Wednesday 8 March 2017

গানে আমার রবীন্দ্রনাথ 
চতুর্থ পর্ব 
"অর্ঘ্য তোমার আনিনি ভরিয়া বাহির হতে --ভেসে আসে পূজা আপন স্রোতে "--সবই আমার অন্তরের- বাইরের কিছু কেনা নয়। কথা ও সুর এর মেলবন্ধন তোমায় হেরি ঈশ্বর রূপে -ভালোবাসার মানুষ রূপে -যার মাঝে খাদ নেই -নেই কোনো তোষামোদ।
 রবীন্দ্রসঙ্গীত এমন ভাবে পরিবেশিত যে সঙ্গীত গায়ন কালে কোন শব্দ একাকী ; আবার কোন শব্দ যুক্ত ভাবে সুর দিয়ে গাইতে হবে। কোনটি ও কারান্ত -কোনটি হসন্ত -আবার কোনটি মীড়  দিতে হবে -তো আবার দ্বিতীয় বার কোনটি ছেড়ে ফিরে আস্তে হবে বারে বারে যুগ্ম দাঁড়িতে। এই স্বরলিপি বন্ধন অপূর্ব --অপূর্ব সুন্দর । তাঁর নতুন দাদা ,জ্যোতি দাদা। তাঁর গানের জ্ঞান কে মঞ্চ করেছেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর  ।রবীন্দ্রনাথ ভবিষ্যত দ্রষ্টা তাই তিনি তাঁর সঙ্গীত কে এমন আষ্টেপৃষ্টে বেঁধেছেন। কিন্তূ ভাবনা আর মনের মাধুরীর স্বাধীনতা দিয়েছেন।

কোনো চিত্র বিচিত্র করোনা ; তোমরা-তার জন্য নিজে গান বাঁধ।  রবীন্দ্রসঙ্গীত এ তাল -ছন্দ -মাত্রার চলন তাঁর সুতোয় বাঁধা।তাঁর প্রবর্তিত তাল ঝম্পক -ষষ্ঠী -রূপক রা -নবতাল -একাদশী -নবপঞ্চতল -অর্ধঝাঁপ -চতুর্মাত্রাতাল।  সঙ্গীতের বিভিন্ন তাল রপ্ত করে তিনি তাল প্রবর্তন করেন। তাঁর গান পরিবেশনে লিপিবদ্ধ তাল -সুর -কথা কি আনন্দ দেয় তা বোঝানো সম্ভব নয়  ।নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে "তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে যতদূরে আমি ধায় "-- ।ভক্তি ,শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস এ ভর করে বিচরণ ।যেন "পাহাড় চূড়া সাজে ,নীল আকাশের মাঝে --বরফ ভেঙ্গে ডিঙিয়ে যাওয়া ,কেও তো পারে না যে "।
কণ্ঠস্বর ,স্বর বোধ ,স্বরলিপি ,কথায় সুর প্রয়োগে শ্রুতি  মাধুর্য , উচ্চারণ ,তাল ,লয় ,নিস্বাস-প্রস্বাস এবং সংযম ।সঙ্গীতের কাঠামো ধরে রাখে ।কিন্তু ঘটক ?  পরিবেশন করবেন যিনি তাঁর ভালবাসা ,ভাললাগা থেকে ।
যখন মন ভারাক্রান্ত "আবার এরা ঘিরেছে মোর মন -আবার চোখে নামে আবরণ "-- ।নানান লোকে নানান কথা বলে -কথার জালে জড়িয়ে ফেলে -তখন তিনিই আমার আশ্রয়  ।আমায় যেন বলেন "যদি এ আমার হৃদয় দুয়ার বন্ধ রহে গো কভু "- ।দ্বার ভেঙে এস তুমি ফিরে যেও না ।
হৃদয় দুমড়ে মুচড়ে নিংড়িয়ে যখন ; কষ্টে আক্ষেপ করি  ,তুমিও আমায় বোলো "যে রাতে মোর দুয়ার গুলি ভাঙলো ঝরে -জানি নাই তো তুমি এলে আমার ঘরে"-- ।আবার বলো অনেক হয়েছে এবার ওঠতো দেখি কাজ করো ।"আমার এ ঘর বহু যতন কোরে ধুতে হবে মুছতে হবে মোরে "--।সুখের আসার সময় হয়েছে। সুখ উদযাপন করো ।
তিনি নিজেই বলতেন গান বাঁধতে তার বেশি ভালো লাগে  ।মনের আনন্দ -আরাম -শান্তি পেতেন। তিনি আমাদের কথা উপলব্ধি করেছেন ।তিনি মানুষ ,ঠাকুর নন । তাই এই উপলব্ধি আমাদের প্রতিদিনের  গানে সমৃদ্ধ। মা ডাকে যে তৃপ্তি সেই তৃপ্তি তোমার গানে রবি ঠাকুর --"শিশু যেমন মা কে নামের নেশায় ডাকে "-- ।তেমনি তুমি -তোমার গান।

গানের খোঁচ -মোচড় যত্নে ছুঁয়ে যাই মন -তাই "অল্প লইয়া থাকি তাই মোর যাহা যায় তাহা যায় "-- ।তোমার প্রেমে বাঁধা গান আমার পূজার অঞ্জলি । পূজায় বাঁধা গান সেবা ,। এ তো হবার কথা -প্রেম এলে তবেই পূজা। "তোমারেই করিয়াছি জীবনেরই ধ্রুবতারা "-- ।বিষাদ -অবহেলা -ঘৃণা জয় করে থাকি তোমার গানে ।তোমার গানে আমার মান পায় ।তাই গাই যে আমি "বিষাদে হয়ে ম্রিয়মান বন্ধ না করিও এ গান "--- ।উপলব্ধি হয়ত ব্যক্তি নির্ভর ।কারো কাছে বাতুলতা ,কারো কাছে তুষ্ট করা । আবার মনে হতে পারে ভয়ংকরি ।  ভাবনায় কোন ধমক নেই ।ভাবনায় ভেসে চলা মন তরী ।সে তরী পাল তুলে চলেছে গানের হাওয়ায় ।-----মউসুমি 

No comments:

Post a Comment