Tuesday 5 September 2017

শুচি 
অন্ধকার আলোর হদিস আনে। মনের খাঁজে খোজঁপেরেছে মনের কোণের লুকোনো আশা। সে আশা আসা -যাওয়ার মাঝে আসন পেতেছে বিশ্বব্যাপী। রাতের আঁধারের পরে সুপ্রভাত আসবেই। প্রত্যেক সকাল নতুন কিছু বার্তা বয়ে আনে। ঘাত -প্রতিঘাত আসবে ,আসছেও। আসে দুঃখ -সুখের তেরো পার্বণ। সে পার্বণে পাঁচালী পড়তে ও  হয়। পাঁচালীর পঞ্চ ওলির সংগৃহিত মধু শুচির ক্ষণিকের ওলট পালট জীবনে মৌচাক বেঁধেছে। মৌতাত নিতে শিখেছে ,অন্য কে নিতে শেখাচ্ছে। 
শুচি কলেজে অধ্যাপিকা। সংগীত শিক্ষা ,তার প্রয়োগ  বিশ্ববিদ্যালয়ে র গণ্ডি পেরিয়ে চিকিৎসা জগতে সাড়া ফেলেছে। সঙ্গীত থেরাপি। মূমূর্ষু রোগীর জীবন এ বদল এনেছে। এই আলোয় অনেক ডালপালা রূপোলি রেখা এঁকেছে। কবিতা ,সুর ,ছন্দ ,গল্প গাছা আরও কতকি। সংগীত এর সুর না মানে কোনো বাধা ,না মানে কোনো সীমা রেখা। যে ব্যক্তি ভাবে ও আমার চরম শত্রু ,সেও  সুরে সুরে ভালোবাসায় দোল খাবে। শুচির গবেষণার ফলাফল। 
হাসপাতালে ডাক পড়ে ওঁর। অজ্ঞান করার পূর্বে লঘু সংগীতের সুর শোনানো অথবা কোন সুরটি মৃদু বাজানো যায়। পরামর্শ দেয় শুচি। কোনো মন রুগীদের সংগীত ,কবিতা পাঠে কউন্সেলিং করে। নেশা গ্রস্ত মানুষ দের সঠিক পথে আনতে এই সংগীত পদ্ধতি ভীষণ ভাবে কাজে দিয়েছে। বাবা নিজের কাজে ব্যস্ত ,ছেলে মেয়েরা নিজের জগতে। ছোট থেকে মা সন্তানদের বড় করেছে ,এখন ওরা বড় হয়েছে। মা এখন নিঃসঙ্গ জীবনে বাঁচার লড়াই চালাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বাবারাও। নিঃসঙ্গের সঙ্গী এই সংগীত থেরাপি। উঠতি বয়সের সন্ধিক্ষণের ছেলে মেয়েরা উদাসীন ,দিশাহীন। ওদের ঠিক দিশার দিশা এই থেরাপি। শুচি তৃপ্তির হাসি হাসে। এখনও অনেক কাজ বাকী। একটা নতুন কাজে হাত দিয়েছে। 
যত বয়স বাড়ছে রবি ঠাকুর জীবনে প্রাসঙ্গিক হয়ে ধরা দিয়েছে। 
অনেক কাজ বোন কে মানুষ করা। আবার বাবা কে সময় দেওয়া। আর রবি ঠাকুর এর গানের কথা ,সুর নিয়ে কাটা ছেঁড়া করা শান্ত শুচি কে অশান্ত করে। রবি ঠাকুর ওর জীবনে বাবা -মায়ের আসনে। সে যতটা পড়েছে এবং উপলব্ধি করেছে তাতে এই মানুষদের কার্যকলাপে হতাশ। দমবার পাত্রী সে নয়। সঙ্গী যখন শ্রীনি ,চলো ওদের চেনায় ,আবার চিনি। দুই পরিবারের মেলবন্ধন হল প্রজাপতির নিবন্ধিকরণে। 
শুচির ভাবনায় সূচিত হল চল্লিশটি মেয়ে -ছেলে নিয়ে অবৈতনিক কর্ম যজ্ঞ। এই বাচ্চারা অনাথ ,কেও আবার মানসিক বিকাশ হীনতার শিকার। শুচি আবেদন রেখেছে এই যজ্ঞে যারা ঋত্বিক হতে চান আসুন। অনেক সাড়া পেয়েছে। 
শ্রমে বিশ্বাস করে শুচি। এই কর্মশালায় প্রত্যেক বছর চল্লিশটি ছেলেমেয়ের খাওয়াদাওয়া ,চিকিৎসা এবং লেখাপড়া আর অবশ্যই সংগীত -কবিতা শেখা। আর স্বাবলম্বী হওয়া ,সর্বোপরি মানুষ হওয়া।
শুচি দেখে যে মানুষ ভুলে যায় , সব কিছু ,এমনকি নিজের অস্তিত্ব। তাঁদের প্রিয় গান -কবিতা বারবার বাজাতে থাকলে সেও গুনগুন করে। পুরোনো কবিতা আওড়াতে থাকে। বারংবার সেই কাজটি করতে হবে। সুফল মিলবে। 
সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত যাঁরা ,তাঁরাও এই পদ্ধতিতে সাড়া দিচ্ছে। উন্মাদ কেও শান্ত করা যাচ্ছে এই থেরাপিতে। 
চল্লিশটি সদস্য নিয়ে যাত্রা পথের একটা উদেশ্য আছে শুচির। শুচি জেনেছে রবীন্দ্রসংগীত চল্লিশটি তালে গাওয়া হয়েছে। এই চল্লিশ তাল, কিন্তু তালে একটাই গান।  রবীন্দ্র নাথের গান। যার বিভাজন নেই। যে তালেই গাও না কেন। তাই এই বেতালা জীবনে চল্লিশের তালে একটা সুরে সুর মেলানোর চেষ্টা। মানুষ হওয়ার মন্ত্র। 
মানুষ ছন্দে -সুরে  জীবন চালিকা শুচির সংগীত থেরাপি। সংগীত এর শিক্ষা পদ্ধতি কিভাবে মানুষের জীবন চালনার শক্তি হবে  সেটাই দেখার।সঙ্গীতের সিঁড়ি বেয়ে ,বিভিন্ন পদ্ধতি অনুধাবন করে এই জীবন এ চলতে চলতে গন্তব্যে পৌঁছবে ওঁর  বিশ্বাস।  মৌসুমী @ .

No comments:

Post a Comment