Saturday 20 May 2017

অধরা মাধুরী 
পঞ্চম পর্ব
 #মৌসুমী রায় 

গত রাত থেকে মৌয়ের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে সেই কথা টি। সেইটি প্রায় সে গীতা শ্লোকের মতো মনে মনে আউড়ে যাচ্ছে। কখন ভোর হবে আর সেই কথাটি সুরে বাজবে। প্রথমতঃ তরাই -ডুয়ার্সের আকর্ষণ। সঙ্গী হলো উত্তরবঙ্গের স্থানগুলির নামকরণ। লাটাগুড়ি -ময়নাগুড়ি -ধূপগুড়ি -বিন্নাগুড়ি -ফাঁসিদেওয়া -হাসিমারা -রাজাভাতখাওয়া -কুনকি -গরুমারা -জলদাপাড়া আরও কতকি। নামেই সে প্রেমে পড়েছে। তারসাথে সেই কথাটি --
কথাটি হল ফরাসী প্রবাদ এ আছে যে একটি গাছ অনেক সময় পুরো জঙ্গল ঢেকে দেয়। 
ডুয়ার্স তো গাছেগাছে বিপ্লব ঘটিয়েছে -আর তাঁর বিপ্লবী ভাই বোনেরা বিপ্লব অমর করেছে। সেই বিপ্লবীরা বনের জীবজন্তু -কীট -পতঙ্গ। ডুয়ার্সের জঙ্গল এর শিল্প প্রদর্শন নয় এর সৌন্দর্য শিল্প বিপ্লব। 

ভোরহতে না হতেই তৈরী জঙ্গল ভ্রমণের উদ্যেশ্যে। সাথে গাড়ীর চালক আর পরিচয় সহায়ক।ভোরের মিষ্টিহাওয়া -বনের মিষ্টি গন্ধ -পাখীর ডাক দিয়ে যাওয়া -ঝিঁঝি পোকার সুর -ছন্দবদ্ধ নিয়ে যাত্রা শুরু। যাত্রাপ্রসাদ জঙ্গল সফর। যাত্রাপ্রসাদ নামকরণ একটি হাতীর নামানুসারে।  যেতেযেতে ময়ূর পেখম টাকে রাস্তার উপর ঝাড়ু দিয়ে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গাড়ীর শব্দে ওমনি ফুড়ুৎ। পাখিরা গাছে দোল দিয়ে নানান সুরে গাইছে। বনমোরগ খুঁটেখুঁটে কী খাচ্ছে -চকিতে হরিনের আগমন -প্রস্থান। পরিচয় সহায়কের দৃষ্টির তারিফ করতে হয়।কোথায় ময়ূর তাঁর পেখম রেখেছে সেটিও চালক -সহায়কের নজর এড়ায় না। ভীষণ দক্ষ।  তাঁদের সরলতা অনুভব করলে  মনে শান্তি আনে।তাঁদের  মুখে হাসিলেগে -আর পর্যটক কে হাতী -গন্ডার -বাইসন দেখানোর চেষ্টা। পর্যটক বনের জীবজন্তু  দেখলেই ওদের কিযে আনন্দ না দেখলে বোঝানো যাবেনা।হ্যাঁ যাত্রাপ্রসাদে হাতীর দল ঘুরছে -নানান বর্ণ -প্রজাতির পাখির ঝটপট শব্দের  আসাযাওয়া মনের ছবিতে এঁকে রাখছে। যন্ত্র ছবিতে ধরতে গেলে তাঁদের খেলাখেলি দেখাযাবেনা। 
সফর সেরে লাটাগুড়ি তে ফেরা। লাটাগুড়িতেই ডেরা বাঁধা। আবার বিকেল বেলা মেডলা জঙ্গল। ... এখানে প্রথমে মহিষের গাড়ি করে জঙ্গলে পৌঁছনো। সেখানেও গন্ডার -বাইসন -হাতি -ময়ূর -ময়ূরী -হরিণের দেখা। সবে বৃষ্টি হয়েছে বড়বড় ঘাসে হাতীর থামের মত পা পড়তেই জলের ফোয়ারা -যা পূর্বে দেখিনি। লবনপাত্র রাখা আছে সেখানে লবন-গুড় খেতে আসে গণ্ডারের দল।সন্ধ্যে হবেহবে ফেরার পথে আদিবাসী নাচনী আখড়ায় নৃত্য -সংগীত প্রদর্শন। আদিবাসী সুর -নৃত্য ভঙ্গিতে আজও তাঁরা তাঁদের কৃষ্টি বাঁচিয়ে রেখেছে।  তার সাথে চা -বিস্কুট। টিকিট ব্যবস্থার মাধ্যমে এগুলি পরিচালিত।সাথে পাওয়া যাচ্ছে চাবি বন্ধন -ধূপকাঠি। সবই আদিবাসীদের তৈরী।টিকিটের সাথে এগুলি পর্যটকদের দেওয়াহয়।  এর অর্থ আদিবাসী কল্যাণে খরচ হয়। ২০০৬ সাল থেকে এর যাত্রাশুরু। রাত্রি হয়েছে ফিরতে ফিরতে জঙ্গলের মাঝবরাবর রাস্তা -গাড়িরচালক পিকু জানায় হঠাৎ হঠাৎ হাতি আসে এই রাস্তায়। জোৎস্না মাখানো বনের পথে বনের সৌন্দর্য উছলে পড়ছে।  মাঝেমাঝে গাড়ির আলো বন্ধকরে দলবদ্ধ জোনাকির আলো দেখাচ্ছে। রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছিলো। 
সেই আবেশ কাটতে না কাটতে পরের দিন টানা তিনঘন্টা জঙ্গল সফর। ভাম এরসাথে দেখা তাঁর গায়ের গন্ধ আতপ চালের মত। বাইসন তার বাচ্চাদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতি তার পরিবার নিয়ে বেরিয়েছে। পর্যটকদের ছবিও তুলতে দিচ্ছে। বেতগাছের পাতা ভেঙে সামনের পা দিয়ে আয়ত্তে এনে মুখে পুড়ছে। গরমকাল -হাতি স্নিগ্ধ হওয়ার জন্য মাটিসমেত ঘাস উপড়িয়ে পিঠে রাখছে। বকের সারি গন্ডারের পিঠে চেপে চলেছে। 
ওরা কত সুন্দর এই কথাটি মনেমনে উচ্চারিত হল। ---তোমার প্রেমে ধন্য করেছ মোরে ডুয়ার্স। ---চোপড়ামারী যাত্রাপথে হাতিনাদেখলেও ধনেশ পাখির দেখামিললো -দেখামিললো মদনটাক পাখির। প্রকৃতির সাথে তাদের সহাবস্থান মনের আনন্দ এক অন্য মাত্রা পায়। ---ডুয়ার্স বলছে "এখুনি কি হলো তোমার যাবার বেলা --হায় অতিথি। দেখ আমার হৃদয় তলে সারা রাতের আসন মেলা। "-----

No comments:

Post a Comment