Tuesday 23 May 2017

বড়মা 
পর্ব -এক 
আজথেকে প্রায় একশত বৎসর পূর্বের ঘটনা। বীরভূম জেলার প্রত্যন্তঃ গ্রামে এক কবিরাজ পরিবারের বাস।গ্রামের অন্যান্য জনসাধারণ বিভিন্ন শ্রেণীভুক্ত।  দারিদ্রসীমার নীচে তাঁদের  বাস। কিন্তু ওরা মানুষ অর্থাৎ মান ও হুঁশ দুটোই বর্তমান -প্রকট। কবিরাজ পরিবারটি বংশপরম্পরায় একটি পুত্রসন্তান এবং দুটি -তিনটি কন্যাসন্তানের অধিকারী। জমিজমা আছে সাথে আছে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া গৃহদেবতার পূজা। আজও সেটি চলেআসছে। গ্রামের সকলে মান্যি করে -শরীর অসুস্থ হলে ওষুধপত্র দেওয়া ,পথ্য বিধান দেওয়া  থেকে পথ্য সামগ্রী যোগান এই সবই কবিরাজ পরিবার করে থাকে।নাড়ী স্পন্দন দেখে তাঁর আয়ুকাল বলে দিতেন কবরেজ মশায় । সকলে একডাকে  কবরেজ বাড়ী নামে চিনত। 
কবরেজ মানুষটি ছিলেন উদার মনের। খাদ্য রসিক -রাশভারী প্রকৃতির -এককথার মানুষ -পরোপকারী। তিনি একেকবারে একটি গোটা পাঁঠার মাংস সাবাড় করে দিতেন। রেগে গেলে সামলানো মুশকিল হত। কিন্তু পরক্ষনেই বরফ গলা জল। এহেন গুণ -দোষ নিয়েই তাঁর জীবন। গ্রামের মানুষ -আত্মীয় স্বজনের কাছে তিনি মসিহা। হিন্দু মুসলিম উভয়ই তাঁর বন্ধু। কবরেজের জমি চাষাবাদের দুইই ভাগীদার। দুই সম্প্রদায়ের মানুষজনের অবাধ যাতায়াত। পূজা থেকে পরব সবকর্মেই এই কবিরাজ বাড়ি।মুসলিমদের পরবে কবিরাজ বাড়িতে আসত সুগন্ধী চাল -ঘি -সেমুই -দুধ যাবতীয়। তাঁরা বলতেন এধে খাবেন। র বলতে পারতনা রেঁধে কে এধে বলত।  

ছোট বয়সে পিতৃহারা -মাতৃহারা হন। কিন্তু এক কায়স্থ পরিবার তাঁর এবং বোনের  উপযুক্ত হতে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন।সময়ে তিনি দ্বার পরিগ্রহ করেন। অপূর্ব সুন্দরী ছিলেন তাঁর পরিবার। কবরেজ মহাশয় ছিলেন দীর্ঘকায়। গাত্র বর্ণ ছল শ্যামউজ্জ্বল ।ভগিনীর বিবাহ হয়ে ছিল। বাল্যবিধবা হওয়ায় তাঁর শ্বশুরবাড়িতে ঠাঁই হয়নি।ভগিনীর বড় দাদা একরোখা প্রকৃতির ছিলেন।  বোনের অনাদর না হয় তাই নিজের বাড়িতে বোন কে আনলেন। বলেন এটা আমারও বাড়ী আবার তাঁর ও বাড়ি। ননদিনি আর বৌদিদি দুই বন্ধুর মত হয়ে উঠলো।  
ঘর আলোকরে কবরেজ গিন্নির কোলে এল শিশু সন্তান। পরম্পরা মেনে শিশুটি পুত্রসন্তান। এভাবেই দিনচলছিলো। কবরেজ মহাশয় কে প্রায় ডাক এ রুগী দেখতে যেতে  হয়।সাথী একজন সর্বক্ষণের সহযোগী -ওষুধের পুঁটলি এবং লণ্ঠন। পাহারাদারের হাতে সরষের তেল মাখানো পাকাবংশদণ্ড। ডাকাতের ভীষণ উপদ্রব। আত্ম রক্ষার্থে। পথ চলতে মাঝে মধ্যে ভেসে ওঠে "কে যায় এত রাতে ?"---উত্তর আসে কবরেজ যায়।আশ্বাস দেয় চিন্তা নেই "আমরা জেগে আছি "--  
দূরদূরান্তে যেতেহতো রুগী দেখতে। কখনও ফিরতে ফিরতে চার -পাঁচ দিন লেগে যেত।  পায়ে হেঁটে যাওয়া আসা। কালেভদ্রে গরুরগাড়ি।  শিশু তাঁর মা এবং পিসিমার কাছে বড় হতে লাগল। তাঁর সাথে গ্রামের মানুষের সহযোগিতা। 
ছেলেটি  সবে দশ কি এগারোয় পা দিয়েছে হঠাৎ ছন্দপতন। তাঁর মাতৃ বিয়োগ হল। কবরেজ মশায় পড়লেন অথৈ জলে---.




                          
  

No comments:

Post a Comment