Sunday 21 May 2017

অধরা মাধুরী 
অন্তিম পর্ব
#মৌসুমী রায়

বিদায় বন্ধু। যেতে নাহি দিব --কথোপকথন চলছে মনের মাঝে। এতসবুজ আগে কখনও দেখাহয়নি। জঙ্গলের মাদকতা বিভোর করেছে। আজ জিড়িয়ে নিয়ে আগামীকাল ফেরার পালা। মনের খিদে আটকানো ভীষণ কঠিন। মন ভরতেই চায়না। শেষ নেই যে -শেষ কথা কে বলবে। যাবার আগে মন খারাপের আসন না পেতে আবার একটু ঘুরে আসি। একটু মিষ্টি মুখ। যেমন লুচি দিয়ে যতই সুস্বাদু মিষ্টি খাওয়া যাক না কেন -ওই যে শেষ লুচি টি ফুটো করে চিনি দিয়ে খাবার কিযে তৃপ্তি বোঝানো যায়না কাউকে। সেই ফুলকো লুচি আর চিনি হলো মৌয়ের লাভা এবং ঋষভ ভ্রমণ । ওখানে রাস্তায় দেখলাম ঋষি লেখা আছে। সে আছে তার মত। 
লাভা যাওয়ার পথে প্রকৃতির সাজ। রঙের সাজুয্য নান্দনিক। সমতলে যেমন যাত্রা পথে প্রায়শঃ ধানক্ষেত দেখাযায় তেমনই ডুয়ার্স থেকে পাহাড় পথে চাবাগানের সমারোহ। ঢেউ খেলানো সবুজ চাদর বিছানো। চাবাগিচায় মেয়েরা টুকরি নিয়ে চা পাতা তুলছে। একটি কুঁড়ি দুটি পাতা। মেয়েরা নরম মসৃণ আঙুলের যাদুতে সম্পন্ন করছে। চাগাছের বীজ এবং ফুল ও নজর কাড়লো।
পাহাড় পথে  কখনো মেঘ -রোদ -আবার বৃষ্টি। দেবদারু -পাইন গাছের বন।আবার কোথাও দুটি গাছ একসাথে জড়িয়ে বড় হচ্ছে যে যার মত। কোনও বিদ্রোহ নেই। তাঁদের স্লোগান বাঁচো বাঁচাও।  প্রকৃতি সৌন্দর্যে মন খিদে আরও বাড়ছে।লাভা পৌঁছে দেখা পেলাম বৌদ্ধ দের উপাসনা গৃহ -বৌদ্ধ স ন্যাসীদের পড়াশোনার স্থান। বুদ্ধদেব  শান্ত স্নিগ্ধতায় বিরাজমান। সন্যাসীরা তাঁদের কথাবার্তা কাজকম্মে নিমগ্ন। 
তাঁর সংলগ্ন লাভা উচ্চবিদ্যালয়। পাশেই বাচ্চাদের পড়াশোনা করার বিদ্যালয়। যখন পৌঁছানো গেল লাভায় তখন বাচ্চাদের ছুটি হয়েছে। কিযে মিষ্টি লাগছে ওদের যেন একেকটি পাহাড়ী ফুল। যত্নে ঈশ্বর সাজিয়েছেন। 
তার মাঝে বড়ো বিদ্যালয়ের জলযোগের সময় হয়েছে। ঘন্টাপড়লো -ওরা কেও সংলগ্ন মাঠে খেলা শুরুকরল -আবার কেও নিজেদের ভাষায় বাকবিনিময়ে  মশগুল।  
একটি জলাধার প্রকল্পের কাজ ও নজরে এলো। খাওয়া দাওয়ার পর, মানে পেটের খিদে মিটিয়ে মনের খিদে মেটাতে তখন বেশ লাগছে।  লাভা আসার পুর্বে গাড়িচালক ঋষি বা ঋষভ ভিউপয়েন্ট ঘুড়িয়ে নিয়ে এল। ঋষভ এর রাস্তা খুব বন্ধুর। গাড়ি আটকে যাই যাই তখন প্রকৃতি দেখব কী -ঈশ্বর নাম জপছি। এভাবে যেতে যেতে প্রকৃতি কে যে ভাবে দেখাগেলো বর্ণনার অতীত। পাখির ডাক -কোনপাখি ডাকছে তার নজর করার যো নেই।গাছের পাতার রঙে রংমিলান্তি। কাঞ্চনজঙ্ঘা বরফ সাজে সেজে আছে।মুকুট -গলার হার -টায়রা -টিকলি -নথ সবই পড়েছে। নীলাকাশের মাঝে -বরফ ভেঙে ডিঙিয়ে যাওয়া সাধ্যি নাই যে আমার ক্ষমতার কাছে।   ওপারে ভূটান -সেখানে রোদঝলমল। সবুজ ঘেরা পাহাড় মাঝে বাড়ির ছাদগুলো রোদের ছটা চোখ টানছে।দুপুরের পর থেকে পাহাড় অন্য রূপ ধারণ করে। সুতরাং সুন্দর কে দেখার জন্য এই মানব জাতিকে বাঁচতে হবে। অগত্যা ফিরতে হবে মাটির টানে।  ফেরার পথে আবার পাহাড় -ফুল -পাখি বন্ধুদের বিদায় জানানোর পালা। ওরাও  জানালো তবে বিদায় নয়। জানালো ভালথাকার মন্ত্র। বললো আবার দেখাহবে বন্ধু। 
মাধুরী অধরা। মনচক্ষু এর সমঝদার।মুখে  বোলে বা ছবিতে বোঝানো যায়না। সত্যি তুমি অধরা মাধুরী ধরেছো ছন্দ বন্ধনে। 

No comments:

Post a Comment