা -
প্রেমে প্রেমে ঢালো ধারা মর্দনিকায় বিভোর ,
বেদ শ্রেষ্ঠ ঋক কালিদাসের অপ্সরা -ঊর্বশী -
বাস্তব ইতিহাসে নেড়েছে কড়া বিরহ মেদুর। 

শক্ত হাতে ভার শাসন দিশায় বিদিশার -
অশোক -দেবী সূত্রে গেঁথেদিলো সংঘমিত্রায় মাহেন্দ্রক্ষণ ,
মহাভারত -রামায়ণ -বিক্রমাদিত্য বেতাল কাহিনী -
মধুময় নীতিশিক্ষায় মুগ্ধতায় ইতিহাস দন্ডায়মান। 








Saturday 22 April 2017

ইচ্ছেমন 

দৌড়ে মন আকাশ তলে একা -ইচ্ছে হঠাৎ বাতাস বয়ে দিল দেখা ,
ব্যাকুল পথে নয়ন --
সাধপূরণে মন আশা -ইচ্ছে পথিক দিশায় দিশা, 
উদাস হৃদয় শিথিল বাঁধন।

কল্পণা মন সূয্যি তারা -ইচ্ছে শ্রমণ  মাধুকরী  ,
বাসনা জ্যোৎস্না মাখা চন্দ্রকলা --
ভাবনা মন ফুল পাখি -উছল  ইচ্ছে দু আঁখি ,
খুশির নদী গলার মালা।

ভারী মন পাহাড় সম -কৈলাসে চিন্তা মগন দেবী ,
নন্দনে পুষ্প চয়ন মন কাছাকাছি -- 
সুখে -দুঃখে মন পাগল -ঝুমকো হয়ে ইচ্ছে দোল ,
আনন্দ মন হিল্লোলে ধুলোয় লুটি।

প্রফুল্ল মন মুক্ত দ্বারে -ইচ্ছে মাতন হৃদয় পুরে , 
বইছে কুলুকুলু অন্তঃপুরে মন তরণী --
ব্যস্ত মন শান্ত হলে -ফিরলে তুমি অঝোরধারে ,
ভাসালে ইচ্ছে মনের উঠোনখানি।   

শ্রান্ত মন অস্থিরতায় -ইচ্ছে নাইবা এলো আলিঙ্গনে ,
জিরিয়ে নেবে কিগো এই ঘরে --
ভালো মন সবই বোঝে -ইচ্ছে অন্ধকারে ঊষা আনে ,
পথের শেষে মনের ইচ্ছে বাঁধবে বাসা অন্তরে।

ইচ্ছে আশায় আশায় বসে -মন সঙ্গী তখন আসন পাতে
দাবদাহের অবসানে ব্যাকুল প্রাণ ---
ইচ্ছে শূন্য হাতে ফেরে -তুমি পূর্ণ করলে তারে ,
অঝোর ঝোরে বৃষ্টি এলে প্রাণে মনে ।




Thursday 9 March 2017

গানে আমার রবীন্দ্রনাথ 
শুভম পর্ব 
"তোমায় খোঁজা শেষ হবে না মোর "-- । খোঁজার -চেনার পথের , পথিক আমি.।তোমার "শেষ নাহি যে শেষ কথা কে বলবে "--
তোমার গানে আমার নারী -নাড়ি হতে না নড়ি- । সেই ছোট্ট বেলা --রবি খড়ি করিয়ে ছিলেন আমার ঠাকুরদাদা  ।  কৃতজ্ঞ ,বাবা মা  -কাকা -সঙ্গী সাথীর প্রতি । পরের  প্রজন্ম  আগ্রহী তোমার গানে  ,কথায় ,   গল্পে  ।ও হে আমার প্রজন্মের পর প্রজন্মের বন্ধু।  সঙ্গীত গুরুমা" শ্রীমতি অঞ্জলি দে" তার ভালোবাসা এবং শেখানো প্রতিনিয়ত তাঁর গান -কথা সমৃদ্ধ করে। ফেরার পথে পিছন পানে চায় যে মন বারে বারে ।এত সম্ভার তাঁর ; শুধু গীতবিতান পড়ে উপলব্ধি করতে কত কাল যে কেটে যাবে তার ইয়ত্তা নেই ।স্বল্প জানায় তোমার তল পায় না ।তবুও তোমার উপমা তুমি রবি ঠাকুর ।তুমি রবি ,তুমি ইন্দ্র ,তুমিই ঠাকুর ।যে ঠাকুর কে সহজে স্পর্শ করা যায় ।

"তুমি ডাক দিয়েছ কোন সকালে কেও তা জানে না "--প্রথম ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রনে কিনতু আজ সর্বক্ষণ তোমার ডাক শুনি। মায়ের মত  ,ওঠরে -পড় রে -খেয়েনেরে -স্নানকররে --তুমিও তাই । তোমার সাথে নাড়ির বন্ধন। খুঁজে পাই সর্বত্র-- ।দেখদেখি এ যে তোমায় গীতা -উপনিষদ সকল স্থানে খোঁজ পেরেছে। সাড়া তুমি দিয়েছো  ।তাই গীতা ও গীতবিতান আজ একাকার। আলাদা গীতার প্রয়োজন নেই। "যদা যদা হি ধর্ম্যস্য গ্লানির্ভবতি ভারত। অভ্যূথানমধর্মস্য তদাত্মানাং সৃজাম্যহম "--- ।ধর্মের হানি ঘটলে তাঁর উপস্থিতি। এ ধর্ম মানব ধর্ম। তিনি রাজা --চির নতুনের সুর লেগেছে -- ।কচি পাতার অকারণ চঞ্চলতা তোমার গানের টানে।" শ্রদ্ধা বান লভতে জ্ঞানাং তৎপর সংযতেন্দ্রিয় --ভাল লব্ধা পরাং শান্তিমোচিরেনধিগচ্ছতি। "জ্ঞান লাভ করলে সম্মান পাওয়া এবং  প্রদান উভয়ের সূত্রধর  তুমি  ।তোমার গান। মনোনিবেশ করলে বুদ্ধিনিবেশ ঘটে  ।তোমার গান সেই পথ দেখায়। গানের চলন এমনধারায় বয়ে যায় -যেন বহমান নদী -এঁকে বেঁকে চলেছে ; সাগরে মিশবে । একাকার হতে সেথায় ; বিভেদ নেই  ।সে মিলনক্ষেত্র। "এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে "-- । সর্ব ধর্ম সম্মেলনের মানব বন্ধন ।রবি ঠাকুরের গান -গল্প -কবিতা উপন্যাস । বন্ধনের অটুট বাঁধন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।

রবীন্দ্রসঙ্গীত সর্বকালীন আধুনিক -এর চেয়ে আধুনিক হতে পারে না। থাকলে তা প্রমান সাপেক্ষ --তিনি প্রাণের আরাম -শান্তির নীড়। দিবে আর নিবে --মিলাবে আবার  মিলিবে। 
 অন্ধকার হতে আলোর খোঁজে উপনিষদ    ।তেমন তাঁর বাণী -সুর শুধুই এগিয়ে চলা - ।পিছিয়ে পড়া হল মিছে আশা। "অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো সেইতো তোমার আলো "-- ।সেইতো তোমার  আমার ,সবার ভাল ।এত সহজ করে তাঁরই বলা।তাঁর গান অহংকারী কে নিরহংকারী -অজ্ঞান  কে জ্ঞানের আলো দেয়।অসৎ কে সৎ এর পথ দেখায়। তাঁর গানে না চাইলে যারে পাওয়াযায়।  স্বধর্মে থাক অন্য কে বাঁচাও ; বাঁচো  ,বাঁচতে দাও। এই সনাতন ধর্ম তাঁর গানে গানে পাঠানো বারতা। মনের পুষ্টি  ,দেহের পুষ্টি ্‌চেতনায় আনে  সমাধান ।

"তোমায় দিতে পূজার ডালি বেড়িয়ে পড়ে সকল কালি "-- নিরহংকার হও ,অভিমানের ওপরে সম্মান এর স্থান রাখ  ।গীতা বলে , যে দানে অহং মিশ্রন  ,সে  দান  কোন শুভ কর্মে লাগেনা। তাঁর গান সেই কথায় বলে। জাগো ওঠ কাজ করো -ঘুমিয়ে থেকোনা -ভাগ্যের দোষ দিও না। তৈরি থাকো সুযোগ এলেই স্থান পাবে। "বিশ্ব যখন নিদ্রা মগ্ন গগন অন্ধকার --কে দেয় আমার বীণার তারে এমন ঝংকার --" শুধুই আলো- আলো । বলে ,দুঃখে না ভেঙে পড়তে। হে ঈশ্বর "পিতা বলে প্রণাম করি "-- ।তাঁর গানে ঈশ্বর আমার কাছের ।তাঁকে পেতে বাহ্যিক বাতুলতা ,দেখনদারি আয়োজনের প্রয়োজন নেই। মনের আয়োজন ই সব। পূর্বেও বলেছি ,আবারও বলছি সমস্তটাই ব্যক্তি নির্ভর ।কারো ওপর কিছু চাপানোর বিন্দু মাত্র চেষ্টা নয় । উপলব্ধির বিশ্লেষণ মাত্র ।ইচ্ছে হোল  ,তাই ভাল লাগার জমির  ফসল ।

"হবে হবে প্রভাত হবে আঁধার যাবে কেটে -তোমার বাণী সোনারধারা পড়বে আকাশ ফেটে "--বেদ -বেদান্ত - গীতা -উপনিষদ ,সর্ব ধর্ম সম্মেলন  তাঁর গান । বাণী ও সুর স্মৃতি শক্তি বাড়ায় । ভাষা সমৃদ্ধ করে । সবই এই গীতবিতান। ধূলিকণার কোটি কোটি  ভাগের একভাগ যদি জানি ; তবে তুমি নও চির অচেনা পরদেশী ।তুমি "গরব মম হরেছ প্রভু " ।বিপদে  রক্ষাকর  তুমি ।আঁধারে নীরব ব্যাথা দিয়েছ ঢাকি ।  আমার ঠাকুমার ঝুলি --ব্যাঙ্গমা -ব্যাঙ্গমী -সাতসাগর তেরোনদীর পারে রাজকুমারের ঘোড়ায় চড়া । রাজকুমারী  কে খুঁজে আনার গল্প কথা --- ।  কল্পনার আধার  রবি ঠাকুর ।" জল পড়ে  ,পাতা নড়ে " --গায়ত্রী ছন্দ তুমি । তুমি ভাবনার জাল বোনার  সাথী  ।তুমি আমার  "কাল ছিল ডাল খালি -আজ ফুলে যায় ভরে -বলদেখি তু্ই মালী হয় সে কেমন করে "- । ভরা ফুলের রঙিন সাজি তে উপচে পড়া সীমাহীন  সুবাস  তুমি । পাখীর মিষ্টি কুজন  তুমি ।----মউসুমি 

Wednesday 8 March 2017

গানে আমার রবীন্দ্রনাথ 
চতুর্থ পর্ব 
"অর্ঘ্য তোমার আনিনি ভরিয়া বাহির হতে --ভেসে আসে পূজা আপন স্রোতে "--সবই আমার অন্তরের- বাইরের কিছু কেনা নয়। কথা ও সুর এর মেলবন্ধন তোমায় হেরি ঈশ্বর রূপে -ভালোবাসার মানুষ রূপে -যার মাঝে খাদ নেই -নেই কোনো তোষামোদ।
 রবীন্দ্রসঙ্গীত এমন ভাবে পরিবেশিত যে সঙ্গীত গায়ন কালে কোন শব্দ একাকী ; আবার কোন শব্দ যুক্ত ভাবে সুর দিয়ে গাইতে হবে। কোনটি ও কারান্ত -কোনটি হসন্ত -আবার কোনটি মীড়  দিতে হবে -তো আবার দ্বিতীয় বার কোনটি ছেড়ে ফিরে আস্তে হবে বারে বারে যুগ্ম দাঁড়িতে। এই স্বরলিপি বন্ধন অপূর্ব --অপূর্ব সুন্দর । তাঁর নতুন দাদা ,জ্যোতি দাদা। তাঁর গানের জ্ঞান কে মঞ্চ করেছেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর  ।রবীন্দ্রনাথ ভবিষ্যত দ্রষ্টা তাই তিনি তাঁর সঙ্গীত কে এমন আষ্টেপৃষ্টে বেঁধেছেন। কিন্তূ ভাবনা আর মনের মাধুরীর স্বাধীনতা দিয়েছেন।

কোনো চিত্র বিচিত্র করোনা ; তোমরা-তার জন্য নিজে গান বাঁধ।  রবীন্দ্রসঙ্গীত এ তাল -ছন্দ -মাত্রার চলন তাঁর সুতোয় বাঁধা।তাঁর প্রবর্তিত তাল ঝম্পক -ষষ্ঠী -রূপক রা -নবতাল -একাদশী -নবপঞ্চতল -অর্ধঝাঁপ -চতুর্মাত্রাতাল।  সঙ্গীতের বিভিন্ন তাল রপ্ত করে তিনি তাল প্রবর্তন করেন। তাঁর গান পরিবেশনে লিপিবদ্ধ তাল -সুর -কথা কি আনন্দ দেয় তা বোঝানো সম্ভব নয়  ।নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে "তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে যতদূরে আমি ধায় "-- ।ভক্তি ,শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস এ ভর করে বিচরণ ।যেন "পাহাড় চূড়া সাজে ,নীল আকাশের মাঝে --বরফ ভেঙ্গে ডিঙিয়ে যাওয়া ,কেও তো পারে না যে "।
কণ্ঠস্বর ,স্বর বোধ ,স্বরলিপি ,কথায় সুর প্রয়োগে শ্রুতি  মাধুর্য , উচ্চারণ ,তাল ,লয় ,নিস্বাস-প্রস্বাস এবং সংযম ।সঙ্গীতের কাঠামো ধরে রাখে ।কিন্তু ঘটক ?  পরিবেশন করবেন যিনি তাঁর ভালবাসা ,ভাললাগা থেকে ।
যখন মন ভারাক্রান্ত "আবার এরা ঘিরেছে মোর মন -আবার চোখে নামে আবরণ "-- ।নানান লোকে নানান কথা বলে -কথার জালে জড়িয়ে ফেলে -তখন তিনিই আমার আশ্রয়  ।আমায় যেন বলেন "যদি এ আমার হৃদয় দুয়ার বন্ধ রহে গো কভু "- ।দ্বার ভেঙে এস তুমি ফিরে যেও না ।
হৃদয় দুমড়ে মুচড়ে নিংড়িয়ে যখন ; কষ্টে আক্ষেপ করি  ,তুমিও আমায় বোলো "যে রাতে মোর দুয়ার গুলি ভাঙলো ঝরে -জানি নাই তো তুমি এলে আমার ঘরে"-- ।আবার বলো অনেক হয়েছে এবার ওঠতো দেখি কাজ করো ।"আমার এ ঘর বহু যতন কোরে ধুতে হবে মুছতে হবে মোরে "--।সুখের আসার সময় হয়েছে। সুখ উদযাপন করো ।
তিনি নিজেই বলতেন গান বাঁধতে তার বেশি ভালো লাগে  ।মনের আনন্দ -আরাম -শান্তি পেতেন। তিনি আমাদের কথা উপলব্ধি করেছেন ।তিনি মানুষ ,ঠাকুর নন । তাই এই উপলব্ধি আমাদের প্রতিদিনের  গানে সমৃদ্ধ। মা ডাকে যে তৃপ্তি সেই তৃপ্তি তোমার গানে রবি ঠাকুর --"শিশু যেমন মা কে নামের নেশায় ডাকে "-- ।তেমনি তুমি -তোমার গান।

গানের খোঁচ -মোচড় যত্নে ছুঁয়ে যাই মন -তাই "অল্প লইয়া থাকি তাই মোর যাহা যায় তাহা যায় "-- ।তোমার প্রেমে বাঁধা গান আমার পূজার অঞ্জলি । পূজায় বাঁধা গান সেবা ,। এ তো হবার কথা -প্রেম এলে তবেই পূজা। "তোমারেই করিয়াছি জীবনেরই ধ্রুবতারা "-- ।বিষাদ -অবহেলা -ঘৃণা জয় করে থাকি তোমার গানে ।তোমার গানে আমার মান পায় ।তাই গাই যে আমি "বিষাদে হয়ে ম্রিয়মান বন্ধ না করিও এ গান "--- ।উপলব্ধি হয়ত ব্যক্তি নির্ভর ।কারো কাছে বাতুলতা ,কারো কাছে তুষ্ট করা । আবার মনে হতে পারে ভয়ংকরি ।  ভাবনায় কোন ধমক নেই ।ভাবনায় ভেসে চলা মন তরী ।সে তরী পাল তুলে চলেছে গানের হাওয়ায় ।-----মউসুমি 

Tuesday 7 March 2017

গানে আমার রবীন্দ্রনাথ 
তৃতীয় পর্ব 
রাজার কাছে পৌঁছতে গেলে সাতটি দরজা পার হতে হয় - ।-দেখা পেলেও পেতে পারা যায়। ভাগ্যের উপর নির্ভর। শক্ত হলেও অবাস্তব নয় -- ।কারণ অতিক্রান্তের মধ্য দিয়ে , ঘাত প্রতিঘাত আসলেও মনন সুষমায় , চিত্ত রসনার জ্ঞান নেত্রে অঞ্জন অঙ্কিত হয়।   তার মাধ্যম সঙ্গীত -। সঙ্গীত নামের অঞ্জন দুই চোখে তথা তৃতীয় চোখের বিস্ফোরণ ঘটায় । যে কোন সঙ্গীত গায়ন -শ্রবণের মধ্যে । রবীন্দ্র গান  ,এর মধ্য দিয়ে বলা যায় হে নিঠুর যা করেছ ভালই করেছ ।আমার দীপ -ধূপ জ্বালাতে তুমি আমার আধার। এ না জ্বললে আলো -গন্ধ কোথা হতে আসবে --এর মাধ্যম্যে তোমার উপস্থিতি টের পাই।  এই সুখের মাঝে ,দুখের মাঝে  সাত সাতটি দ্বার পেরিয়ে তোমার দ্বারে এলেম। সকল আমার ফুরায়নি - ।আছে সবই তোমার ওই সঙ্গীতের ঝুলিতে।

রাগরাগিণী -বিদেশী -দেশি সুর গ্রন্থি বেঁধেছে ; গেঁথেছে  গান মোহিনী। ছোঁয়া ছুয়ি খেলার মত সুরের  গ্রহন বর্জন । মাটির পরে ফুটে বলে  ,ফুল ভাবে ;  আমি ধন্য।  কোন ফুলে কোন পূজা তার নির্ধারণ ব্যক্তি নির্ভর ।  তোমার নাগালের মধ্যে -তোমার ইচ্ছে আমার ইচ্ছে  -শুধু পুজোর জন্য নোই- আমি যে , তোমার যা খুশির। বনে কত ফুল ফুটেছে , আর মান -অভিমান করে কাজ নেই ।
  সিদ্ধ রাগরাগিণী -মিশ্রণ সাধারণ কথা ও সুর যত্নে বেঁধেছে বিনোদবেণী। প্রেম -পূজা নিশীথ -নিবিড় -গভীর গোপন হতে উদাসী হাওয়ার পথে পথে -কোথায় বাঁক নেবে তা তোমার মত কেউ তো জানে না। প্রেম পূজা -পূজা প্রেম প্রকৃতি বিভাজন বয়সের স্তরে স্তরে কথা সুরের পরিবর্তন। শৈশব -যৌবন -বার্ধক্য ভিন্ন ফুলের মালিকা।
 কি পাইনি -হিসাব মেলাতে যৌবনে না পাওয়ার এক অঙ্ক  ,তো বার্ধক্যে সব পাওয়ার অঙ্ক । পরশ পাথর খুঁজে পায় স্পর্শ রতন -তাঁর সুর মহাবিহার সৃষ্টির পূর্ণতা। প্রাণায়াম শরীর মন গঠন করলে , রবীন্দ্রসংগীত মানুষ গড়ার কারিগর। তাঁর গান আমার মুক্তি আলোয় আলোয় -ঘাসে ঘাসে। জীবনী শক্তি ধর্ম , কুলীন  বর্মের বেড়াজালে আটকে থাকেনা । গানের রবি কিরণ সীমার মাঝে  অসীম ।
রবীন্দ্রসংগীত এর বিষয় বিন্যাস মনের সম্ভাবনা কে মানসসন্তানের জন্ম দেয়। আনে তৃপ্তি -পরবর্তী দিনগুলিকে সুগম -মসৃন করে। তাঁর সঙ্গীতের পর্ব ভাবনার পথ কে উন্মুক্ত করে -আনে বিস্তার। শুভ বুদ্ধির উদ্ভাবনী শক্তি ।

পূজা পর্যায়ে আনে গান -বন্ধু -প্রার্থনা -বিরহ -সাধনা ও সংকল্প -দুঃখ -আশ্বাস -অন্তরমুখে -আত্মবোধন -জাগরণ নিঃসংশয় -সাধক -উৎসব -আনন্দ -বিশ্ব -বিবিধ -সুন্দর -বাউল -পথ -শেষ পরিণয়।  স্বদেশ -প্রেম পর্যায়ে গান -প্রেম বৈচিত্র -প্রকৃতি পর্যায় সাধারণ -গ্রীষ্ম -বর্ষা -শরৎ -হেমন্ত -শীত -বসন্ত।বিচিত্র পর্যায় -আনুষ্ঠানিক -পরিশিষ্ট।
 ভান্ডার পূর্ণ -আর আছে অমৃত ; সেটি ব্রহ্মসংগীত।  সে ঋদ্ধি -সিদ্ধি --আকার নিরাকার -তিনি আমার হাত বাড়ালেই বন্ধু।" ওম " উচ্চারণ -- এঁটো নয় ,সে আঁট ওঁ । ব্রহ্ম সঙ্গীত রবি ঠাকুরের  যা কিনা অমৃতের সাগরে ডুব দিয়ে অমৃত পানে অমরত্ব আনে । "নিবিড় ঘন আঁধারে  জ্বলিছে ধ্রুব তারা -মনরে মোর পাথারে হোসনে দিশে হারা "--"নম্র হৃদয়ে নয়নের জলে দাঁড়াব তোমার সম্মুখে "-- ।ঝড়ে দুয়ার ভাঙতে না দেওয়ার গান গুলি আমার রবি ঠাকুরের গান। সুখের তুমি  ,দুঃখের তুমি , আমার আলোআঁধারের আশ্রয়। বিজন ঘরের নিশীথ রাতে আসবে তুমি আমার একলা ঘরে -মনের আসন পাতা ওগো তোমার তরে ---ঝড়ের রাতে -পূর্ণিমাতে তুমি আমার। শুধু মতামত নয় ,হৃদয় দিয়ে অনুভব এ মনে আসে " বাণী তব ধায় অনন্ত গগনে "-------মউসুমি ।  

Monday 27 February 2017

গানে আমার রবীন্দ্রনাথ 
দ্বিতীয় পর্ব 
পূজা -প্রেমের সুন্দরতার সামঞ্জ্যস্য তথা ঈশ্বর -মানব প্রেমের মিলন ক্ষেত্র। প্রকৃতির সৌন্দর্য কে আবাহন -এযে মনের উৎকর্ষ প্রদান -যার মাঝে জ্যোতি বিচ্ছুরণ। তার গান শেখায় "গরব মম হরেছ প্রভু দিয়েছ বহু লাজ "--অহংকার সেথা নয় যে মনুষ্যত্বের আধার। তার গানে অসহায় এর সহায় হতে "ঝরা পাতা গো আমি তোমারি দলে "--.প্রেম পূজা একাকার ভালোবাসার মোড়কে। অতিথি বাৎসল্য "হায় অতিথি ,এখনই কি হল তোমার যাবার  বেলা --"হৃদয় আসন পেতে রেখেছি যেও না- না হয় থাক কিছু কাল। অতিথি দেব ভব।
পূজা যখন প্রেম এ-আমার প্রেম কখন যে পূজায় আসে কেও জানতেও পারেনা -কখনো ঈশ্বর কে বলে তোমায় ভক্তের কাছে আসতে হবে নইলে তোমার যে পরিপূর্ণতা আসবে না। আবার বলে হে ঈশ্বরতোমার  "দয়া দিয়ে হবে গো মোর জীবন ধুতে "--.তোমার দয়া -আমার সেবা দুইয়ের মিলন ঘটাবে আমার চিত্ত হতে মনের শুদ্ধিকরণ।
গানে গানে তোমায় রাখব -বেঁধে থাকব সদা আনন্দে। তার গান শেখায় ধৈর্য -স্থিতধী হতে -- ।তিনি চিনসাগর অতিক্রম কালে উত্তাল সাগরে বিচলিত নন -জানেন কি ভাবে সত্য কে সহজে গ্রহণ করা যায় । তিনি যে কিভাবে মন কে বলেছেন তা ভাবলে শিহরণ জাগে "ভুবন জোড়া আসন খানি আমার হৃদয় মাঝে দিক সে আনি "--মহামানব বলেই তার ভাবনা। মৃত্যু যে হাতছানি দিচ্ছে তিনি সেথায় শান্ত। তাঁর গানের এষণা জ্ঞানের ভান্ডার। উছলে পরে রাখতে চাই যে মনের ঘরে। গান গেয়ে দ্বার খোলানোর দর্শন তাঁর --চাইনা আয়োজন  বাহুল্য -বাতুলতার । গানে গানেই  মুক্তি -শক্তি -ভক্তি।বানী ও সুরের গাঁথা মালায়  ,বন্ধন -মলিনতা সকল সরে যাবে ।তবেই হবে তোমার -আমার স্বর্গ সাধন ।
সকল মাঝে তোমায় দেখি ।এ বিশ্বে হারায় না তো কিছু । মাতৃভূমি কোল এ দোল খেয়ে আকর আস্বাদন তার গানের পরশে ।সার্থক জন্ম মা গো জন্ম যখন রবি ঠাকুরের গানের দেশে -সুরের রণনে - বানী মদিরার  আবেশে । ঘুঁটের ছাই থেকে ও খুঁজতেন  ,আবার বহুমূল্য রতন থেকেও খুঁজতেন ।তাঁর গান হৃদয় স্পন্দনে স্পন্দিত । গানে গানে অমৃতের সাগরে আমি যাবই -আবার কৈশোরে যে সলাজ কানাকানি -এর মধ্যে লুকোছাপা  ।,কখন কে বসিলে হৃদয় আসনে , দেবতার আবাহন ।আরও কতকি ,ভাবলে শিহরণ জাগে ।

  যা পেতেন সেটা নিংড়ে নিতেন  --লালন গীতি -কীর্ত্তন -আউল -বাউল সব তার গানের ঘরে। মানুষ - মানুষই তার দর্শন -এদের গান তার মনের খোরাক  । এদের গানে পোশাকের বাহার নেই কিনতু   মনের বাগানে রঙ্গীন ফুলের সমাহার।  .সর্বং সহা -চরম দুঃখে মোক্ষ লাভ। মনের তরী ভাসিয়ে দিয়ে -পার হবে যে অথৈ জল।লোকগান থেকে তার রাগ - রাগিনী আবহ বিস্তার , গানে গানে উত্তরণ ঘটায়। রাগের মিশ্রণ যে আকাশ -আলোক-তনু -মন ধুয়ে দেয় -আনে স্বচ্ছতার বৈতরণী। গানে রাগ এর চলন আছে কিন্তু কঠোরতা নেই ।তোমার সুর আমার সুর হয়ে ওঠে । কত  কত গান তাঁকে মনের আনন্দ জুগিয়ে আমাদের সমৃদ্ধের ভান্ডার উৎকর্ষে  আভরণ এ পূর্ণ করে । বিভিন্ন পর্যায় তাঁর গানের ঝুলি মনোমুগদ্ধতায় ভরে ধারে আবার ভারে ----- । প্রেম -পূজা -গ্রীষ্ম -বর্ষা -শরৎ -হেমন্ত-শীত  বসন্ত -বিচিত্র -আনুষ্ট্ঠানিক -ভগ্নহৃদয় -স্বদেশ -নাটকের গান ---এমন করে কেও তো ভাবেনি ।ফুল -ফল -পল্লব  -দূর্বা -বিল্ব পত্র সমাহার এই গান ।সহজ সরল সঙ্গীত হলেও যত্ন করে পরবেশন এর প্রয়োজন ।----মউসুমি ।