Thursday 25 May 2017

বড়মা 
পর্ব -তিন 
এখন গ্রামের লোকজন সদয় কবরেজ পরিবারের উপর।কিভাবে সন্তান মানুষ করতে হবে। সবার উপরে তাদের দায়িত্ব ওই পঞ্চদশী যার অকালবৈধব্য নেমে এল।  তাঁর জীবন নির্বাহের বিধান দানের ব্যস্ততা- আলোচনা  তুঙ্গে। সেই যুগে ওই বাচ্চা মেয়েটির জীবন অসহনীয় করে তুলেছিল। প্রথমেই তাঁর চুলগুচ্ছ কেটে ফেলাহয়েছিল অনেকটা কদম ফুলের মত তাঁর আকৃতি।  সাদা খান শাড়ি কোন রঙের প্রবেশাধিকার নেই। নির্জলা একাদশীর উপবাস।প্রতিদিন সেদ্ধ পক্ক একবেলা অন্যবেলা খৈ -মুড়ি।
কেন জানিনা অল্প দিনের মধ্যেই মা -ছেলে -পিসিমার মধ্যে সখ্যতা তৈরী হয়েছিল। সমাজের সব নিয়ম কানুন মেনেছিল তাঁর মা ওই ছেলের মুখচেয়ে। মা -ছেলে কখনো বন্ধু তো আবার মা তাঁর অভিভাবক। দুই মহিলা তখন থেকেই শক্ত মনের অধিকারী হলেন। ছেলেকে মানুষ করতে হবে। সম্পত্তি রক্ষা করতে হবে। গাঁয়ে বলাবলি করতে লাগল নানান কথা -শুরুহল সমালোচনা।দুই নারী এক কান খোলা রাখলেন অন্য কান বন্ধ রাখলেন। 
ছেলে কে নবদ্বীপ টোলে পাঠ নিতে পাঠানো হল। সে তাঁর নিজের মত বড় হতে লাগল। এনারা বাড়ির হাল ধরলেন। 
কয়েক বছর পরে হঠাৎ সদর দরজার দিক থেকে ডাক এল "মা -পিসিমা আমি এসেপড়েছি -কোথায় গেলে তোমরা "--পড়াশোনা শেষ করে বাড়ি ফিরলো। ছেলে তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে কবিরাজ হলেন। বাড়িতেই ওষুধ তৈরীর ব্যবস্থা করলেন। নানান লোকজন নানান কাজে ব্যস্ত। ওষুধ ঘর তৈরী হল। রুগীর আনাগোনা বাড়তে লাগল। দূরদূরান্ত থেকে রুগীর ঢল্। ছেলের হাতযশ খুব। চতুর্দিকে নাম -ডাক। মা -পিসিমা আনন্দে মশগুল। সেও তাঁর বাবার মত ডাক এ যায়। সেও নিদান দিতে পারে -দিতে পারে  পক্ষাঘাত গ্রস্থ রুগী কে স্বাবলম্বী হওয়ার মকরধ্বজ।
 নাড়ির স্পন্দনের ওঠা নামার ফলে নানাবিধ অসুখের ফরমান। ওষুধে আরোগ্য লাভ করায় রুগী তাঁর নবজীবনের আনন্দে । তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র। সকলে বলে বাপের ছেলে। মায়ের কথা -পিসিমার কথা কেও বলেনা। বলেনা তো বলেনা তাতে ওঁনাদের কিচ্ছুটি যায় আসে না।

ছেলে বড় হয়েছে এবার বিবাহের তোড়জোড় চলছে। ছেলের তাঁর মা এর উপর সম্পূর্ণ ভরসা। যথা সময় কনের খোঁজ মিলল। তাঁকে চাক্ষুস করতে হবে। পাশের গাঁয়ে থাকে তাঁর বাল্য বন্ধু। তাঁর সাথেই মেয়ে দেখতে যাওয়া। কনে  সপ্তম মানে পড়ছে। সুশ্রী ও বটে।ধুতি -পাঞ্জাবী পড়ে  ছেলে- ছেলের বন্ধু কনে দেখতে গেলেন । নাম -ধাম জানলেন মেয়ের। মেয়েটি কে প্রশ্ন করলেন তাঁর" তর্কবাচস্পতি "এবং "কুজ্ঝ্বটিকা"--বানান জানা আছে কী ? মেয়েটির উত্তর- তাঁর দ্বিতীয় ভাগ পড়া আছে। অনায়াসে উত্তর । তথা বানান জানাল    মেয়েটি। গান জানে কিনা প্রশ্নেরও উত্তর এল গানের মাধ্যমে। "বকুল বিছানো পথে তুমি যে গিয়াছ চলিয়া "--সুর -বেসুরের মধ্যে মন্দ লাগল না। মেয়েটির সরলতা তাঁদের ভাল লেগেছিল। মা -পিসিমা কে ছেলের সম্মতি জানান হল। ধুমধাম করে বিবাহ সম্পন্ন হল। কবরেজ বাড়ি সরগরম। -----

No comments:

Post a Comment