Sunday 28 May 2017

বড়মা 
সমাপ্তি 
ছোট নাতনির বিয়ে তে শারীরিক ক্ষমতা একদম পড়তির দিকে। কিন্তু মনের শক্তি বিপুল -বিশাল।এ বিয়ে বুঝি  , অন্য নাতি -নাতনির বিয়ে ব্যবস্থাপনা থেকে একটু আলাদা। ভিয়েন তো প্রতিটি অনুষ্ঠানে ই হয়ে থাকে। একটা মজার কথা বোলে রাখা ভাল । ছোট নাতনির বিয়েতে মিষ্টি সবাই পাচ্ছে ,কিন্তু তাঁর পুত্র কে কেও একটাও দিচ্ছে না ।বৃদ্ধ ছেলের জন্য লুকিয়ে কয়েকটা এনে বলেন এগুনো তাড়াতাড়ি খেয়ে নে ।ছেলেও তেমনি ।বলামাত্র উদরপূর্তি । মা - ছেলে চুপচাপ ।যেন কিছুই হইনি ।তাঁর ছেলের মিষ্টি খাওয়া নিষেধ ।তাঁর মধুমেহ হয়েছে ।কিন্তু মায়ের মন সবাই খাবে ,তাঁর ছেলে খাবে না ।এ হেন অন্যায় তিনি বরদাস্ত করবেন না । মা এবং ছেলের মধুর সম্পর্কের অটুট বন্ধন ।

 এবার একটু ইয়ে, মানে বাড়িতে কথা হচ্ছে আলো জ্বলবে। সেতো হ্যাজাকের আলো জ্বলে। এবার নাকি নাইট জ্বলবে। তিনি লাইট কে নাইট বলতেন। সমস্ত ল তাঁর ন। নাতিনাতনীর ছেলেমেয়েরা বলত বড়মা আবার বল নাইট। তিনি হাসতেন। হ্যাঁ তাঁর উত্তেজনা মাত্রা একটু হলেও বেশি , জীবনের পড়ন্ত বেলায়। নাইট মানে কী ?সে বড় নাতির বাসাতে দেখেছে।কিন্তু গাঁয়ের বসতবাড়ীতে সেকি সম্ভব?   বাড়ির বউদের রঙ্গীন কাপড় নিয়ে প্রবেশ দ্বার তৈরী হল। তার সাথে যুক্ত হল কলা গাছের থোড়ের মত দেখতে সাদা সাদা কিযেন একটা।গাঁয়ের সবাই এসে বলছে "ভাঁড়ল কেনে গো দোরে "----সন্ধ্যে নামল-- সেই থোড়ের মতো আলো জ্বলে উঠলো। আনন্দে করতালি বেজে উঠল। গাঁয়ে এই প্রথম এভাবে আলো জ্বলল তাও আবার লম্বা লম্বা সাদা সাদা। কলা গাছের থোড় কে ভাঁড়ল বলা হয় ।  বিবাহ সম্পন্ন হলো সুষ্ঠু ভাবে।

আস্তেআস্তে তাঁর স্বাস্থ্য ভাঙতে শুরুকরল। ডাক্তার বদ্যি দেখান হল। তাঁর পুত্রটিও কবিরাজ। তিনি দেখলেন এবং বুঝলেন তাঁর জীবনের রসদ ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু তাঁর তো মা তাই তিনি উদ্বিগ্ন যে অন্য চিকিৎসক যদি জীবন নদী বয়ে চলার ওষুধ দিতে পারে। তাঁরাও একই কথা বললেন। তিনি সম্পূর্ণ ভাবে শয্যা নিলেন। উত্থান শক্তি রহিত। তাঁর যত্নআত্তি করতেন খুব মধ্যম নাতবৌ টি।মায়ের সাথে ছেলেরও স্বাস্থ্য ভাঙতে লাগল। তাঁর কারণ ছেলের ডাক এ রুগী দেখতে হত বেশী।এ হেন পরিশ্রম তাঁর স্বাস্থ্য ভগ্নের কারণ।  খুব তাঁর  নামডাক। তাঁর বাবার থেকেও বেশী। ছেলের সুখ্যাতি মনে হত মায়ের, যেন যে কর্মে তিনি ব্রতী ছিলেন তাঁর চূড়ান্ত ফলাফল পেয়েছেন।

দিনে দিনে ভালোর থেকে মন্দের বাতাস  তাঁর শরীরে বেশি বইছে। চৈত্রের এক দুপুরে এতদিনের বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করলেন তিনি। কিন্তু তাঁর পুত্র মায়ের বন্ধনে জড়িয়ে পড়লেন। মায়ের চলে যাওয়ার দিন তাঁর চোঁখের জলের বাঁধ ভেঙে ছিল। মাঝে মাঝে উচ্চারণ মা --মাগো। তাঁর চলে যাওয়ার দিন গ্রামের লোকজন বলাবলি করতে লাগল "সৎ মা কে বলবে "--"মা , ব্যাটা অন্ত প্রাণ ছিল -ব্যাটাও মা বলতে অজ্ঞান "--বাড়ির ছোট সদস্যরা নিজেদের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলনা। গ্রামের লোকজন কার কথা বলছে আজকের দিনে। কোনদিন এ ব্যাপারে বাড়িতে কোনো কথার উত্থাপন হয়নি। সেই কথাটি গ্রামের মানুষ ভেবে ছিল -ভাবনাটা তাদের। তাই আজও বাড়িতে তিনি বড়মা। 
তিনি চলে যাওয়ার দিন বাড়ির পোষ্য জীবজন্তু র  দস্যি পনা স্তব্ধ হয়েগিয়েছিল। কোনও শব্দ করেনি। বাড়াবাড়ি মনে হলেও এটাই বাস্তব -সত্যি ঘটনা। সেদিনের স্নানাদির সময় পোষা সারমেয়টি বাড়ির সকলের পুকুরে স্নানের পর সেও স্নান সেরে সকল কে সুরক্ষা দিয়ে পিছনপিছন বাড়িতে এসেছিলো। এক কোনে চুপটি করে বসে ছিল। তাঁর স্বামীর চলে যাওয়ার দিন যা হয়েছিল তাঁর পুনরাবৃত্তি ঘটে নি ।সকলেই চোখের জলে বিদায় জানিয়ে ছিল ।প্রসংশায় ভরিয়ে ছিল ।শেষ যাত্রায় তাঁর ছিল সকল কর্মের উচ্চারণ। একমত সবাই । আজও তিনি এই প্রজন্মের দাদুর মা ।
 কে বলে বড়মা আজ প্রভাতে নেই -কে বলে তাঁর উত্তরাধিকার নেই। সব আছে বড়মা -আছে আজও বেঁচে চারপ্রজন্মের সদস্যদের মধ্যে। তোমার কথা এখানেএখনও  বলাবলি হয় গো বড়মা -------- তুমি শুনছ ---------




No comments:

Post a Comment