Thursday 28 March 2019

অর্ধেক আকাশ

অর্ধেক আকাশ
        #মৌসুমী রায়

দূরে দাঁড়িয়ে বিশাল আকারে অর্জুন।চারপাশে পরিবেষ্টিত কৃষ্ণ চূড়া ,রাধা চূড়া,পলাশ ,পারুল আর খানিক দূরে শিমুল।
কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়ার কথার মাঝে রাধাচূড়ার আনন্দে আত্মহারা র প্রতিফলন "সমুদ্রে শয্যা পেতেছি কানাই,এখন আমার আর শিশিরের ভয় নেই"।কেন গো রাধে এমন ভাবনা আমি তো তোমায় আমার আগে স্থান দিয়েছি।সকল  যে রাধাকৃষ্ণ বলে ,কৃষ্ণরাধা কেও বলেনা।
না,সে কথা নয়। শোন তবে সখা,একদিন অর্জুন হঠাৎ বলে ওঠে তোমরা জেনে রেখো,"তোমাদের মাঝে আমি অর্জুন,আমি আর্য পুত্র।আমি এক আকাশ,আমার দয়ায় তোমরা গলি ঘুপচিতে ঠাঁই পেয়েছ ,মনে রেখো আমি ধ্বনন্তরি।মহৌষধী,আমি রূপে গুণে শ্রেষ্ঠ।"। শিমুল,পলাশ,কেও প্রতিবাদ করেনি।আমি আর পারুল ও কিছুবলিনি ।কষ্টও পাইনি। নিজের অধিকার নিজেকেই বুঝতে হবে এটাই আমি আর পারুল প্রতিজ্ঞা করেছি।
বসন্তের এক আগুন ছোটা দিনে এই পথদিয়েই যাচ্ছিল এক সাঁওতালি মেয়ে।থমকে দাঁড়ায় অর্জুনের কাছে।বলে"হ্যাঁ গো অর্জুন,তুমার বড়াই বড় শুনছি পথে ঘাটে।তুমি বুলি আওড়াই ছ তুমি আর্য আর সকলি অনার্য।শুন তবে । দেখ এই মেঝেন  এর কৃষ্ণবরণ এর রূপ দেখে কবি পাগল পাড়া হয়ে বলেছে কৃষ্ণকলি । তোমাকেও বলেছে অর্জুন ।দুই জনই তার কাছে আমরা সমান সমান।দেখো দেখি  রাধাচূড়া কেমন মাটির ওপর শয্যা পেতে রাখে,সেখানটিতে তোমার রূপ আরও খুলে যায়।চলতে পথে পায়ে পায়ে নূপুর বাজে।রূপ দেখো রাধাচূড়া আর পারুলের ,কি যেন বলে গো এখুন কন্ট্রাস্ট না কি।তোমার রূপ দেখার আগেই রাধাচূড়া,পারুল পথ দেখিঙ আনে।মানতেই হবে।পলাশ ,শিমুল আগুন রঙা ,তোমার  আকাশের চতুর্দিক রঙীন করেছে।আর এখানে
এই মেঝেন না রইলে তোমায় দেখবে কে? ওই আকাশ পানে চেয়ে দেখো আধখানা তুমার আর আধখানা আমার।ভাগের চিহ্নত নাই। শুনতে শুনতে অর্জুন মগ্ন।ঘোরে আছে।কখন যে মেঝেন পলাইছে টের পাইনি সে।
ডাক পাড়ে ও মেঝেন যেয়ো না,আরও খানিক বোস।তোমার গুণের রূপে আমি মুগ্ধ।
অর্জুন ভাবে ,মিছেই অহংকারে নিজেকে আটকে রেখেছিলাম এতদিন। যখন আমার বাকল ছাড়ে কি কদাকার লাগে আমায় ,ভেবে দেখিনি।কিন্তু পলাশ,শিমুল,রাধাচূড়া,পারুল এদের রূপ তো একই থাকে।বসন্তে রাধাচূড়া আর পলাশ সাজুগুজু করে। কি সুন্দরী লাগে ওদের।ওদের ছাড়া আমার অহংকার অপূর্ণ।তোমরা নারী আছো বলেই আমরা পুরুষ রা এত সুন্দর।তোমারা না থাকলে আমাদের জন্ম অধরা থেকে যেত।শুধু বসন্তে তোমাদের সৌন্দর্য দেখতে সারা বছর যত্নে রাখতে হয়।তবেই তার পূর্ণতা পায়।এক বসন্তে উপভোগ করে বছর ভোর উপেক্ষা করলে ফি বসন্তে তোমার দেখা পাবনা সখী।
কেও আর্য,অনার্য নই।আমরা এক আকাশের দুইটি অঙ্গ।অলিন্দ ,নিলয়।আমরা দুটি চক্ষু,দুটি ফুসফুস।একা আমরা প্রতিরোধ্য।কিন্তু সঙ্গে চলা নারী ,পুরুষ অপ্রতিরোধ্য।
এই শিক্ষা আমায় দিল আজ নাম না জানা এক গাঁয়ের মেঝেন।না গো ,সে আমার পরম প্রেমের কৃষ্ণকলি।অনেক দিনের মনের মানুষ বসন্তের আকাশ কে রঙ্গিন করে গেল। বসন্ত আজ রঙিন হোল তোমার ছোঁয়ায় ।দেখ দেখি আমার জ্ঞান ,চোখ  ফোটাতেও তোমার ছোঁয়া।আমার জন্ম ও তোমার ভালোবাসায়।
ও যেন কে....?
ও? ও নারী....
অর্ধেক আকাশ... না! ভুল হোল একটু!
ও ! ও পুরো এক আকাশ ,সীমাহীন ।।

No comments:

Post a Comment