Sunday 28 May 2017

বড়মা 
সমাপ্তি 
ছোট নাতনির বিয়ে তে শারীরিক ক্ষমতা একদম পড়তির দিকে। কিন্তু মনের শক্তি বিপুল -বিশাল।এ বিয়ে বুঝি  , অন্য নাতি -নাতনির বিয়ে ব্যবস্থাপনা থেকে একটু আলাদা। ভিয়েন তো প্রতিটি অনুষ্ঠানে ই হয়ে থাকে। একটা মজার কথা বোলে রাখা ভাল । ছোট নাতনির বিয়েতে মিষ্টি সবাই পাচ্ছে ,কিন্তু তাঁর পুত্র কে কেও একটাও দিচ্ছে না ।বৃদ্ধ ছেলের জন্য লুকিয়ে কয়েকটা এনে বলেন এগুনো তাড়াতাড়ি খেয়ে নে ।ছেলেও তেমনি ।বলামাত্র উদরপূর্তি । মা - ছেলে চুপচাপ ।যেন কিছুই হইনি ।তাঁর ছেলের মিষ্টি খাওয়া নিষেধ ।তাঁর মধুমেহ হয়েছে ।কিন্তু মায়ের মন সবাই খাবে ,তাঁর ছেলে খাবে না ।এ হেন অন্যায় তিনি বরদাস্ত করবেন না । মা এবং ছেলের মধুর সম্পর্কের অটুট বন্ধন ।

 এবার একটু ইয়ে, মানে বাড়িতে কথা হচ্ছে আলো জ্বলবে। সেতো হ্যাজাকের আলো জ্বলে। এবার নাকি নাইট জ্বলবে। তিনি লাইট কে নাইট বলতেন। সমস্ত ল তাঁর ন। নাতিনাতনীর ছেলেমেয়েরা বলত বড়মা আবার বল নাইট। তিনি হাসতেন। হ্যাঁ তাঁর উত্তেজনা মাত্রা একটু হলেও বেশি , জীবনের পড়ন্ত বেলায়। নাইট মানে কী ?সে বড় নাতির বাসাতে দেখেছে।কিন্তু গাঁয়ের বসতবাড়ীতে সেকি সম্ভব?   বাড়ির বউদের রঙ্গীন কাপড় নিয়ে প্রবেশ দ্বার তৈরী হল। তার সাথে যুক্ত হল কলা গাছের থোড়ের মত দেখতে সাদা সাদা কিযেন একটা।গাঁয়ের সবাই এসে বলছে "ভাঁড়ল কেনে গো দোরে "----সন্ধ্যে নামল-- সেই থোড়ের মতো আলো জ্বলে উঠলো। আনন্দে করতালি বেজে উঠল। গাঁয়ে এই প্রথম এভাবে আলো জ্বলল তাও আবার লম্বা লম্বা সাদা সাদা। কলা গাছের থোড় কে ভাঁড়ল বলা হয় ।  বিবাহ সম্পন্ন হলো সুষ্ঠু ভাবে।

আস্তেআস্তে তাঁর স্বাস্থ্য ভাঙতে শুরুকরল। ডাক্তার বদ্যি দেখান হল। তাঁর পুত্রটিও কবিরাজ। তিনি দেখলেন এবং বুঝলেন তাঁর জীবনের রসদ ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু তাঁর তো মা তাই তিনি উদ্বিগ্ন যে অন্য চিকিৎসক যদি জীবন নদী বয়ে চলার ওষুধ দিতে পারে। তাঁরাও একই কথা বললেন। তিনি সম্পূর্ণ ভাবে শয্যা নিলেন। উত্থান শক্তি রহিত। তাঁর যত্নআত্তি করতেন খুব মধ্যম নাতবৌ টি।মায়ের সাথে ছেলেরও স্বাস্থ্য ভাঙতে লাগল। তাঁর কারণ ছেলের ডাক এ রুগী দেখতে হত বেশী।এ হেন পরিশ্রম তাঁর স্বাস্থ্য ভগ্নের কারণ।  খুব তাঁর  নামডাক। তাঁর বাবার থেকেও বেশী। ছেলের সুখ্যাতি মনে হত মায়ের, যেন যে কর্মে তিনি ব্রতী ছিলেন তাঁর চূড়ান্ত ফলাফল পেয়েছেন।

দিনে দিনে ভালোর থেকে মন্দের বাতাস  তাঁর শরীরে বেশি বইছে। চৈত্রের এক দুপুরে এতদিনের বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করলেন তিনি। কিন্তু তাঁর পুত্র মায়ের বন্ধনে জড়িয়ে পড়লেন। মায়ের চলে যাওয়ার দিন তাঁর চোঁখের জলের বাঁধ ভেঙে ছিল। মাঝে মাঝে উচ্চারণ মা --মাগো। তাঁর চলে যাওয়ার দিন গ্রামের লোকজন বলাবলি করতে লাগল "সৎ মা কে বলবে "--"মা , ব্যাটা অন্ত প্রাণ ছিল -ব্যাটাও মা বলতে অজ্ঞান "--বাড়ির ছোট সদস্যরা নিজেদের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলনা। গ্রামের লোকজন কার কথা বলছে আজকের দিনে। কোনদিন এ ব্যাপারে বাড়িতে কোনো কথার উত্থাপন হয়নি। সেই কথাটি গ্রামের মানুষ ভেবে ছিল -ভাবনাটা তাদের। তাই আজও বাড়িতে তিনি বড়মা। 
তিনি চলে যাওয়ার দিন বাড়ির পোষ্য জীবজন্তু র  দস্যি পনা স্তব্ধ হয়েগিয়েছিল। কোনও শব্দ করেনি। বাড়াবাড়ি মনে হলেও এটাই বাস্তব -সত্যি ঘটনা। সেদিনের স্নানাদির সময় পোষা সারমেয়টি বাড়ির সকলের পুকুরে স্নানের পর সেও স্নান সেরে সকল কে সুরক্ষা দিয়ে পিছনপিছন বাড়িতে এসেছিলো। এক কোনে চুপটি করে বসে ছিল। তাঁর স্বামীর চলে যাওয়ার দিন যা হয়েছিল তাঁর পুনরাবৃত্তি ঘটে নি ।সকলেই চোখের জলে বিদায় জানিয়ে ছিল ।প্রসংশায় ভরিয়ে ছিল ।শেষ যাত্রায় তাঁর ছিল সকল কর্মের উচ্চারণ। একমত সবাই । আজও তিনি এই প্রজন্মের দাদুর মা ।
 কে বলে বড়মা আজ প্রভাতে নেই -কে বলে তাঁর উত্তরাধিকার নেই। সব আছে বড়মা -আছে আজও বেঁচে চারপ্রজন্মের সদস্যদের মধ্যে। তোমার কথা এখানেএখনও  বলাবলি হয় গো বড়মা -------- তুমি শুনছ ---------




Friday 26 May 2017

বড়মা 
পর্ব -চার
নব বধু  আদর যত্নে আছে। দুই শাশুড়িমার শাসনেও। নিজের মত থাকে --বকুল ফুল তুলে এনে মালা গাঁথে। পূজার আসনে দেয়। বকুল ফুলের প্রেমে বকুল বিছানো গানটি গুনগুন করে। শাশুড়িমার কথা এবং উচ্চারণ তাঁর কেমন যেন  ঠেকে। মিষ্টি অথচ তাঁর মত নয়। " কে এয়েচে -নুচি -নেবু -নংকা -নোয়া -বৌমা এঁটো রয়েছে নাফিয়ে চল দেখি তো মা। "বেশ মজা লাগে তাঁর। মাঝে মাঝে মা, ছেলে কে লুকিয়ে নারকেল নাড়ু খেতে দিচ্ছে। এভাবেই দিনকাটতে কাটতে বাড়িতে নতুন সদস্যের আগমন। নতুন গোপাল আদরের ধন। মা -বাবা -ঠাকুমা -পিসিঠাকুমা সকলের ভালোবাসায় বাচ্চাটি বিছানায় শোয়ার ফুরসৎ পায়না।গোপালের গায়ের রং শ্যামউজ্জ্বল। সে নিয়ে প্রতিবেশীদের কথা উঠলে পিসিঠাকুমা বলতেন "রাং লয় -পিতল লয় -গোপাল আমাদের শুধুই সোনা ".--- কালো গাই এর দুধ গোপাল কে খাওয়ানো হত। কয়েক বছর পর তাঁর ভাইও এল। পরিবার বড় হতে লাগল।ভাইটির গায়ের রং ধবধবে সাদা। প্রতিবেশী রা ডাকে কালো সোনা আর ধলো সোনা। আরও চার ভাইবোন সংসারের সদস্য। জমজমাট কবরেজবাড়ি। 
ইতিমধ্যে পিসিঠাকুমার বার্দ্ধক্যজনিত কারণে দেহাবসান ঘটে।

 ঠাকুমা বড় নাতবৌ দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বড় নাতি আর কবরেজ হন নি। সরকারি চাকুরীজীবি ছেলে। হবু  নাতবৌ খোঁজা শুরু। সেই সময় ডাকযোগে চিঠি আসত -সে কবে এসে পৌঁছাবে তার দিন ক্ষণ  গুনে বলা যেত না। সে তাঁর মত আসবে। কিন্তু এদিকে যে সবুর সইছেনা। ছেলের বাবা -ছেলের মা কে ভালোবাসা মাখানো স্বরে বলেন "গোপালের মা আজও তো খবর হল না ".--অন্য সময় স্ত্রীর সাথে কথা হয়না। নানা লোকে নানা কথা বলবে। যে যুগে যে চল। 
বড়ছেলের বিয়ে হল ধুমধাম করে। বড় নাতবৌটি তাঁর মনের মতন। যেমনটি চেয়েছিলেন তেমনটি। চোখের আড়াল করতে চাইতেন না। নব বধুটিও ছোটছোট দেবর -ননদের মাঝে খুশিতেই থাকত।বড় নাতির ঘরে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তানের আগমন হল।  নাতিনাতনি দের ঠাকুমা বললেন "মেয়ে হয়েছে বলে নাতবৌ কে কেউ নুকিয়ে চুরিয়ে  কিচ্ছুটি বোলো না ---ও মেয়ে আমাদের ঘরের নক্ষী। "---বাড়িতে ছোট্ট মেয়েটি সকলের প্রিয়। মেয়েটি গ্রামের বাড়িতে গরমে কান্না কাটি করলে বড়মা বলতেন  "আহা ,নাইট -পাখায় জম্ম ; ওর কষ্ট নাগচে ,পাখা কর ।" আরও নাতি পুতির আনাগোনা চলতে লাগল। মেজো নাতি -বড় নাতনির বিয়ে হল ধুমধাম করে। ঠাকুমার তখন বয়স হয়েছে আস্তে আস্তে ক্ষমতা হস্তান্তর ঘটছে। সেই কাজে তাঁর ভীষণ সহযোগিতা। তিনি বলতেন "নেকা পড়া করিনি কোনদিন "---
কিন্তু তাঁর জ্ঞান এর ভান্ডার" তারিফ এ কাবিল" । সময়ের কাছে তিনি ভীষণ দায়বদ্ধ। হ্যাঁ কি যেন বলছিলাম --মেজ নাতির বিয়েতে তাঁর বড় নাতি  বলে ,তাঁর পাত্র ভাই কে,   বরযাত্রীদের রওনা হতে দেরী -দেরী বরেরও --পাত্রীর বাড়ি পৌঁছতে হবে।তখন তো আর চলভাষের চলন ছিলনা।  বড় নাতির কথার এবং সময়ের খেলাপ না পসন্দ ।  ওনারা চিন্তা করবেন তাই "আমি পাত্রীর বাড়ি চললাম --বরকেও যেতে হবেনা বরযাত্রীকেও না "----..ঠাকুমা বড় নাতি কে বলে ; বিয়েটা মেজো নাতির ; তাঁর নয়।  হাসি -মজা -ঠাট্টা --....সকলে এভাবেই আনন্দ করত -----ঠাকুমা তাঁর ছেলের নাতিনাতনিদেরও প্রিয় ছিলেন। তাঁর হাতে ভাঁড়ার ঘর এর কুলুপ।  বাচ্চারা বায়না জুড়ত বড়মা নাড়ু -মুড়কি দাও। কত যে নাড়ু -মুড়কি -নিজের হাতে তৈরি করতেন । চিঁড়ে -মুড়ি -সিঁড়ির নাড়ু । বিরক্ত হতেননা কোনও সময়। কষ্ট সহ্যের মাত্রাও সীমাহীন। অতিথি আপ্যায়ন করতেন ।হাতের তৈরি খাবার  দেওয়া হত । গ্রামে কিছুই পাওয়া  যেত না।
বাড়িতে গাই এর দুধ থেকে সুস্বাদু মিষ্টি তাঁর মত করতেন ।সবাই তাঁর হাতের বানানো খাবার সক্লের প্রিয় ।
 কখনো কখনো বাড়ির বলদজোড়ার তান্ডবে শিং এর গুঁতোতে রক্ত ঝরেছে যন্ত্রনা মুখেচোখে কিন্তু তিনি বিকার হীন ----তাঁর মনের যন্ত্রনা থাকলেও কাকপক্ষীতেও টের পায়নি।বয়সের ভারে শরীর ভেঙেছে।
 মোড়ল দের  ভ্রূকুটি অগ্রাহ্য করে ছেলে তাঁর শখ আহ্লাদ পূরণ করেন । কুলুঙ্গিতে তাঁর থাকত ছোট্টএকটি আরশি আর একটি কাঁকই মানে চিরুনী। ছেলে বড় হওয়ার পর মা কে চুল আঁচড়াতে বলেন। নাতবউ এর প্রসাধন নাতবউ ঠাকুমাকে মাখিয়ে দেয় । বক্তব্য ওই বিধি বিধান পালন করতে হবে না। যা সইবে তাই রইবে।-----
  তাঁর ছোটনাতনীর বিয়ের জন্য ব্যস্ততা। তিনি দেখেযেতে চান।সেই সময় সবে গ্রামে বিদ্যুৎ আসতে শুরু করেছে। -----   

Thursday 25 May 2017

বড়মা 
পর্ব -তিন 
এখন গ্রামের লোকজন সদয় কবরেজ পরিবারের উপর।কিভাবে সন্তান মানুষ করতে হবে। সবার উপরে তাদের দায়িত্ব ওই পঞ্চদশী যার অকালবৈধব্য নেমে এল।  তাঁর জীবন নির্বাহের বিধান দানের ব্যস্ততা- আলোচনা  তুঙ্গে। সেই যুগে ওই বাচ্চা মেয়েটির জীবন অসহনীয় করে তুলেছিল। প্রথমেই তাঁর চুলগুচ্ছ কেটে ফেলাহয়েছিল অনেকটা কদম ফুলের মত তাঁর আকৃতি।  সাদা খান শাড়ি কোন রঙের প্রবেশাধিকার নেই। নির্জলা একাদশীর উপবাস।প্রতিদিন সেদ্ধ পক্ক একবেলা অন্যবেলা খৈ -মুড়ি।
কেন জানিনা অল্প দিনের মধ্যেই মা -ছেলে -পিসিমার মধ্যে সখ্যতা তৈরী হয়েছিল। সমাজের সব নিয়ম কানুন মেনেছিল তাঁর মা ওই ছেলের মুখচেয়ে। মা -ছেলে কখনো বন্ধু তো আবার মা তাঁর অভিভাবক। দুই মহিলা তখন থেকেই শক্ত মনের অধিকারী হলেন। ছেলেকে মানুষ করতে হবে। সম্পত্তি রক্ষা করতে হবে। গাঁয়ে বলাবলি করতে লাগল নানান কথা -শুরুহল সমালোচনা।দুই নারী এক কান খোলা রাখলেন অন্য কান বন্ধ রাখলেন। 
ছেলে কে নবদ্বীপ টোলে পাঠ নিতে পাঠানো হল। সে তাঁর নিজের মত বড় হতে লাগল। এনারা বাড়ির হাল ধরলেন। 
কয়েক বছর পরে হঠাৎ সদর দরজার দিক থেকে ডাক এল "মা -পিসিমা আমি এসেপড়েছি -কোথায় গেলে তোমরা "--পড়াশোনা শেষ করে বাড়ি ফিরলো। ছেলে তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে কবিরাজ হলেন। বাড়িতেই ওষুধ তৈরীর ব্যবস্থা করলেন। নানান লোকজন নানান কাজে ব্যস্ত। ওষুধ ঘর তৈরী হল। রুগীর আনাগোনা বাড়তে লাগল। দূরদূরান্ত থেকে রুগীর ঢল্। ছেলের হাতযশ খুব। চতুর্দিকে নাম -ডাক। মা -পিসিমা আনন্দে মশগুল। সেও তাঁর বাবার মত ডাক এ যায়। সেও নিদান দিতে পারে -দিতে পারে  পক্ষাঘাত গ্রস্থ রুগী কে স্বাবলম্বী হওয়ার মকরধ্বজ।
 নাড়ির স্পন্দনের ওঠা নামার ফলে নানাবিধ অসুখের ফরমান। ওষুধে আরোগ্য লাভ করায় রুগী তাঁর নবজীবনের আনন্দে । তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র। সকলে বলে বাপের ছেলে। মায়ের কথা -পিসিমার কথা কেও বলেনা। বলেনা তো বলেনা তাতে ওঁনাদের কিচ্ছুটি যায় আসে না।

ছেলে বড় হয়েছে এবার বিবাহের তোড়জোড় চলছে। ছেলের তাঁর মা এর উপর সম্পূর্ণ ভরসা। যথা সময় কনের খোঁজ মিলল। তাঁকে চাক্ষুস করতে হবে। পাশের গাঁয়ে থাকে তাঁর বাল্য বন্ধু। তাঁর সাথেই মেয়ে দেখতে যাওয়া। কনে  সপ্তম মানে পড়ছে। সুশ্রী ও বটে।ধুতি -পাঞ্জাবী পড়ে  ছেলে- ছেলের বন্ধু কনে দেখতে গেলেন । নাম -ধাম জানলেন মেয়ের। মেয়েটি কে প্রশ্ন করলেন তাঁর" তর্কবাচস্পতি "এবং "কুজ্ঝ্বটিকা"--বানান জানা আছে কী ? মেয়েটির উত্তর- তাঁর দ্বিতীয় ভাগ পড়া আছে। অনায়াসে উত্তর । তথা বানান জানাল    মেয়েটি। গান জানে কিনা প্রশ্নেরও উত্তর এল গানের মাধ্যমে। "বকুল বিছানো পথে তুমি যে গিয়াছ চলিয়া "--সুর -বেসুরের মধ্যে মন্দ লাগল না। মেয়েটির সরলতা তাঁদের ভাল লেগেছিল। মা -পিসিমা কে ছেলের সম্মতি জানান হল। ধুমধাম করে বিবাহ সম্পন্ন হল। কবরেজ বাড়ি সরগরম। -----

Wednesday 24 May 2017

বড়মা 
পর্ব -দুই 
পত্নী বিয়োগ চিন্তার সাগর এ ভাসছেন  কবরেজ মশায়। ইতিমধ্যে রুগী দেখার ডাক এসেছে বর্ধমান জেলার মাদারবাটি থেকে। বোনের কাছে সদ্য মাতৃহারা ছেলেকে বুঝিয়েসুঝিয়ে রেখে গেলেন। স্বাস্থ্য পরিষেবা তাঁর জীবনের মন্ত্র।বেশিরভাগটাই তাঁর বীনাপারিশ্রমিকের।তাঁর নামের জয়গান করেন লোকজন।  বিপদ -আপদ সহায় সম্বলহীনদের তিনি নিদান কারী আবার আরোগ্যনিকেতন। 
তিনি ডাকের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন সাথে পাহারাদার - সেই বংশ দণ্ড -ওষুধের পুঁটলি  অন্যান্য সামগ্রী। এবারের ফেরার আর নাম গন্ধ নেই তাঁর। লোকমারফত আসা -যাওয়ার খবর পাওয়া যেত। সেও হচ্ছেনা। বর্ধমান গ্রাম কে  আগের লোকের মুখেমুখে বলা হত  পশ্চিমের দেশ। গাঁ -গঞ্জের লোক চাষাবাদের সময় খাটতে যায়।তাদের মারফৎ খবরাখবর পাওয়া যেত।  এখন সেই মরশুম নয়। খরা চলছে।  
ভাবনাচিন্তার মধ্যে হঠাৎ সন্ধ্যে নামার মুখে গোধূলি বেলায় গরুরগাড়ি এসে থামল কবরেজবাড়ির সদর দরজায়। কবরেজ মশায়ের বোন ভাইপো কে নিয়ে দেখতে এসেছেন তাঁর সাথে প্রতিবেশীদের জটলা "কে এলা গো লতুন মানুষ গাঁয়ে"। 
এক পঞ্চদশী শ্যামলা বরণী ঘোমটা মাথায় নিরাভরণী কন্যে। পা দুটি আলতা মাখা। উঁচুকরে গাছকোমড় শাড়ী তে বেশ লাগছে। ঘরে প্রবেশ করে ছেলেকে কবরেজ মশায় বলেন এখনথেকে এই তোমার মা।বোনকে বলেন তোর সই। 
মা এবং পুত্রের বয়সের ব্যবধান চার -পাঁচ  বছরের।কয়েকমাস মাস কাটলো হঠাৎ কবরেজ মশাইয়ের শরীরে ক্লান্তি ঘিরে এল। চিকিৎসক মানুষ নিজের আয়ুকাল সম্বন্ধে সচেতন। তিনি চিন্তা ভাবনা করে  এই গ্রাম থেকে চারমাইল দূরে একগ্রামে জায়গা জমি  কিনে বাড়িঘর তৈরী করলেন। সেখানে তাঁর স্বজাতির বাস।স্ত্রী -ছেলে -বোন দের সঙ্গে নিয়ে ওই গ্রামে বাস করতে শুরু করেন।তাঁর যাতায়াত ছিল দুই গ্রামেই। গ্রামের লোকজন কবরেজমশাই এর যাবার দিন অরন্ধন পালন করেছিল।
 নতুন গাঁয়ে যাবার দিন থেকে অসহযোগিতা। একদিকে তাঁর নাম ডাক -অপরদিকে দ্বিতীয় বার -----।মোড়লদের আঁচে ঘি পড়েছিল সেদিন থেকে।  রাশভারী মানুষটির সামনে কেউ কিছু না বললেও কথা চালাচালি চলছে তার খবর আনছে তার ভগিনী। কবরেজ মশায় তার ধারধারেননা। বছর ঘুরতে না ঘুরতে গ্রীষ্মের দুপুরে মাত্র ঊনচল্লিশ বৎসর এ  সন্যাস রোগে আক্রান্ত। ঘৃতকুমারী   মাথায় লাগাতে বলার অবসরটুকু পেয়েছিলেন। কিছু ক্ষণের মধ্যে সবকিছু শেষ। গাঁয়ের লোকজন জমায়েত হল। নানান বিধান দিতে লাগলেন। সবচেয়ে বড়বিধান দাগলেন গাঁয়ের মোড়ল।বিধানটি হল কবরেজমশাই এ গাঁয়ে হঠাৎ ঘরবেঁধেছেন সুতরাং তিনি এখনও তাঁদের পঙতিতে গ্রহণ -বিসর্জন এর যোগ্য নন। মৃত দেহ পড়ে রইলো। কেও ছুঁলো না।
 অথই জলে  বালিকাবধূ -বালক পুত্রটি এবং কবরেজমশাই এর ভগিনী। বাচ্চাটাকে আঁকড়ে মা এবং পিসিমার কান্নায় -- কান পাতা কঠিন হলেও দুই কান সমৃদ্ধ মানুষের অভাব প্রকট । বাড়ির দেওয়াল থেকে কান্না ফিরেফিরে আসছিল।
খারাপ খবর মুখেমুখে রটতে থাকে।  লোক এল তাঁর সেই পুরনো নিজের গ্রামথেকে।অন্য গ্রামে থাকতেন কবরেজমশাই এর এক তুতো ভাই। তিনিও এলেন। প্রায় একদিন পরে তাঁর পরবর্তী কাজকর্ম সম্পন্ন হল।পরের দিনথেকে শুরু হল নতুন দিনলিপি। দিনলিপির সাল -তারিখ ছেলেটির মা এবং পিসিমা।ছেলেটি বড় হতে লাগল -------   

Tuesday 23 May 2017

বড়মা 
পর্ব -এক 
আজথেকে প্রায় একশত বৎসর পূর্বের ঘটনা। বীরভূম জেলার প্রত্যন্তঃ গ্রামে এক কবিরাজ পরিবারের বাস।গ্রামের অন্যান্য জনসাধারণ বিভিন্ন শ্রেণীভুক্ত।  দারিদ্রসীমার নীচে তাঁদের  বাস। কিন্তু ওরা মানুষ অর্থাৎ মান ও হুঁশ দুটোই বর্তমান -প্রকট। কবিরাজ পরিবারটি বংশপরম্পরায় একটি পুত্রসন্তান এবং দুটি -তিনটি কন্যাসন্তানের অধিকারী। জমিজমা আছে সাথে আছে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া গৃহদেবতার পূজা। আজও সেটি চলেআসছে। গ্রামের সকলে মান্যি করে -শরীর অসুস্থ হলে ওষুধপত্র দেওয়া ,পথ্য বিধান দেওয়া  থেকে পথ্য সামগ্রী যোগান এই সবই কবিরাজ পরিবার করে থাকে।নাড়ী স্পন্দন দেখে তাঁর আয়ুকাল বলে দিতেন কবরেজ মশায় । সকলে একডাকে  কবরেজ বাড়ী নামে চিনত। 
কবরেজ মানুষটি ছিলেন উদার মনের। খাদ্য রসিক -রাশভারী প্রকৃতির -এককথার মানুষ -পরোপকারী। তিনি একেকবারে একটি গোটা পাঁঠার মাংস সাবাড় করে দিতেন। রেগে গেলে সামলানো মুশকিল হত। কিন্তু পরক্ষনেই বরফ গলা জল। এহেন গুণ -দোষ নিয়েই তাঁর জীবন। গ্রামের মানুষ -আত্মীয় স্বজনের কাছে তিনি মসিহা। হিন্দু মুসলিম উভয়ই তাঁর বন্ধু। কবরেজের জমি চাষাবাদের দুইই ভাগীদার। দুই সম্প্রদায়ের মানুষজনের অবাধ যাতায়াত। পূজা থেকে পরব সবকর্মেই এই কবিরাজ বাড়ি।মুসলিমদের পরবে কবিরাজ বাড়িতে আসত সুগন্ধী চাল -ঘি -সেমুই -দুধ যাবতীয়। তাঁরা বলতেন এধে খাবেন। র বলতে পারতনা রেঁধে কে এধে বলত।  

ছোট বয়সে পিতৃহারা -মাতৃহারা হন। কিন্তু এক কায়স্থ পরিবার তাঁর এবং বোনের  উপযুক্ত হতে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন।সময়ে তিনি দ্বার পরিগ্রহ করেন। অপূর্ব সুন্দরী ছিলেন তাঁর পরিবার। কবরেজ মহাশয় ছিলেন দীর্ঘকায়। গাত্র বর্ণ ছল শ্যামউজ্জ্বল ।ভগিনীর বিবাহ হয়ে ছিল। বাল্যবিধবা হওয়ায় তাঁর শ্বশুরবাড়িতে ঠাঁই হয়নি।ভগিনীর বড় দাদা একরোখা প্রকৃতির ছিলেন।  বোনের অনাদর না হয় তাই নিজের বাড়িতে বোন কে আনলেন। বলেন এটা আমারও বাড়ী আবার তাঁর ও বাড়ি। ননদিনি আর বৌদিদি দুই বন্ধুর মত হয়ে উঠলো।  
ঘর আলোকরে কবরেজ গিন্নির কোলে এল শিশু সন্তান। পরম্পরা মেনে শিশুটি পুত্রসন্তান। এভাবেই দিনচলছিলো। কবরেজ মহাশয় কে প্রায় ডাক এ রুগী দেখতে যেতে  হয়।সাথী একজন সর্বক্ষণের সহযোগী -ওষুধের পুঁটলি এবং লণ্ঠন। পাহারাদারের হাতে সরষের তেল মাখানো পাকাবংশদণ্ড। ডাকাতের ভীষণ উপদ্রব। আত্ম রক্ষার্থে। পথ চলতে মাঝে মধ্যে ভেসে ওঠে "কে যায় এত রাতে ?"---উত্তর আসে কবরেজ যায়।আশ্বাস দেয় চিন্তা নেই "আমরা জেগে আছি "--  
দূরদূরান্তে যেতেহতো রুগী দেখতে। কখনও ফিরতে ফিরতে চার -পাঁচ দিন লেগে যেত।  পায়ে হেঁটে যাওয়া আসা। কালেভদ্রে গরুরগাড়ি।  শিশু তাঁর মা এবং পিসিমার কাছে বড় হতে লাগল। তাঁর সাথে গ্রামের মানুষের সহযোগিতা। 
ছেলেটি  সবে দশ কি এগারোয় পা দিয়েছে হঠাৎ ছন্দপতন। তাঁর মাতৃ বিয়োগ হল। কবরেজ মশায় পড়লেন অথৈ জলে---.




                          
  

Sunday 21 May 2017

অধরা মাধুরী 
অন্তিম পর্ব
#মৌসুমী রায়

বিদায় বন্ধু। যেতে নাহি দিব --কথোপকথন চলছে মনের মাঝে। এতসবুজ আগে কখনও দেখাহয়নি। জঙ্গলের মাদকতা বিভোর করেছে। আজ জিড়িয়ে নিয়ে আগামীকাল ফেরার পালা। মনের খিদে আটকানো ভীষণ কঠিন। মন ভরতেই চায়না। শেষ নেই যে -শেষ কথা কে বলবে। যাবার আগে মন খারাপের আসন না পেতে আবার একটু ঘুরে আসি। একটু মিষ্টি মুখ। যেমন লুচি দিয়ে যতই সুস্বাদু মিষ্টি খাওয়া যাক না কেন -ওই যে শেষ লুচি টি ফুটো করে চিনি দিয়ে খাবার কিযে তৃপ্তি বোঝানো যায়না কাউকে। সেই ফুলকো লুচি আর চিনি হলো মৌয়ের লাভা এবং ঋষভ ভ্রমণ । ওখানে রাস্তায় দেখলাম ঋষি লেখা আছে। সে আছে তার মত। 
লাভা যাওয়ার পথে প্রকৃতির সাজ। রঙের সাজুয্য নান্দনিক। সমতলে যেমন যাত্রা পথে প্রায়শঃ ধানক্ষেত দেখাযায় তেমনই ডুয়ার্স থেকে পাহাড় পথে চাবাগানের সমারোহ। ঢেউ খেলানো সবুজ চাদর বিছানো। চাবাগিচায় মেয়েরা টুকরি নিয়ে চা পাতা তুলছে। একটি কুঁড়ি দুটি পাতা। মেয়েরা নরম মসৃণ আঙুলের যাদুতে সম্পন্ন করছে। চাগাছের বীজ এবং ফুল ও নজর কাড়লো।
পাহাড় পথে  কখনো মেঘ -রোদ -আবার বৃষ্টি। দেবদারু -পাইন গাছের বন।আবার কোথাও দুটি গাছ একসাথে জড়িয়ে বড় হচ্ছে যে যার মত। কোনও বিদ্রোহ নেই। তাঁদের স্লোগান বাঁচো বাঁচাও।  প্রকৃতি সৌন্দর্যে মন খিদে আরও বাড়ছে।লাভা পৌঁছে দেখা পেলাম বৌদ্ধ দের উপাসনা গৃহ -বৌদ্ধ স ন্যাসীদের পড়াশোনার স্থান। বুদ্ধদেব  শান্ত স্নিগ্ধতায় বিরাজমান। সন্যাসীরা তাঁদের কথাবার্তা কাজকম্মে নিমগ্ন। 
তাঁর সংলগ্ন লাভা উচ্চবিদ্যালয়। পাশেই বাচ্চাদের পড়াশোনা করার বিদ্যালয়। যখন পৌঁছানো গেল লাভায় তখন বাচ্চাদের ছুটি হয়েছে। কিযে মিষ্টি লাগছে ওদের যেন একেকটি পাহাড়ী ফুল। যত্নে ঈশ্বর সাজিয়েছেন। 
তার মাঝে বড়ো বিদ্যালয়ের জলযোগের সময় হয়েছে। ঘন্টাপড়লো -ওরা কেও সংলগ্ন মাঠে খেলা শুরুকরল -আবার কেও নিজেদের ভাষায় বাকবিনিময়ে  মশগুল।  
একটি জলাধার প্রকল্পের কাজ ও নজরে এলো। খাওয়া দাওয়ার পর, মানে পেটের খিদে মিটিয়ে মনের খিদে মেটাতে তখন বেশ লাগছে।  লাভা আসার পুর্বে গাড়িচালক ঋষি বা ঋষভ ভিউপয়েন্ট ঘুড়িয়ে নিয়ে এল। ঋষভ এর রাস্তা খুব বন্ধুর। গাড়ি আটকে যাই যাই তখন প্রকৃতি দেখব কী -ঈশ্বর নাম জপছি। এভাবে যেতে যেতে প্রকৃতি কে যে ভাবে দেখাগেলো বর্ণনার অতীত। পাখির ডাক -কোনপাখি ডাকছে তার নজর করার যো নেই।গাছের পাতার রঙে রংমিলান্তি। কাঞ্চনজঙ্ঘা বরফ সাজে সেজে আছে।মুকুট -গলার হার -টায়রা -টিকলি -নথ সবই পড়েছে। নীলাকাশের মাঝে -বরফ ভেঙে ডিঙিয়ে যাওয়া সাধ্যি নাই যে আমার ক্ষমতার কাছে।   ওপারে ভূটান -সেখানে রোদঝলমল। সবুজ ঘেরা পাহাড় মাঝে বাড়ির ছাদগুলো রোদের ছটা চোখ টানছে।দুপুরের পর থেকে পাহাড় অন্য রূপ ধারণ করে। সুতরাং সুন্দর কে দেখার জন্য এই মানব জাতিকে বাঁচতে হবে। অগত্যা ফিরতে হবে মাটির টানে।  ফেরার পথে আবার পাহাড় -ফুল -পাখি বন্ধুদের বিদায় জানানোর পালা। ওরাও  জানালো তবে বিদায় নয়। জানালো ভালথাকার মন্ত্র। বললো আবার দেখাহবে বন্ধু। 
মাধুরী অধরা। মনচক্ষু এর সমঝদার।মুখে  বোলে বা ছবিতে বোঝানো যায়না। সত্যি তুমি অধরা মাধুরী ধরেছো ছন্দ বন্ধনে। 

Saturday 20 May 2017

অধরা মাধুরী 
পঞ্চম পর্ব
 #মৌসুমী রায় 

গত রাত থেকে মৌয়ের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে সেই কথা টি। সেইটি প্রায় সে গীতা শ্লোকের মতো মনে মনে আউড়ে যাচ্ছে। কখন ভোর হবে আর সেই কথাটি সুরে বাজবে। প্রথমতঃ তরাই -ডুয়ার্সের আকর্ষণ। সঙ্গী হলো উত্তরবঙ্গের স্থানগুলির নামকরণ। লাটাগুড়ি -ময়নাগুড়ি -ধূপগুড়ি -বিন্নাগুড়ি -ফাঁসিদেওয়া -হাসিমারা -রাজাভাতখাওয়া -কুনকি -গরুমারা -জলদাপাড়া আরও কতকি। নামেই সে প্রেমে পড়েছে। তারসাথে সেই কথাটি --
কথাটি হল ফরাসী প্রবাদ এ আছে যে একটি গাছ অনেক সময় পুরো জঙ্গল ঢেকে দেয়। 
ডুয়ার্স তো গাছেগাছে বিপ্লব ঘটিয়েছে -আর তাঁর বিপ্লবী ভাই বোনেরা বিপ্লব অমর করেছে। সেই বিপ্লবীরা বনের জীবজন্তু -কীট -পতঙ্গ। ডুয়ার্সের জঙ্গল এর শিল্প প্রদর্শন নয় এর সৌন্দর্য শিল্প বিপ্লব। 

ভোরহতে না হতেই তৈরী জঙ্গল ভ্রমণের উদ্যেশ্যে। সাথে গাড়ীর চালক আর পরিচয় সহায়ক।ভোরের মিষ্টিহাওয়া -বনের মিষ্টি গন্ধ -পাখীর ডাক দিয়ে যাওয়া -ঝিঁঝি পোকার সুর -ছন্দবদ্ধ নিয়ে যাত্রা শুরু। যাত্রাপ্রসাদ জঙ্গল সফর। যাত্রাপ্রসাদ নামকরণ একটি হাতীর নামানুসারে।  যেতেযেতে ময়ূর পেখম টাকে রাস্তার উপর ঝাড়ু দিয়ে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গাড়ীর শব্দে ওমনি ফুড়ুৎ। পাখিরা গাছে দোল দিয়ে নানান সুরে গাইছে। বনমোরগ খুঁটেখুঁটে কী খাচ্ছে -চকিতে হরিনের আগমন -প্রস্থান। পরিচয় সহায়কের দৃষ্টির তারিফ করতে হয়।কোথায় ময়ূর তাঁর পেখম রেখেছে সেটিও চালক -সহায়কের নজর এড়ায় না। ভীষণ দক্ষ।  তাঁদের সরলতা অনুভব করলে  মনে শান্তি আনে।তাঁদের  মুখে হাসিলেগে -আর পর্যটক কে হাতী -গন্ডার -বাইসন দেখানোর চেষ্টা। পর্যটক বনের জীবজন্তু  দেখলেই ওদের কিযে আনন্দ না দেখলে বোঝানো যাবেনা।হ্যাঁ যাত্রাপ্রসাদে হাতীর দল ঘুরছে -নানান বর্ণ -প্রজাতির পাখির ঝটপট শব্দের  আসাযাওয়া মনের ছবিতে এঁকে রাখছে। যন্ত্র ছবিতে ধরতে গেলে তাঁদের খেলাখেলি দেখাযাবেনা। 
সফর সেরে লাটাগুড়ি তে ফেরা। লাটাগুড়িতেই ডেরা বাঁধা। আবার বিকেল বেলা মেডলা জঙ্গল। ... এখানে প্রথমে মহিষের গাড়ি করে জঙ্গলে পৌঁছনো। সেখানেও গন্ডার -বাইসন -হাতি -ময়ূর -ময়ূরী -হরিণের দেখা। সবে বৃষ্টি হয়েছে বড়বড় ঘাসে হাতীর থামের মত পা পড়তেই জলের ফোয়ারা -যা পূর্বে দেখিনি। লবনপাত্র রাখা আছে সেখানে লবন-গুড় খেতে আসে গণ্ডারের দল।সন্ধ্যে হবেহবে ফেরার পথে আদিবাসী নাচনী আখড়ায় নৃত্য -সংগীত প্রদর্শন। আদিবাসী সুর -নৃত্য ভঙ্গিতে আজও তাঁরা তাঁদের কৃষ্টি বাঁচিয়ে রেখেছে।  তার সাথে চা -বিস্কুট। টিকিট ব্যবস্থার মাধ্যমে এগুলি পরিচালিত।সাথে পাওয়া যাচ্ছে চাবি বন্ধন -ধূপকাঠি। সবই আদিবাসীদের তৈরী।টিকিটের সাথে এগুলি পর্যটকদের দেওয়াহয়।  এর অর্থ আদিবাসী কল্যাণে খরচ হয়। ২০০৬ সাল থেকে এর যাত্রাশুরু। রাত্রি হয়েছে ফিরতে ফিরতে জঙ্গলের মাঝবরাবর রাস্তা -গাড়িরচালক পিকু জানায় হঠাৎ হঠাৎ হাতি আসে এই রাস্তায়। জোৎস্না মাখানো বনের পথে বনের সৌন্দর্য উছলে পড়ছে।  মাঝেমাঝে গাড়ির আলো বন্ধকরে দলবদ্ধ জোনাকির আলো দেখাচ্ছে। রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছিলো। 
সেই আবেশ কাটতে না কাটতে পরের দিন টানা তিনঘন্টা জঙ্গল সফর। ভাম এরসাথে দেখা তাঁর গায়ের গন্ধ আতপ চালের মত। বাইসন তার বাচ্চাদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতি তার পরিবার নিয়ে বেরিয়েছে। পর্যটকদের ছবিও তুলতে দিচ্ছে। বেতগাছের পাতা ভেঙে সামনের পা দিয়ে আয়ত্তে এনে মুখে পুড়ছে। গরমকাল -হাতি স্নিগ্ধ হওয়ার জন্য মাটিসমেত ঘাস উপড়িয়ে পিঠে রাখছে। বকের সারি গন্ডারের পিঠে চেপে চলেছে। 
ওরা কত সুন্দর এই কথাটি মনেমনে উচ্চারিত হল। ---তোমার প্রেমে ধন্য করেছ মোরে ডুয়ার্স। ---চোপড়ামারী যাত্রাপথে হাতিনাদেখলেও ধনেশ পাখির দেখামিললো -দেখামিললো মদনটাক পাখির। প্রকৃতির সাথে তাদের সহাবস্থান মনের আনন্দ এক অন্য মাত্রা পায়। ---ডুয়ার্স বলছে "এখুনি কি হলো তোমার যাবার বেলা --হায় অতিথি। দেখ আমার হৃদয় তলে সারা রাতের আসন মেলা। "-----

Friday 19 May 2017

অধরা মাধুরী 
চতুর্থ পর্ব
#মৌসুমী রায়

ইতিহাস কথা বলে।স্বচক্ষে দেখার ইচ্ছে-দেখা বাস্তবতার সামিল। উত্তরবঙ্গের বক্সা দূর্গ তাঁর নিদর্শন। ইতিহাস কে ছুঁয়ে দেখার বাসনায় বক্সা উদ্দেশ্যে রওনা।পদ যুগল আশ্রয় করে সঙ্গী সহায়ক নিয়ে চলা শুরু।  চড়াই -উতরাই পথ। চলতি পথে ক্লান্তি পথ আটকানোর চেষ্টায়।কিন্তু মন তখন জেগে উঠেছে -বলছে যা দেখে যা স্বাধীনতা এনেছেন যারা তাদের কষ্ট -তাদের চিন্তা ধারা। 
এভাবেই মনে মন কথায় কথায় কখন পৌঁছে গেলাম বহু প্রতীক্ষিত বক্সা দূর্গে। এখানেই স্বাধীনতা সংগ্রামী দের বন্দী করে রেখেছিলো ইংরেজরা। তাঁদের কী কষ্ট যাপন করতে হয়েছিল তা আজও দ্বন্দ্ব  -দীর্ণ অবস্থায় দণ্ডায়মান।রক্ষনা বেক্ষনের বড়ই অভাব। অন্যান্য বন্দীদের সঙ্গী বন্দী ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস। তাঁকে নিয়েই ইংরেজদের মাথার গন্ডগোল। সুতরাং বক্সা দুর্গ যে কী দুর্গম স্থান তা সহজেই অনুমেয়। ১৯৩১ সালে বন্দীরা শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে তাঁদের অসহনীয় অত্যাচার -নির্যাতনের কথা পত্র মারফৎ জানান। কবিগুরু যারপরন্যায় ব্যথিত 
  তাঁদের কষ্টে। তিনিও তাঁদের প্রত্যুত্তর পত্র পাঠান। তিনিও সমব্যাথী। লেখার মাঝে একজায়গায় লিখছেন "ফোয়ারার রন্ধ্র হতে -উন্মুখর উর্দ্ধ স্রোতে"--। দুটি চিঠির ফলক নির্মিত সেখানে। বন্দীদের পানীয় জল থেকে বঞ্চিত করার প্রকল্প নেয় ইংরেজরা।দূর্গ লাগোয়া জলাশয় বন্ধকরে দেয়। আজও সেখানকার বসবাসকারী জনগণ তাঁর ফল ভোগ করেচলেছে। 
একদিকে ইতিহাস ছুঁয়ে দেখার আনন্দ অপরদিকে স্বাধীনতা সংগ্রামী দের সংগ্রাম দুয়ের দ্বন্দ্বে  দ্বিখণ্ডিত। 
ফেরার পথে মনে হলনা পাহাড়ে ওঠার কষ্টের কথা।
  
পাশেই বয়েচলেছে জয়ন্তী নদী।কত ইতিহাসের সাক্ষী।কত জল বয়ে গিয়েছে -বইবে আরো কত ---
সেও এক অনন্য সুন্দরী দেহে -মনে। রূপে শুধু ভোলায়না গুণেরও মাধুকরী। বক্সার মধুর ক্লান্তি কে অনায়াসে লাঘব মন্ত্রে অনুরণন ঘটায় তাঁর বহমান ধারার ধারায়। 
ইতিহাস সাথেই চলেছে আর নিজেরা নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। ঈশ্বর কে শুধু কৃতজ্ঞতা -অনেক দিয়েছ নাথ। 
চলতে চলতে পথে রাজাভাতখাওয়া। দুই রাজার সন্ধি এবং ভাত খাওয়া। সেই ভাত খাওয়া আজও ভারত -ভুটান খেয়েচলেছে -চলবেও। শুধু খাওয়া নয় চলছে তার সাথে দাওয়া -ও। ------
  

Thursday 18 May 2017

অধরা মাধুরী
তৃতীয় পর্ব 
#মৌসুমী রায় 

পথের সাথী জলঢাকা। পথ চিনিয়ে নিয়ে চলেছে নদী নতুন ঠিকানার খোঁজে। চলতে চলতে নদীর কোথাও জল তো কোথাও নুড়ি পাথর। এই সেই মধ্যবর্তী জলস্থল এ এক সুন্দরীর খোঁজ মিলল। প্রকৃতি তাঁর চন্দন -কুমকুম -ওড়না দিয়ে কনে সাজিয়ে রেখেছে। নামটি তাঁর ঝালং। পাহাড় ঘেরা সাজে তাঁর বসত নীল আকাশের মাঝে। তার এ পাড়েতে ভারত মাতা -ও পাড়েতে ভূটান।ঝালংএর মন মর্জি ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। মেঘ পিওনের চিঠির প্রাপ্তি স্বীকারের ওপর। মনে মেঘ হলে বৃষ্টি আসবেই।সেই মেঘ কে বৃষ্টি ধারায় আনতে মিলবে পাহাড়ের মিষ্টি মেয়ের হাতের তৈরী ধোঁয়া ওঠা মোমো -চা -কফি। সাথে রৌদ্র -ছায়ার খেলা। ঝালং ঘিরেছে সবুজ গাছ -পাহাড় -নদী -ফুল -পাখি। 
চলতে পথে মিলল দেখা ভারতবর্ষের উত্তরবঙ্গের শেষ গ্রাম। নামটি তাঁর বিন্দু। পূর্ণচ্ছেদ -বিন্দু। প্রকৃতির কোনো পূর্ণচ্ছেদ নেই -তার ব্যাপ্তি অতল -অসীম। বিন্দু নামটি সাহিত্যের বিন্দুবাসিনীর কথা মনে পড়ায়। পাহাড় ঘেরা সাজে বিন্দু নীল আকাশের মাঝে। বিন্দু পরম স্নেহের বন্ধনে সেতু বন্ধন করেছে ভুটানের সাথে। তাঁদের আতিথেয়তা দিচ্ছে আমাদের দেশের অতন্দ্র প্রহরী সৈনিক।
এখানেই জলঢাকা বিদ্যুৎ প্রকল্প।  হৃষ্টপুষ্ট সারমেয়র দল চলেছে সাথে। ছবি তুলতে পারদর্শী কিন্তূ রেগে গেলে ভয়ংকর।
সৌন্দর্য চোখে -মুখে নিয়ে ফেরা। বিদায় জানাতে আবার ঝালং -পাহাড় -নদী -পাইন হাজির। আবার এস ফিরে। ভালো থেকো -প্রকৃতি বাঁচিয়ে রেখো। ফেরার পথে অন্য  পথের খোঁজ পেড়েছে বক্সা -জয়ন্তী রা। ----

Wednesday 17 May 2017

অধরা মাধুরী 
দ্বিতীয় পর্ব
#মৌসুমী রায় 

উত্তরবঙ্গের নেওরা নদীর তীরবর্তী এই লাটাগুড়ি। নেওরা নদী আর তার আশেপাশে বসতি -গাছগাছালি প্রকৃতিরে সাজায়ে তুলেছে।আদিবাসী মানুষজনের আনাগোনা -তাদের অল্পসল্প শাকসবজি নিয়ে বসানো হাট -সেখানে কেনাবেচা চলছে। মেয়েরা হাঁড়িয়া নিয়ে বসেছে-সেখানে কিছু পুরুষের আনাগোনা। রাস্তার দুই পাশে যতদূর চোখ যায় শুধুই চাবাগান আর চাবাগান -সবুজে চোখ ধাঁধায় -চোখ আরাম পায়।   চাগাছের মাঝে মাঝে নামকরণ করা বড়ো বৃক্ষ -সেই বৃক্ষ কে আলিঙ্গন কোরে আছে গোলমরিচের গাছ।প্রকৃতির সহাবস্থান মন কে থামিয়ে ভাবতে শেখায় -তোমরা মানুষেরা এভাবে বাঁচো -দেখো ভালো থাকবে।  
গাছেগাছে নানান ফুলফুটেছে -এদের আকৃতি প্রকৃতি দক্ষিণবঙ্গের ফুলের তুলনায় বেশ পুষ্টি লাভ করেছে। রাতের বেলা এদের সৌন্দর্য দিনের আলোর মতো উজ্জ্বল।রাতের জঙ্গল যেন সৌন্দর্যের মধ্যে ভয়ংকর সুন্দরী খেতাব আদায় করে নিয়েছে।  উপভোগ করতে করতে  গা  ছমছম অনুভূতি। সাথে বুনো মিষ্টি গাছের গন্ধ মন মাতাল। গ্রাম্য ভাব আবার তার সাথে মানুষজন এতো মিষ্টি যে তাদের ভাষাতেও সেটা নজর কারে। 
নদীটির নাম মূর্তি -সে তার রূপের পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছে। ঝিরিঝিরি বইছে বারোমাস। তারজন্য সে আজ চারানা কাল চারানা দাবি করেনা। বলে যেন এস কাছে একটু হাতে -পায়ে জল নাও স্নিগ্ধ হও। এখানে বৃষ্টিপড়ে বারোমাস -গাছগুলো ছায়া দেয় -আগল দেয় মা -বাবার ভালোবাসার মত। বৃষ্টির জল মাটির বুকের মাঝে বন্দি।
মেঘথেকে পড়ে মৃত্তিকাতে মেশে। ধরণী সবুজেসবুজ বনানী বিথীকায়।মূর্তিনদির যাত্রাপথে ময়ূর -ময়ূরী -বন মোরগ -রংবেরংয়ের পাখির সাথে দেখা। কখনো হরিণ -হঠাৎ তার ছুটে যাওয়া -সবই পলক এর মাঝে। 
কত যে নদী -আর নদী -যেন প্রকৃতির গলায় রূপালী গলাবন্ধ এঁকেছে।   পাহাড়ের গায়ে পড়িয়েছে যে কণ্ঠহার সে জলঢাকা ।পাহাড় -নদী -গাছ -ফুল -পাখি নিয়ে এগিয়ে চলেছে পথ দেখিয়ে জলঢাকা। নতুন পথের সন্ধানে। ------

Tuesday 16 May 2017

অধরা মাধুরী 
প্রথম পর্ব 
#মৌসুমী রায়

সকাল সকাল অন্য বেলা অবেলার মতো আজ বেলাটা নয়। একটু অন্য রকম -আজ মৌ এর ব্যস্ততম দিন। সময়ের মধ্যে সব কাজকম্ম গুছিয়ে ফেলতে হবে। রাত দশটায় কোলকাতা রেল গন্তব্য থেকে রেলগাড়িতে ওঠা। উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের উদ্দেশ্যে রওনা। আনন্দে মন আহ্লাদে আটখানা। অনেক জায়গায় ঘোরা ঘুরি হয়েছে- ডুয়ার্স এই প্রথম। কাগজ -পত্রপত্রিকায় পড়া আর স্বচক্ষে দেখা অনেক তফাৎ। আনন্দধারা ভুবন ব্যাপিয়া মনন ছাপিয়া জীবন এর প্রথম পাহাড় -নদী -জঙ্গল মহা মিলনক্ষেত্র। 
নতুন মাল রেল গন্তব্যে পৌঁছনোর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত যাত্রাপথে যে কি সৌন্দর্য বোধকরি রেলগাড়িতে না চড়লে উপভোগ করা যেতনা।সবুজে সবুজ বনানী প্রান্তর -সবুজের তোরণ রচনা করেছে আহ্বান করার জন্য। পাখিদের কলকাকলি শঙ্খ ধ্বনি মনে হচ্ছে। চারিদিকে চাবাগিচা সবুজ আঁচল পেতে রেখেছে মায়ের মত। মন উদাস করা সবুজ নানান গাছের গন্ধ -উফ কী মাদকতা।  যা শুধু নিজের ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য -মনের ছবিতে এঁকে রাখা। চোখ বন্ধকরে সুগন্ধ নাও -অনুভব করো। বলতে পারি প্রকৃতি তুমি কত সুন্দর। 
যেতেযেতে পথ দিতে চায় -নিতে চায় না কিছু। তাঁর রূপ -রস -গন্ধ বনের পথের মনের সঙ্গী। হঠাৎ ময়ূর তার পেখম নিয়ে দুলকি চালে রাস্তা ঝাড়ু দিতেদিতে যাচ্ছে। গাড়ির শব্দে দ্রুত বনের মধ্যে। রঙ্গীন প্রজাপতির দল উড়ে এসে গায়ে পাখনা ছুঁয়ে দিয়ে গেল। যাত্রা পথে ঝিঁঝিঁ পোকার মিলিত সুরবন্দনা -ছন্দ। কখন লাটাগুড়ি আবাস এ পৌঁছে দিল বোঝা গেল না। সারাদিনের ক্লান্তি আমার করলো রমণীয় চলার পথের সাথীরা।---- 


Saturday 6 May 2017

আমাদের অঙ্গনে 

শিপ্রা নদীর ধারে বসত ও গো চির উজ্জয়িনী -
কালের ধারক -বাহক সিংহস্থ মহাকুম্ভ ,
বৈশাখ সূর্য -মেঘ রাশি স্থাপন -চন্দ্র তুলায় বসি -
তুঙ্গে বৃহস্পতি -সিংহে স্নাত দ্বাদশ দম্ভ। 

তব পরিচয়তে ধ্রুপদ -পালি ভাষা সংস্কৃতে -
সমৃদ্ধ চালে -চলনে কালিদাস মেঘদূতে ,
সেথায় নগর নটীর বসন মেখলায়  মেঘ -
পরশ আনে দাবদাহের পরে স্নিগ্ধ বৃষ্টি বিন্দুতে।

মৃচ্ছকটিকম নাগরী উজ্জয়িনী বসন্তসেনা -
প্রেমে প্রেমে ঢালো ধারা মর্দনিকায় বিভোর ,
বেদ শ্রেষ্ঠ ঋক কালিদাসের অপ্সরা -ঊর্বশী -
বাস্তব ইতিহাসে নেড়েছে কড়া বিরহ মেদুর। 

শক্ত হাতে ভার শাসন দিশায় বিদিশার -
অশোক -দেবী সূত্রে গেঁথেদিলো সংঘমিত্রায় মাহেন্দ্রক্ষণ ,
মহাভারত -রামায়ণ -বিক্রমাদিত্য বেতাল কাহিনী -
মধুময় নীতিশিক্ষায় মুগ্ধতায় ইতিহাস দন্ডায়মান।