Sunday 25 August 2019

আবর্তন  
#মৌসুমী রায় 
চার দেওয়ালের একমুঠো মনের কুঠুরি এঁটে বসে  থাকেনি অনন্যা।  নামের মাঝেই লুকিয়ে ছিল বর্ণনা।
 ছোট্ট থেকে সেই ভাবে পায় নি মা ,বাবার আদর যত্ন। বাসা বেঁধেছিল মনে, হবে এক   আলোকবর্তিকা।  চরম অভাব  তাঁকে কাবু করতে পারেনি। আক্ষেপ ছিল। কিন্তু ভাগ্যের দোষারোপ ছিলনা তাঁর। 
  ছোট কুঁড়ে ঘরেই বড় হয়ে একের পর এক মাইল স্টোন পেরিয়ে কলকাতার নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী।
 ও বোঝে মানুষ হওয়া। ধনী ,গরীব নয়। 
 অজান্তেই ভালোবেসে ফেলে একজনকে। সেও ভালো মানুষ। কয়েক বছর পর তুমুল এক ঝড় লন্ডভন্ড করে দেয় সমস্ত কিছুই। পরিণতি  পায়নি। তবুও অনন্যা থেমে যায়নি। নানান প্রতিভা আজও বিকশিত তাঁর। ও  জানে  থেমে গেলে স্বার্থপর সমাজ তাঁকে নিয়ে সমালোচনা করবে।
 ত্রুটি খুঁজবে........................
আজও নতুন পথেই হাঁটছে ও..................... 
 হয়ত অনেক বড় মানুষের খোঁজে অনন্যা..........................
এটাই ওঁর স্পিরিট ........................................
 শাবাস অনন্যা .................................

লগনি মা

লগনি মা...
#মৌসুমী রায়
জানিস লগনি মা,আমি আজ যেই খানটিতে  রইছি ,সেই খান টির  গল্প বুলব তোকে। আমি লতুন ভাষা শিখেছি,চাল চলন সবই লতুন রে। কিন্তু শহুরে ভাষা টো তে লিখবো নাই... ইটোতে জি মাটির গন্ধ নাই রে লগনি মা।
তা শুন, সেই তোর ছুটো বেলাকার  কামিন  থেকে মেঝেন থেকে আমি আজকের দামিণি হইছি তারই গল্প বুলব বুঝলি... ঘুমান গেলি নাকি? চুখে জল দে লয়ত সূর্ষের ত্যাল ডড্ডিঙ লে খানিক।
বিশ বছর পূর্বের কথা, তু গাঁয়ের বাবুদের বাড়ি গুলাতে কামিন করতিস ,ওই জি রে গোয়াল কারতিস,খিরকি হোতে সদর পর্যন্থই গোবর ছড়া দিতিস ,দিয়ালে ঘসি দিতিস ,পোড়া পোড়া হাঁড়ি ,কড়া গুলান খ্যারের ল্যা তা তে ছাই মাখিঙ লেচে লেচে মাঝ তিস! সব দেখ্যাছি। ওরা তুকে তো কাজ করিং লিথই আবার আমাকেও বুলথ ইটো উটো করতে।
তু কোমড়ে কাপড় খান গাছ কোমড় কোরে ঝুঁটি নারিং বুলথিস,"হ্যাঁ গো বাবু , তুমরা কি ভাব যে আমার বিটি টাও আমার মথই কামিন গিরি করুক?"... সেই শুনে বাবুদের গিন্নি রাও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য কোরে ঘোমটার আড়ালে খেমটা দিত। আর বুলথ ,এর বাড়ীর বউ,ঝি হয়েই মান সম্মান নাই তো তা আবার তোদের মতো কামিন দের...

সব শুনথাম, তু নিষেধ করথিস ; তাও যেথাম। ক্যানে বুল দেখি? শুন ওদের বাড়িতে একটা ব্যাটা আমার ই বয়সী ... উ কত কত বই আউড়াইত, কত মনীষী দের গল্প গাথা পড়থ  ..রবি ঠাকুর,রামকৃষ্ণ,বিবেকানন্দ, শরৎ চন্দ্র,বঙ্কিমচন্দ্র, তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ..অ রি লোভে লোভে যেথাম। কত জ্ঞানের কথা, মেয়েদের দুগ্গতির কথা আরও কত কথা ,নিজের আত্ম সম্মানের কথা। আমার শুনথে খুব ভালো লাগথ। আমার তো আর বই কেনার খ্যামতা নাই। ঘরে কুপির লম্ফ। সে আমার সাঁজ এর পরেই লিভে যেথ।

এরই মাঝে অদের ব্যাটা বড় হচে আর বই ও বদলাছে। আমার ও খুব মজা হছে। ক্যানে বল? পুরানো বই গুলান যখন ফেলিং দিথ আমি কুরিং লিথাম। গাঁয়ের ইস্কুলে বাবুদের বাড়ির ব্যাটার ঠিক নীচের কেলাসেই পড়থাম। ওর লেগে ,বই গুলান তো পাব। আমি পেরথম হূত্যাম লয় বল?
সেই সি বার বড় ইস্কুলে রবি ঠাকুরের চন্ডালিকা হবে, কেহু আর প্রকৃতির পাঠ লিলো নাই। বুঝে নি অরা, প্রকৃতির মাধ্যে কি আগুন আছে। ভালোই হোল , মুই কে পাঠ টো দিলে। ডাগর চোখ, কালো রং অদের কোনো নকল প্রলেপ দিতে হোল না মুখে আমার। লাটক শুরুর আগে পর্যন্থই  অরা আমাকে সাথে লিথই না। সাঁওতাল বটি কি না। কিন্তু সবাই বিশ্বাস যেথ , দামিণি সব সাঁওতাল দের মতন লয়। উ কারও কথা শুনে রই না। মুখ ঝামুটি দেয়।

এই মুখ ঝামুটি একদিন প্রেথ্থম বাবুর বাড়িতেই। লগনি কে বাবুরা বুলছে, তোর বিটি টিকে কামিন এ লাগিং দে। মুখ ঝামুটি দিয়েছিলম। তুমার ব্যাটা তো হনু ! উ কাজে লাগবে পৃথিবীর লয়! আমি সাঁওতাল এর বিটি তাই কামিন হবো.. কে অধিকার দিয়াছে তুমাদের ,আমাদের জীবন লিয়ে ছিনিমিনি খেলার।
সব মুনে গাঁথা আছে গো বাবু; যে দিন আমার বাপ টা মদ গিলে গিলে অকালে মলো...আমার মা টো ডাগর ছিল .. আমি ছোট ছিলাম.. তুমরাই গাঁয়ের মাথারা নিদান দিলে ,শিংমুড়া আমার বাপ তো বটে! বাপ টো কে কেউ কাঁধ দিলে না গো। আমরা এক ঘর সাঁওতাল। ভাই নাই, আমি বাপের বিটি, আমাকেও দিতে দিলে না কাঁধ। বুলছে বিটির অধিকার নাই কাঁধ দিবার। মা,বিটি আছুড়ে আছুড়ে কেঁদে গেলাম। কেহু শুনে না গো। বাপ তোকে একটা তালপাতার ডোঙা কোরে দড়ি বেঁধে ছেঁছুড়ে লিয়ে বিলের ধারে ফেলিং দিলে। পুড়ালে ও না। বুলছে পুড়া ধুম্যা গাঁয়ের অশুদ্ধি ঘটাবেক।

সি দিন হোতে আমার জেদ হোলো ,জানিস লগনি মা। আমিও দেখিঙ দিব বাবুদের তোর ব্যাটা টো যদি ব্যাটা তবে লগনির বিটি টিও বিটি...
কিন্তু বিশ্বাস যা, বাবুদের ব্যাটা টো খারাপ লয়।
ও গোপনে আমাকে বই দিয়াছে। গাঁয়ে উচ্চ মাধ্যমিক এর পরে ইংরেজি নিয়ে পড়ল্যাম । তখন পেরাইভেট দিথাম। যা পয়সা পেথাম অতেই হোত। তু তো সবই করেছিস। এর লেগে। এখুন আর কাজ করবি নাই বুঝলি।

শুন ,
মা,তু তো এখন গাঁয়ে। ক মাস পরই তুকে আমার লতুন বাসায় আনব। কত আলা, গাঁয়ের  কলাগাছের থোরের  মতুন ,  কলঘর টো দেখবি আর লাচবি। আমাদের ঘরের থেকেও বড় এই কলঘর। গরম জল ,ঠান্ডা জল এক খান কল থেকেই নামে ।  গরমে আর তোর কষ্ট হবেক নাই । ঘর টই তো পুরো টাই ঠান্ডা।

তু আর আমি থাকব। বাপ টোর একটা ফটক ও নাই। জানিস বাপের একটো ফটোক আঁকায় ছি। দেখিস তো ঠিক হৈছে কি না।

মজার খপর টো লে এবাটি। আমার আপিসে বাবুর ব্যাটা টা কাজ করে। অর এখন ম্যানেজার আমি । যোগ্যতা তেই পেঁয়াছি। অকে আমি খুব পছন্দ কর্থ্যম। অন্য লেগে লয়। এত বড় হোতে উই তো আমায় সাহায্য করেছে.. আর আমাদের ওই মনীষী গণ...
ভালো থাকিস মা.. সামনের মাসেই তোকে লিয়ে আসব। বাড়িতে তোর সাথে এই ভাষা তেই বুলব..চিন্তা করিস না.. আপিসে তো ইংরেজী বলতে হয়...
তোর দামিণি...

Saturday 27 April 2019

বৃষ্টি ধোয়া চোখে

বৃষ্টি ধোয়া চোখে..
পলক হীনা মেঘে।
চোখের, এত  কোণ এবং দিকের উৎকৃষ্টতা মনকে সমৃদ্ধ করল।
এত ঝঞ্ঝা র মাঝে এক পলকে, একপশলা বৃষ্টি যেন এলো।।
চোখের ভাষা,পড়ে,দেখে,উচ্চারণে র শব্দ শুনে ,ছন্দ আবরণের পরী।
অমূল্য একটি উপহার ; একথা বলতে পারি।।
বন্ধু , শত্রু  চোখের লেখা পড়বে মেয়ে এবং ছেলে ।
মেঘলা দিনে চেয়ে রবে, হঠাৎ বৃষ্টি এলে।।
চোখের ভাষায় ভাসবে, অকারণ হোলে।
তোমার ভালোবাসায় ,তোমায় হঠাৎ মনে এলে।।
এতো লেখার মাঝেও ,এই লেখার চয়ণ খানি।
যত্নে , দেখব তোমার ভালোবাসার চোখের চাহনি।।
                        #   মৌসুমী।।

মাণিক আমার ওরে

মাণিক আমার ওরে

#মৌসুমী
চাঁদ টা কেন বাড়ে কমে সূয্যি কেন ওঠে,প্রশ্নের চোটে,
খোকারা আজ কয় না কথা মায়েরা কান্না চাপে ঠোঁটে।

মায়েদের সেই শিক্ষার বুলি,
আজকে ওই ওঁদের ভরেছে ঝুলি।

তাই তো তাঁরা বক বকানি কম করে,
অনেক দিন না দেখার পরে হঠাৎ দেখা
,মা বলে মাণিক আমার ওরে।

ভয় করো কেন মা গো,আমি তোমার ছেলে,
আমায়  যখন তখন ডেকো, তোমার হঠাৎ কান্না পেলে।।

সকাল সাঁঝে  মন কেমনের ছলে,
আমিও খানিক ঘুরে এলাম
ছেলের ছোট্ট বেলার কালে।

মনকেমনের রাতে

মন কেমনের রাতে

#মৌসুমী
মন কেমনে ,মনের আকাশ  দেখো মেঘলা,
সূর্য বুঝি ডুব দিয়েছে, তোমায় রেখে একেলা!

দেখা হলে দুষ্টু কে দিও  কষে খুব বকে!

জানতে চেও ,রোদকে  কেন তুলেছে সে  তাকে?

টুপটাপ শিশির শব্দে খোলে ঊষা তোরণ,
জেনেও বুঝে ও বুঝি তোমার নেই তো স্মরণ!

লুকালে ,জানো তো হারাবে সব আলো,

অচেনাকে চিনে নিতে মোছাও সকল কালো।

দেখ ঐ ,তারারা বসে মন খারাপের রাতে,
গোঁসা  পুষে রেখো না  আর নতুন প্রভাতে ।

তুমি রাগ করেছ, তাই তো চাঁদ হাসেনি আকাশে,

সত্যি বলছি তোমায় ছাড়া একলা , মলয় বাতাসে।

আকাশও আজ, একলা বসে কাঁদে নিশীথ রাতে,
  তুমি হেসে তোরণ ,যেন খুলে দিও নবীনপ্রাতে।

আজকে তুমি মেঘলা ,কালকে এসো ঝলমলিয়ে,

তোমার আশায় ভাসবে নব হরষে  ঝকমকিয়ে ।।।।

বাঙালিয়ানা

সেই...দিন ,সে বাঙালিয়ানা ছিল। আলগোছা জীবনযাপন,বাড়িতে অনাবশ্যক জলসা সাথে চা,টা  এবং ভালোবাসা মেশানো নির্ভেজাল আড্ডা। খোঁজখবর নিয়ে ভালোথাকার কথা চলত। হঠাৎ অতিথি এলে,ডাল ,ভাত আর ভালোবাসা পরিবেশন এবং হাতে এঁটো চচ্চড়ি না হওয়া পর্যন্ত আর খাওয়া শেষ হোতে না হতেই  ও বেলার রান্না ঘরে কী রান্না হবে তাঁর আলোচনা।

রাঙা পিসি,ফুল খুড়িমা, সেজো জেঠিমা, মেজ কাকিমা,ন কাকা ডাক ও প্রায় বিস্মৃত। সেই নতুন পিসি ,মাসির হাতের তৈরি লেবু ,চিনি জলের শরবত আর তার সাথে মাটির কুঁজোর ভিজে কাপড় জড়ানো জলের সোঁদা সোঁদা গন্ধ। গ্রীষ্মের উপরি পাওনা। এবাড়ির রান্না ওবাড়ির রান্না বাটিতে চালান আবার রান্নার ফাঁকে কার কী রান্না হোল তার খোঁজখবর। অমুক দিদার সুক্ত, ন মাসির ডাঁটা পোস্ত, বকুল ফুলের সইয়ের দিদার বাটি চচ্চড়ি র স্বাদ মুখে আজও লেগে থাকার গল্প।

ভালো দু একটা সিনেমার গল্প, ভাল গানের আলোচনা, রেডিওর বিকেল চারটে থেকে  ছায়াছবির গান,রেডিওর নাটক এ শুক্লা বন্দ্যোপাধ্যায় এর  কন্ঠ স্বর আহা।

সকাল.. সন্ধ্যে এবাড়ির হিয়া নয়ত ওবাড়ির শ্রেয়ণ দের উচ্চঃস্বরে পড়ার আওয়াজ,পাড়ায় স্নেহময় অথবা স্নেহময়ীদের ভালো রেজাল্ট এ খুশি হওয়া  ,সন্ধ্যে গড়িয়ে আড্ডা দিলে ভালোবাসা মেশানো ধমক, তারা নিজের না হলেও।

অন্য বাড়ির ছেলে মেয়ের বিয়ে হলে,অনাবশ্যক আলোচনা,এবারে মেয়ের বিয়ে বেশি নয়ত ছেলের বিয়ে বেশি।
আবার এবাড়ির শশা মুলো তো ওবাড়ির আম ,কাঁঠাল বিনামূল্যে যাতায়াত করত। গরমের সন্ধ্যের পর কুলফি মালায়ের ঝুমঝুম যন্ত্রের আওয়াজের জানান স দেওয়া উফফফফ।
বাড়িতে অতিথি আসুক আর নাই আসুক বিকেল বিকেল গা ধুয়ে এক খাবলা পাউডার নিজে এবং বাড়ির অন্যদের ও মাখিয়ে শান্তি পাওয়া।
কত আনন্দ মেশানো জীবন। টিভি সিরিয়ালের যন্ত্রণা টাও ছিল না তাই স্বরযন্ত্রের সময় নেই।
এই বাঙালিয়ানা ভাবতেই বেশ আনমনা হয়ে যাই। নাইবা রইল সাথে ভাবতে কী এসে যায়!!

Thursday 28 March 2019

অর্ধেক আকাশ

অর্ধেক আকাশ
        #মৌসুমী রায়

দূরে দাঁড়িয়ে বিশাল আকারে অর্জুন।চারপাশে পরিবেষ্টিত কৃষ্ণ চূড়া ,রাধা চূড়া,পলাশ ,পারুল আর খানিক দূরে শিমুল।
কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়ার কথার মাঝে রাধাচূড়ার আনন্দে আত্মহারা র প্রতিফলন "সমুদ্রে শয্যা পেতেছি কানাই,এখন আমার আর শিশিরের ভয় নেই"।কেন গো রাধে এমন ভাবনা আমি তো তোমায় আমার আগে স্থান দিয়েছি।সকল  যে রাধাকৃষ্ণ বলে ,কৃষ্ণরাধা কেও বলেনা।
না,সে কথা নয়। শোন তবে সখা,একদিন অর্জুন হঠাৎ বলে ওঠে তোমরা জেনে রেখো,"তোমাদের মাঝে আমি অর্জুন,আমি আর্য পুত্র।আমি এক আকাশ,আমার দয়ায় তোমরা গলি ঘুপচিতে ঠাঁই পেয়েছ ,মনে রেখো আমি ধ্বনন্তরি।মহৌষধী,আমি রূপে গুণে শ্রেষ্ঠ।"। শিমুল,পলাশ,কেও প্রতিবাদ করেনি।আমি আর পারুল ও কিছুবলিনি ।কষ্টও পাইনি। নিজের অধিকার নিজেকেই বুঝতে হবে এটাই আমি আর পারুল প্রতিজ্ঞা করেছি।
বসন্তের এক আগুন ছোটা দিনে এই পথদিয়েই যাচ্ছিল এক সাঁওতালি মেয়ে।থমকে দাঁড়ায় অর্জুনের কাছে।বলে"হ্যাঁ গো অর্জুন,তুমার বড়াই বড় শুনছি পথে ঘাটে।তুমি বুলি আওড়াই ছ তুমি আর্য আর সকলি অনার্য।শুন তবে । দেখ এই মেঝেন  এর কৃষ্ণবরণ এর রূপ দেখে কবি পাগল পাড়া হয়ে বলেছে কৃষ্ণকলি । তোমাকেও বলেছে অর্জুন ।দুই জনই তার কাছে আমরা সমান সমান।দেখো দেখি  রাধাচূড়া কেমন মাটির ওপর শয্যা পেতে রাখে,সেখানটিতে তোমার রূপ আরও খুলে যায়।চলতে পথে পায়ে পায়ে নূপুর বাজে।রূপ দেখো রাধাচূড়া আর পারুলের ,কি যেন বলে গো এখুন কন্ট্রাস্ট না কি।তোমার রূপ দেখার আগেই রাধাচূড়া,পারুল পথ দেখিঙ আনে।মানতেই হবে।পলাশ ,শিমুল আগুন রঙা ,তোমার  আকাশের চতুর্দিক রঙীন করেছে।আর এখানে
এই মেঝেন না রইলে তোমায় দেখবে কে? ওই আকাশ পানে চেয়ে দেখো আধখানা তুমার আর আধখানা আমার।ভাগের চিহ্নত নাই। শুনতে শুনতে অর্জুন মগ্ন।ঘোরে আছে।কখন যে মেঝেন পলাইছে টের পাইনি সে।
ডাক পাড়ে ও মেঝেন যেয়ো না,আরও খানিক বোস।তোমার গুণের রূপে আমি মুগ্ধ।
অর্জুন ভাবে ,মিছেই অহংকারে নিজেকে আটকে রেখেছিলাম এতদিন। যখন আমার বাকল ছাড়ে কি কদাকার লাগে আমায় ,ভেবে দেখিনি।কিন্তু পলাশ,শিমুল,রাধাচূড়া,পারুল এদের রূপ তো একই থাকে।বসন্তে রাধাচূড়া আর পলাশ সাজুগুজু করে। কি সুন্দরী লাগে ওদের।ওদের ছাড়া আমার অহংকার অপূর্ণ।তোমরা নারী আছো বলেই আমরা পুরুষ রা এত সুন্দর।তোমারা না থাকলে আমাদের জন্ম অধরা থেকে যেত।শুধু বসন্তে তোমাদের সৌন্দর্য দেখতে সারা বছর যত্নে রাখতে হয়।তবেই তার পূর্ণতা পায়।এক বসন্তে উপভোগ করে বছর ভোর উপেক্ষা করলে ফি বসন্তে তোমার দেখা পাবনা সখী।
কেও আর্য,অনার্য নই।আমরা এক আকাশের দুইটি অঙ্গ।অলিন্দ ,নিলয়।আমরা দুটি চক্ষু,দুটি ফুসফুস।একা আমরা প্রতিরোধ্য।কিন্তু সঙ্গে চলা নারী ,পুরুষ অপ্রতিরোধ্য।
এই শিক্ষা আমায় দিল আজ নাম না জানা এক গাঁয়ের মেঝেন।না গো ,সে আমার পরম প্রেমের কৃষ্ণকলি।অনেক দিনের মনের মানুষ বসন্তের আকাশ কে রঙ্গিন করে গেল। বসন্ত আজ রঙিন হোল তোমার ছোঁয়ায় ।দেখ দেখি আমার জ্ঞান ,চোখ  ফোটাতেও তোমার ছোঁয়া।আমার জন্ম ও তোমার ভালোবাসায়।
ও যেন কে....?
ও? ও নারী....
অর্ধেক আকাশ... না! ভুল হোল একটু!
ও ! ও পুরো এক আকাশ ,সীমাহীন ।।

নারী

নারী

#মৌসুমী
যে মেয়েটা,গর্ভেই ভ্রূণ পরীক্ষায় ; জীবনে ইতিমধ্যে "ইতি " টেনেছিল! কিংবা জানবার পরেও মা এর গর্ভে আধ পেট খাবারেরও  আধপেট খেয়েছিল:  সংসার এভাবেই , হ্যাঁ এভাবেই অপুষ্টি জনিত রোগে ভুগিয়ে মারতে চেয়েছিল!

কিংবা একটু হেলা ছেদ্দা করে,   চোদ্দ বছর হোতে না হতেই অপয়া কে এক অকেজো অপদার্থ  ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে ছিল?
শ্বশুরবাড়ির গঞ্জনা লাঞ্ছনা,অত্যাচার নামক ; নিত্য দিনের খাদ্য গ্রহণ করতে করতেই নাবালিকা গর্ভবতী হয়ে গেল ! পরপর কন্যা হওয়ার অপরাধে ,পুত্রের আশায় ,জরায়ু টাকে ঝাঁঝরা করে ,  নিংড়ে নিয়ে ; স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে  , নিজেই বাঁচার চেষ্টা করল, মেয়েদেরও মানুষ হোতে শেখাল ?
ইতি টানতে চাওয়া!!!
কোনো মেয়ে আজ লেখাপড়া শিখে,আবার কোনজন খেলাধূলা তে,এমনকি সুগৃহিনীও  হলো!

গর্বিত হয়ে বলে, তাঁরা কন্যা রত্ন! সেই বাতিল রেখা  টানা মেয়েরাই ,বাধায় বাঁধা না থেকে : 
নিজের গর্ভ কে সম্মান দেখিয়ে , বর্তমানে
" শ্রীচরনেষু॥
শ্রীচরনেষু র অর্থ, পুরুষের তুলনায় কয়েকগুণ বেশী ধৈর্য্য ও সহ্যের  সমাহার !! বিস্ময়ে তাকাই চারিধার??
সুতরাং,
এক আকাশ আশা +ধৈর্য্য  +সহ্য +আত্মসম্মান = শ্রীচরনেষু মা.....

বৃষ্টি ধোয়া

বৃষ্টি ধোয়া চোখে..
পলক হীনা মেঘে।

চোখের, এত  কোণ এবং দিকের উৎকৃষ্টতা মনকে সমৃদ্ধ করল।
এত ঝঞ্ঝা র মাঝে এক পলকে, একপশলা বৃষ্টি যেন এলো।।

চোখের ভাষা,পড়ে,দেখে,উচ্চারণে র শব্দ শুনে ,ছন্দ আবরণের পরী।
অমূল্য একটি উপহার ; একথা বলতে পারি।।

বন্ধু , শত্রু  চোখের লেখা পড়বে মেয়ে এবং ছেলে ।
মেঘলা দিনে চেয়ে রবে, হঠাৎ বৃষ্টি এলে।।

চোখের ভাষায় ভাসবে, অকারণ হোলে।
তোমার ভালোবাসায় ,তোমায় হঠাৎ মনে এলে।।

এতো লেখার মাঝেও ,এই লেখার চয়ণ খানি।
যত্নে , দেখব তোমার ভালোবাসার চোখের চাহনি।।
                        #   মৌসুমী।।

অবেলায় এসেছ

অবেলায় এসেছ

#মৌসুমী
নয়ন সম্মুখে কে বলে তুই
নাই?
হৃদয়ের মাঝে যে চিরকাল তোর
ঠাঁই।
                 .... ... ... ... ...
যখন ভাবি যেমন ছিলিস তেমন
থাকিস,
মনে হয় এও অনেক হয়েছে আর কিছুই বলার নেই , যখন পিছন
ফিরিস !

বলা কথা গুলোও মনে হয় ,হয়নি বলা
শেষ,
বলতে গেলে গুলিয়ে ফেলি,অভিমানে দলা পাকিয়ে, ফুরায় কথার
রেশ।

কেও কথা রাখেনা ! রেখেছেও যতনে
রোপণে,
যদি মনে পড়ে ফিরে দেখিস ,যাচাই করিস
ওই স্বাতী নক্ষত্রর দিকে, শুধাস
গোপনে।

ভাবনারা আজ হারিয়ে যায় বাউন্ডুলের
পথে,
ভাবতে বসে আকাশ কুসুম কল্পনার ,রোদন ভরে বসন্তের উদাস হাওয়ায়  চিকনপাতার
রথে।

এমন দিন ক্ষণ বাঁধবে না বুঝি কী আর
আশার ঘরে?
তুই যখন সামনে থাকিস অনেক অভিমানে ,কত না  কথা সাজিয়ে রাখা
থরে থরে।

তুই সামনে থাকলে অনেক কথা বলতে চাই এক্ষুণি
এই মুহূর্তে,
আজ,
তোর ফিরে আসার অপেক্ষায় অরুন্ধতীর
জোছনা ভরা ...
দিঘল চোখে আঁধার ঘরে ঘুম না আসা
রাতে।।

বাজল ব্যথা

বাজল ব্যথা
#মৌসুমী
সুরের টানে হঠাৎ জেগে ভোর রাতে,
ভৈরবী আজ মিশে গেছে ললিত রাগে।।

একপিঠ এলোচুল ,ভোরের স্নানে  রাঙা কপোল,
চোখবুজে অন্য মনে ভৈরবী শেষে,ভাঙল আগোল।।

মায়ের কান্না ভেজা চুমেছে আলতো ঠোঁটে,
বাজল  যখন , আঙুল তিনটি বিশ্ব তটে।।

তান পুরাতে কি গানখানি বেঁধেছিল এই মেয়ে সেদিন?
শুনতে পাওয়ার আশায় বেঁধেছি তার, বিষম তানে সুরে রঙিন।।

অনেক ভালোবাসার অনেক বলার সুখ তোর সাথে!
চলার পথে ভুলে  না যাস বকুলফুল:   নিশীথ রাতে।।

ভাষার টানে গানের তানে হঠাৎ চমকে চাওয়ায়;
হয়ত আবার দেখব এলোচুলে  উদাস হাওয়ায়।।

সাঁঝবাতির অন্যমনের  সেই রূপকথারা !
ফিসফিসিয়ে বলবে যত ওই পারের ও...ই চুপকথারা।।

সুখে ,কান্নার সানাই সুরে ধন্যা।
অন্ধকারে উৎসারিত আলোর বন্যা।।

উতল হাওয়া

উতল হওয়ায়..
চমকে চাওয়ায়।

হলদে শাড়ী পলাশ রাঙা পাড়ে ..
বাসন্তীরা হুড়মুড়িয়ে এলো বুঝি ঘরে।
ছড়িয়ে সুবাস পারুল ,জারুল..
দাঁড়িয়ে দেখি মেঘের ভেলায় একলা বাউল।

সেই সে কোন ভোরে কৃষ্ণচূড়া র ডালে ..
কোকিল তানে বিকেলবেলা বুকে ঢেউ লাগালে।
শিমূল শুনে ই রঙিন বসন্তকে বলে..
আয় চলে আয় রং এ ভিজব সকলে।

নীলদিগন্তে উদাসী হাওয়ার পথে..
রঙিন হয়ে চেপে  কচিপাতার রথে।
খোঁপায় পলাশ বেঁধে,পলাশ পাড়ে..
বসন্ত যে এত রঙিন হুঁশ এলো লেখা পড়ে।

হলুদ শাড়ি, এলো চুলে দখিন বায়ে..
হেঁটে চলে পথে পথে ঝরাপাতা গেয়ে।
সেই ই সে কালের আজও পলাশ পাড়ে..
সেদিন থেকে আজও  লাবণ্য কে দেখে একনাগাড়ে।।।।
          #মৌসুমী।

আমার বাংলা

আমার বাংলা

#মৌসুমী রায়
ফাগের রেণু,একুশ ঘিরে,
ডাকছে বাংলা,আকাশ ফুঁড়ে।

বসন্তে, রং বেরং আগলাতে,
প্রেম জেগে আজও বাংলাতে।

বাংলা ,আমার মায়ের হাসি,
বাংলা, আমার ভাষার বাঁশি।

বসন্তের  বাংলায় ,মন কেমন ,
হলুদ শাড়ির লালপাড়ে ,ভালোবাসাও, তেমন।

কুলের স্বাদে টাকরায় স্বাদ; টক,টক আওয়াজে,
খিচুড়ি,লাবড়া ,দুপুর পাতে ,বাংলা রেওয়াজে।

বাংলা আমার লালমোহন বাবুর ,ধূর মশাই আপনি বাঙালি?
যতই বলুক  নিন্দুকেরা ,বাংলা এখন কাঙালী।

বাংলা আমার ,রসগোল্লা, মিষ্টি দই ।
যতই চেঁচাও,লাগুক যত হৈচৈ।

বাংলা ভাষার মিষ্টি গানের সুরে,
বাংলা সংস্কৃতি ,আজও আবেগ ভরে।

ভারতমায়ের সন্তানদের ,রক্ত ঝরে।
কান্না পাওয়ার ,শব্দ বাংলা জুড়ে...

বাংলা আমার, তোমার ,স্লোগান  সুরে,
শহীদের রক্ত  ,ভুলবনাভুলছিনার, হৃদয়ে ওরে।

আজও বাংলায়  ভাসি,হাসি,কাঁদি,
আমি বাঙালি,গর্বে ই ;বুক বাঁধি।

আবেগ ভরা প্রাণে, বাংলায় দিই হুঙ্কার,
বাংলা আমার মাতৃভাষা,এ আমার অহংকার।

বাংলা আমার রঙ্গীন রেণু,
ভাষার  ডাকে বাজিয়ে বেণু।

জল কে চল সই,উছলে হাসি,
বাংলাতেই  বলতে ,বেজায় খুশি।

সই, এর লেখার কলম খানি,
ধার নিয়ে লিখে পাঠিয়ে আমি।

তোমার মতো সই এর সই,
সাধ  , জন্ম নিই বাংলাতেই।

বাংলা ভাষার মিষ্টি সুবাস,
এমনি করেই মন মাতাস।

বাংলা আমার সোনার খনি,
এমন সই এর মধুর,প্রাণখানি।

তোমার লেখার কলম ঘিরে,
বাংলা আমায় আদর করে।

এমন কিছুই  নই গো দামী!
বাংলা মায়ের, সাধারণ কন্যা আমি।।।

Tuesday 19 February 2019

ভারতবর্ষ

ভারতবর্ষ

#মৌসুমী রায়
শ্রী চরনেষু,
মা,
তোমার মনের কষ্ট আজ আমাদেরও ..  ভয় কোরো না মা গো। তোমার প্রায় দেড়শত কোটি সন্তান। কোন সন্তানের বলিদান বিফলে যাবে  না। ধন,ধান্য, পুষ্পে, মেধায় ,নূতন যৌবনের দূত আরও কত র সম্ভার তোমার কোলে।  এভাবে চলে যাবে না,যেমন আছে, তোমার একান্নবর্তী পরিবার তেমনই থাকবে।

আসলে জানো তো মা,ওরা ভয় পায় তোমার সংসার দেখে। এত বড় সংসারের কাজ তুমি গণতন্ত্রের মাধ্যমে সামলাও কি ভাবে, কিভাবে এত মেধাবী সন্তানের জন্ম তোমার ওই রত্ন গর্ভে।

কয়েক হাজার বছর থেকে তোমার উপর এত উপদ্রব,এমন কি ধনরত্ন লুঠপাট সত্বেও তোমার এত সম্পদ থাকে কিভাবে,এও এক গাত্রদাহ।

একসাথে এত সন্তানের চলে যাওয়া ,তোমার বাকি সন্তানদের মোনবল আরও শক্তিশালী করেছে।
একদম  ভেবো না। ওরা জ্বলন্ত অঙ্গার এ হাত দিয়েছে ,হাত ওদের পুড়বেই।

তুমি যেমন আছো,তেমনই থাকবে। তুমি আমাদের চির সবুজ জননী। তোমায় বার্ধক্য তে পৌঁছতে দেব না। তুমি সেই রত্ন খচিত মুকুটে,গলায় চন্দ্র মালায়,চরণে নূপুরেই সজ্জিত থাকবে। চিন্তা কোরোনা মা।

ভয় কী তোমার? আমরা তোমার দেড়শত কোটির বেশি সন্তান সন্ততি আছি। সবাই মিলে এক হোয়ে হাত লাগাব কাজে। এই সময় কেউ কাউকে দোষারোপ করব না। কথা দিলাম। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করব না। অন্যদের সুযোগের অপেক্ষা য় থাকতে দেব না। কথা দিলাম...
ভালো থেকো মা।
                       ইতি,
তোমার দেড়শত কোটি ছেলে,মেয়ে।।।

ছেলেবেলা

ছেলেবেলা

#মৌসুমী রায়
সই, তুই হবি কী ছোট্ট বেলার সাথী?
চাই হোতে তোর ,একলা ঘাটের সঙ্গী।

তুই যদি হোস, ঐ আকাশের ফুসমন্তর ?
রাঙিয়ে দেব, দেখিস আমি ,তোর অন্তর।

আমেরকুশি ,কচিপাতার ভেঁপু বাজাস যদি!
আমি হবই হব,তোর আঁকাবাঁকা ছোটনদী।

ডুব সাঁতারে ,গামছা ছেঁকে ধরব চুনো পুঁটি!
সেই বেলাতে ফিরবে ,রূপকথার খুনসুটি।

ছেলেবেলার ,ভোরবেলায় ফুলটি তুলে এনে!
আবার তোর সাথে ,চলতে চায় পথ, না গুণে।

ভোরের রেওয়াজ ,ভৈরবী আর ভৈরবের কোমল স্বরে।
তোর লেখায় ,মন মেতেছে কলমখানির ভরে।

এখনো কী তোর,  আম কুড়ানোর,ইচ্ছে হয়?
আমিও ,সাথে যাব সেদিন ,জানাবি নিশ্চয়।

তোর লেখনীর ছোঁয়ায় ,শিলের হঠাৎ শব্দ পেলাম।
এক দৌড়ে ,বালিকা বেলা এক্ষুণি ঘুরে এলাম।

কালবোশেখে বৃষ্টি মাখানো মেঘে ,ঝড়ো হাওয়ায় বইব!
রামধনু কে ,সই ভেবে মনের কথা বলব।

সারাদিনে কতো ,ভাবনা ভাসাই জীবন তরীর মনে !
ক্ষমা করে দিস গো সই ,আবেগের ,বিলাপ  সম্বোধনে।।
         ...মৌসুমী রায়।।

কান্নাপাওয়ায়

কান্না পাওয়ায়

#মৌসুমী রায়
হারিয়ে গেল ,সেই কোথায় কখন!
চমকে চাওয়ায়,আপন মন।

সেই ,সেকালের ছোট্টবেলার,
তোর সাথে ওই, সময় খেলার।

সাত ভাই চম্পা, ভাবে এখন,
আনন্দের সেই আবেগ ঘন।

দেবার কিছু নেই রে আমার;
তুই যে এখন বড় সবার।

জন্মদিন টা ভাবতে ভাবতে!
ফিরিস কেবলই এই জগতে।

অনেক মাঝে খুঁজেই বেড়ায়:
সেই  , ছোট্ট ভাই ই চাই।

থাকিস কোথাও ,কোনো তারার মাঝে;
দেখব ,চিরবসন্তের সকালসাঁঝে।

দুই পাড়ের ওই কানাকানি;
হাওয়ায় দোলে, তরীর পাল খানি।

কথা দে ,আবার আসবি  ফিরে;
হারিয়ে, না যায় সকল , থাকিস ওরে।।।।

মঞ্জরী

মঞ্জরী

#মৌসুমী রায়
ও মঞ্জরী আমের মঞ্জরী ...

গাইতে গাইতে প্রায়ই ,মেয়েটি হেঁটে যায় এই গ্রামে।
শ্যামলা বরণ,দিঘল চোখ দুটির পানপাতা মুখে মিষ্টি লাগে ওঁকে।

প্রকৃতি ,প্রায় ই লণ্ঠন নিয়ে দিনের বেলায় , কি যেন খুঁজে ফেরে। অনেকে ভাবেন এ যেন ক্ষ্যাপা খুঁজে ফেরে পরশ পাথর।
সে যায় হোক ,তেমন বিশেষ আমল দেয় না কোনো কথায়! সে ,শুধু হাসে। হাসিতেও লোকজনের নাকি  পাগলী  মনে হয় ওকে। এই গ্রামে হঠাৎই প্রকৃতির আবির্ভাব।
একটা হিল্লে করতে হবে এই মেয়ের। ভাবনা শুরু।

অনাথ ভাবেই ওর জীবন যাপন।  গ্রামের মুরুব্বি রা ওর নাম করণ করেছে।  কারণ ও ,ম্লেচ্ছ  না হিন্দু সেকথা জানা নেই।  অতএব মেয়ে যখন,তখন ওর নাম হোক প্রকৃতি।  এখন ওর ,লণ্ঠন নিয়ে খুঁজে  ফেরা টাকে বিশেষ কিছু মনে হয় প্রতিবেশী দের।
এত দিন কেউ না কেউ ওকে, খাবার দাবার এবং বাসস্থান দিয়ে এসেছে। ভাবনা এখন বাস্তবের পথে।
এখন ওঁর জন্য একটা ঘর,কলঘর এবং গোসল ঘর করে দেওয়া হয়েছে সরকার এর সাহায্যে।
ওঁর আনন্দ বোঝা যায় না। তবে খুশিতে,  ও মঞ্জরী গান টি গায়। ওঁর চোখের উতল চাহনি তে প্রকাশ পায়। পূর্বের কথা জানতে চাইলেই ,দিনের বেলায় লণ্ঠন হাতে খোঁজ শুরু করে।

ইদানিং লক্ষ্য করছে গ্রামবাসীরা ,প্রকৃতি গ্রামের অবহেলিত ছেলে এবং মেয়েদের পড়াশোনা করাচ্ছে।  তাদের অল্প বিস্তর গান গাইতে এবং আঁকতে শেখাচ্ছে। আবার মাঝে মধ্যে নিজে কবিতা আবৃত্তি করছে।  হাতের মুদ্রায় নৃত্যে র চলন বোঝাচ্ছে।
কিন্তু, কোন সুস্থ বাড়ির বাচ্চাদের এ ব্যাপারে সাহায্য করে না ওঁ।  তাদের বলে ,তোমাদের তো অনেকে আছেন যাঁরা তোমাদের এগোতে সাহায্য করবেন।  এঁদের কেউ নেই যে ! দেখার।
আস্তে আস্তে  এভাবেই প্রকৃতির একটা ছোট খাটো স্কুল তৈরি হলো বাড়িতে। ওর চেহারাতে বনেদিয়ানা প্রকট। কিন্তু বোঝার অবকাশ দেয় না।

প্রায় দুই বছর অতিক্রান্ত । প্রকৃতি ঠিক করল এই বসন্তে ,এই ছেলে মেয়েদের নিয়ে একটা নাটক মঞ্চস্থ করবে।  ওঁর কথা এখন গুরুত্ব দিয়ে শোনেন গ্রামের মানুষেরা ।
কথা বলেন গ্রামের মুরুব্বি দের সাথে। মুরুব্বিরা এখন প্রকৃতি কে ,আর সে ভাবে দেখেন না।  তাঁর কথার যথেষ্ট মান্যতা দেন।  অনুষ্ঠানের জন্য নিয়মিত অভ্যেস চলছে। বিকেল টা বেশ কাটছে!

তাঁরা সকলে চাঁদা তুলে মঞ্চ বাঁধলেন,পোশাক পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করলেন। মঞ্চস্থ হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা চন্ডালিকা।  নাটক টাকে একটু নিজের মত করে মঞ্চস্থ করার চেষ্টা প্রকৃতির।  কারণ ,রবি ঠাকুর কে হুবহু উপস্থাপনা করা তাঁর কম্ম নয়।
প্রথমেই নিজের কণ্ঠে সুর ধরলেন ,আমি তোমার মাটির কন্যা জননী বসুন্ধরা... এরপরে অচ্ছুৎ কন্যার হাতে জল গ্রহণ ..  জল দাও ! এযেন কতদূর এর এক তৃষ্ণার্ত  পথিকের ডাক।
গা ,শিউরে ওঠে।। 
একের পর এক চমক চলতে থাকে। শেষে পরিবেশন, মাটির বুকের মাঝে বন্দি যে জল...মাটি পায় না,.
হাত তালিতে আকাশ বাতাস মুখরিত।  বলা বাহুল্য অনুষ্ঠানটি দিনের বেলায় হয়েছিল। গ্রামে তখন বিদ্যুতের ব্যবহার ছিল না। হ্যাজাক এর খরচ করতে সামর্থ্য ও ছিল না।  তার উপর এক অপ্রকৃতিস্থ নাটক পরিবেশন করবে। কি না কি সাপ, ব্যাঙ বেরুবে।   দর্শক দের মুখে মুখে ,আমি তোমার মাটির কন্যা.,.

যাই হোক ,সেই দিন অনুষ্ঠানে র শেষে,  এক ব্যক্তি র হঠাৎ আবির্ভাব। সে খুঁজতে খুঁজতে , এই গ্রামে উপস্থিত। প্রকৃতি , তাঁকে চিনতে পেরেছিল। কিন্তু অপরিচিত , এই ভান করে ছিল।

অনুষ্ঠান শেষে , মঞ্চের পিছনে গিয়ে নতজানু হয়ে, সে,  প্রকৃতি কে বলে,আমি তোমার জন্য কিছু করতে চাই, বলো তুমি কী চাও?

প্রকৃতি ,খানিক টা আবেগ মথিত হয়েও উত্তর দিয়েছিল,  সরে দাঁড়াও তো একটু;  
সূর্যের আলো টাকে আসতে দাও।  এই আলো, তোমার কেনা গোলাম নয়।  নই আমিও।

যেদিন  ,দুই মেয়ে জন্মদেওয়ার পরে , তাঁদের মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত করেছিলে ,সেদিন কিছু জানতে চাও নি,আমার কী প্রয়োজন!
ওঁরা আজ জীবিত থাকলে, এঁদের মতোই হোতো।

কিছু চায় না,কিছু করতেও হবে না।
আমার স্বাস প্রশ্বাস টা এই সূর্যের আলোতে নিতে চায়।
এখন থেকে এরাই আমার সব।  বঞ্চিত করে, তুমি বাঁচালে মোরে।  তফাৎ যাও,সূর্যের আলোটাকে আসতে দাও।  লণ্ঠন  নিয়ে, ঠগীদের খুঁজেছি অনেক।  এখন ,লণ্ঠন আর দরকার নেই, এখন সূর্যের আলোর হদিস পেয়েছি।।।।।