Saturday 10 June 2017

কথা র সানাই
পর্ব -৩
"অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে চলবে না ।এবার হৃদয় -মাঝে লুকিয়ে বো -সো ,কেউ জানবে না ,কেউ বলবে না ।"--- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের  পূজা পর্যায় মুখরের মায়ের ভীষণ প্রিয় ।গান টি তিনি আবৃত্তি করছেন টেনে -টেনে  জোরে জোরে ।টুকটাক কাজ -কম্ম চলছে তার সাথে ।সে মায়ের মুখে আবৃত্তি আগেও দেখেছে ।আস্তে -আস্তে মায়ের মুখের কাছে কান পাতে। মায়ের কোলে মাথাদিয়ে শুয়ে পড়ে ।মা জানে মুখরের ও প্রিয় এটি ।প্রিয় রবীন্দ্রনাথের ছবিটি ।
মুখর দেখে ,  মা আর ও একটা টেনে টেনে কি বলে। সে বোঝে না ।একটা রেশ থাকে ।মা সেইটা করলে ; সে রবি ঠাকুরের ছবির কাছে যায় এবং গীতবিতানের ওপর হাত রাখে ।এটা মুখরের অভ্যাস ।মা এটি তৈরি করেছেন ।

"যদি এ আমার হৃদয় দুয়ার বন্ধ রহে গো কভু -দ্বার ভেঙ্গে তুমি এস মোর প্রানে---"মুখরের মায়ের প্রিয় গান ।বাড়িতে গানটি বাজে-- আর মা অঝোরে কাঁদে । মায়ের চোখের জল মুছিয়ে দেয় ।  আবেগ -অনুভুতি মুখরের ভীষণ ।অপছন্দ হলে তার প্রকাশ একটা বিকট শব্দ ।মা জানে সেটা ।

মুখরের শরীর খারাপ হলে মায়ের চিন্তা দ্বিগুণ ।একে তো মন খারাপ, তার ওপর  ডাক্তার কোনও পরীক্ষা করতে দিয়েছেন তো মুখর কে ধরে রাখার লোকজন খুঁজতে হয়। তখন সে শক্তিমান হয়ে ওঠে । বাকি সব মায়ের কথা শুনে থাকে।
মুখর যেখানে আঁকতে যায় সেখানে মুখরের বয়সী একটি মেয়েও আঁকে । সেও বিশেষ ।তার নাম মিশুক। তার মা তাকে নিয়ে আসে। যাতায়াতে মুখর -মিশুক- দুই মায়ের, খুব ভাব হয়েছে। ওরা যখন আঁকে দুই মা তখন ভাবনা চিন্তা করে ।বলাবলি করে তাঁদের অবর্তমানে এদের কি হবে---
কার হাতে দিয়ে  যাবে ।এইসব -এর মাঝে কবে যে তাঁদের বন্ধুত্ব হয়ে যায় টের পায়নি । মিশুকের বাবা  আছেন -মিষ্টিভাই ও আছে ।সে এখন মাধ্যমিক দেবে ।দিদি কে খুব ভাল বাসে ।দিদি কে; কেও কিছু বললে মন খারাপ করে ভাই ।দুই বাড়ির যাতায়াত বাড়ে । মুখর  মিষ্টি দুজন দুজনের বন্ধু হয়ে গিয়েছে।  ওরা নিজেদের আনন্দ বিশেষ শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করে। .....
 কয়েক বছর পর মুখরের মা দেখে মুখর ভালই আঁকছে। এই আঁকা নিয়ে যদি মুখর এগিয়ে যেতে পারলে মন্দ হয় না । দিদিমনি মুখরের মা কে বলেন ওকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে ।তিনিও সহযোগিতা করবেন। পরামর্শ দেন  মাকে -তাঁর নিকটজনের জন্য  গিফট হিসেবে  টেবিল ক্লথ -রুমাল - এর  ওপর মুখর কিছু আঁকা ঝোঁকা করুক । নিজে হাতে মুখর ,তাদের  দিক ।মুখরের জন্ম দিনে  । কথা মত কাজ ।সকলে খুব খুশী। উৎসাহ দিল প্রত্যেকে।রুমাল থেকে আজ  ও শাড়ি -পাঞ্জাবী -কুর্তি সবে তেই দিদিমনির সাহায্যে আল্প বিস্তর নক্সা কাটছে । মা ,মুখরের প্রথম ;যিনি মুখরের শিল্পের উদ্বোধক ।মিশুকের মা -বাবাও উৎসাহিত  ।শুভ কাজে বিলম্ব নয় ।
 মুখর- তার মা -দিদিমনি -মিশুক-মিশুকের পরিবার সকলের সহযোগিতায় একটি  ব্যবসা শুরু করেছে ।নাম দেওয়া হয়েছে "মুখরের মিশুক কুঠি "------
                                                    ---মউসুমী

No comments:

Post a Comment