Wednesday 24 May 2017

বড়মা 
পর্ব -দুই 
পত্নী বিয়োগ চিন্তার সাগর এ ভাসছেন  কবরেজ মশায়। ইতিমধ্যে রুগী দেখার ডাক এসেছে বর্ধমান জেলার মাদারবাটি থেকে। বোনের কাছে সদ্য মাতৃহারা ছেলেকে বুঝিয়েসুঝিয়ে রেখে গেলেন। স্বাস্থ্য পরিষেবা তাঁর জীবনের মন্ত্র।বেশিরভাগটাই তাঁর বীনাপারিশ্রমিকের।তাঁর নামের জয়গান করেন লোকজন।  বিপদ -আপদ সহায় সম্বলহীনদের তিনি নিদান কারী আবার আরোগ্যনিকেতন। 
তিনি ডাকের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন সাথে পাহারাদার - সেই বংশ দণ্ড -ওষুধের পুঁটলি  অন্যান্য সামগ্রী। এবারের ফেরার আর নাম গন্ধ নেই তাঁর। লোকমারফত আসা -যাওয়ার খবর পাওয়া যেত। সেও হচ্ছেনা। বর্ধমান গ্রাম কে  আগের লোকের মুখেমুখে বলা হত  পশ্চিমের দেশ। গাঁ -গঞ্জের লোক চাষাবাদের সময় খাটতে যায়।তাদের মারফৎ খবরাখবর পাওয়া যেত।  এখন সেই মরশুম নয়। খরা চলছে।  
ভাবনাচিন্তার মধ্যে হঠাৎ সন্ধ্যে নামার মুখে গোধূলি বেলায় গরুরগাড়ি এসে থামল কবরেজবাড়ির সদর দরজায়। কবরেজ মশায়ের বোন ভাইপো কে নিয়ে দেখতে এসেছেন তাঁর সাথে প্রতিবেশীদের জটলা "কে এলা গো লতুন মানুষ গাঁয়ে"। 
এক পঞ্চদশী শ্যামলা বরণী ঘোমটা মাথায় নিরাভরণী কন্যে। পা দুটি আলতা মাখা। উঁচুকরে গাছকোমড় শাড়ী তে বেশ লাগছে। ঘরে প্রবেশ করে ছেলেকে কবরেজ মশায় বলেন এখনথেকে এই তোমার মা।বোনকে বলেন তোর সই। 
মা এবং পুত্রের বয়সের ব্যবধান চার -পাঁচ  বছরের।কয়েকমাস মাস কাটলো হঠাৎ কবরেজ মশাইয়ের শরীরে ক্লান্তি ঘিরে এল। চিকিৎসক মানুষ নিজের আয়ুকাল সম্বন্ধে সচেতন। তিনি চিন্তা ভাবনা করে  এই গ্রাম থেকে চারমাইল দূরে একগ্রামে জায়গা জমি  কিনে বাড়িঘর তৈরী করলেন। সেখানে তাঁর স্বজাতির বাস।স্ত্রী -ছেলে -বোন দের সঙ্গে নিয়ে ওই গ্রামে বাস করতে শুরু করেন।তাঁর যাতায়াত ছিল দুই গ্রামেই। গ্রামের লোকজন কবরেজমশাই এর যাবার দিন অরন্ধন পালন করেছিল।
 নতুন গাঁয়ে যাবার দিন থেকে অসহযোগিতা। একদিকে তাঁর নাম ডাক -অপরদিকে দ্বিতীয় বার -----।মোড়লদের আঁচে ঘি পড়েছিল সেদিন থেকে।  রাশভারী মানুষটির সামনে কেউ কিছু না বললেও কথা চালাচালি চলছে তার খবর আনছে তার ভগিনী। কবরেজ মশায় তার ধারধারেননা। বছর ঘুরতে না ঘুরতে গ্রীষ্মের দুপুরে মাত্র ঊনচল্লিশ বৎসর এ  সন্যাস রোগে আক্রান্ত। ঘৃতকুমারী   মাথায় লাগাতে বলার অবসরটুকু পেয়েছিলেন। কিছু ক্ষণের মধ্যে সবকিছু শেষ। গাঁয়ের লোকজন জমায়েত হল। নানান বিধান দিতে লাগলেন। সবচেয়ে বড়বিধান দাগলেন গাঁয়ের মোড়ল।বিধানটি হল কবরেজমশাই এ গাঁয়ে হঠাৎ ঘরবেঁধেছেন সুতরাং তিনি এখনও তাঁদের পঙতিতে গ্রহণ -বিসর্জন এর যোগ্য নন। মৃত দেহ পড়ে রইলো। কেও ছুঁলো না।
 অথই জলে  বালিকাবধূ -বালক পুত্রটি এবং কবরেজমশাই এর ভগিনী। বাচ্চাটাকে আঁকড়ে মা এবং পিসিমার কান্নায় -- কান পাতা কঠিন হলেও দুই কান সমৃদ্ধ মানুষের অভাব প্রকট । বাড়ির দেওয়াল থেকে কান্না ফিরেফিরে আসছিল।
খারাপ খবর মুখেমুখে রটতে থাকে।  লোক এল তাঁর সেই পুরনো নিজের গ্রামথেকে।অন্য গ্রামে থাকতেন কবরেজমশাই এর এক তুতো ভাই। তিনিও এলেন। প্রায় একদিন পরে তাঁর পরবর্তী কাজকর্ম সম্পন্ন হল।পরের দিনথেকে শুরু হল নতুন দিনলিপি। দিনলিপির সাল -তারিখ ছেলেটির মা এবং পিসিমা।ছেলেটি বড় হতে লাগল -------   

No comments:

Post a Comment