Friday 2 March 2018

যে জন আমার মনে 
#মৌসুমী রায়
শেষ পর্ব

তোয়ার কাছে  ওর বাবা , বন্ধু ,শিক্ষক ,সুখদুঃখের সাথী। কষ্ট হলে বাবার সাথে কথা বলে ,মন খারাপে বাবার কাছে কাঁদে। বাবা অজানা প্রশ্নের উত্তরের অভিধান। 
পয়া ছোটতে যে প্রকাশ গুলো করত সেগুলো সমৃদ্ধার মধ্যে নতুন করে খুঁজে পেত্। সমৃদ্ধা বেশ বড় হয়েছে। ও, ওর লেখাপড়ার জগৎ ,গান ,নাচ ,কবিতা নিয়ে ব্যস্ত। তোয়াও নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে। মন কেমনের জায়গা একটু কম রেখেছে। ইদানিং সু কে যেন অন্যরকম ঠেকছে। আগে কক্ষনও এমন দেখেনি। আশাও করেনি পরিবর্তনের। তোয়া পরিবর্তনে বিশ্বাস করেনা। মানুষ তার নিজস্বতা নিয়ে বাঁচবে। অনুকরণ আর  হুবহু  অনুসরণের পরিপন্থী। সে যাই হোক। বয়সের ভারে সু ন্যুব্জ। কিন্তু তাঁর সৌন্দর্য  অটুট। সু চায় তোয়া ওকে মা বোলে ডাকুক। চোখের সামনে সমৃদ্ধা তোয়াকে মা ডাকে। কান যেন আরাম পায়। মা ডাকতে না দিয়ে তোয়াকে পৃথিবীর বিশাল সুখ থেকে বঞ্চিত করেছে। 

অর্থের প্রাচুর্য আছে কিন্তু সু আজ স্নেহ ,ভালোবাসার কাঙাল। কেমন যেন বাচ্চাদের মত। সমৃদ্ধা কে আদর করলে ওর ও আদর পেতে ইচ্ছে করে তোয়ার কাছে। অহংকারে তোয়ার ছোট থেকে বড় হওয়ার মুখ দেখা হয়ে ওঠেনি। সমৃদ্ধার বড় হওয়া সু দেখছে। ভাবছে তোয়াও তো এমন ছিল। অবসর তখন ছিল না ,এখন অনন্ত ,অখন্ড অবসর।
সমৃদ্ধা ওঁকে দিম্মা বলে। নাতনিকে খুব স্নেহ করেন। ওর বায়না ,আবদার সব সামলান দিম্মা। ওঁর ইচ্ছে সমৃদ্ধার জন্মদিন এ  এবার আড়ম্বর হবে। বন্ধু ,বান্ধব আসবে। তারমধ্যে বিশেষ বন্ধুকে সু পরখ করতে চায়। সে যেন মানুষ হয়। তিন কাল গিয়ে এককালে ঠেকে উপলব্ধি। শুদ্ধসত্য যেমন ,ঠিক তেমন যদি নাতনির জীবন সঙ্গী হয় তাহলে বেশ হয়। নিজের মনে নিজেই বলে। বাইরে বলতে ইচ্ছে থাকলেও বলতে পারেনা। সাহস নেই সত্যের মুখোমুখি হওয়া।

জন্মদিনে খুব আনন্দ ,মজা হল। মিনতির আজ খুব পরিশ্রম হয়েছে। ওর ও বয়স হয়েছে। এই বাড়িতে ওর মায়া পড়ে গিয়েছে। ইচ্ছে এদের সাথে বাকি জীবন কাটিয়ে দেবে। সমৃদ্ধা ওকে ছাড়তে চায়না। মিনতি ঘুমিয়ে পড়েছে। সমৃদ্ধাও নিজের ঘরে।সু ওষুধ খায় নানান অসুখের আর ঘুমের ওষুধ  ও খায়। আজ তোয়া দিলে সেটা সরিয়ে রাখে। বলে "আজ একটু আমার পাশে বোস তোয়া ,অনেক কথা আছে ;আজ সব বলব ,না বললে কোনদিন আর বলতে পারবনা "...
তোয়ার চোখ এ ঘুম এসেছে ,তবুও সে শুনতে চাই ওঁর কথা।
সু তোয়ার মাথাটা নিজের কোলে টেনে নেয়। চুলে আঙুল দিয়ে আদর করছে। তোয়ার নতুন কোরে সু কে ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে ,মা বলতে মন চাইছে। এতো বড় হয়েছে ওঁর কাছে মায়ের আদর এই প্রথম।
"জানিস তোয়া ,অহংকার আমায় সন্তান ও স্বামী সুখ থেকে বঞ্চিত করেছে।পয়াকে খুব মনে মনে মিস করি। ও আমার অবহেলার শিকার। শুদ্ধসত্যর চলে যাওয়া চোখে পোটি বাঁধার অভিনয়। ওঁ তো যায়নি ,আমি ওকে চলেযেতে বাধ্য করেছিলাম।  ওঁর খাবারে  বিষক্রিয়ায় আমিই দায়ী। তুই যে শীর্ষ কে ভালো বাসতিস সে আমার অজানা ছিল না। অজানা নয় শীর্ষর তোর প্রতি ভালোবাসা। আভিজাত্যের মোহে ,অর্থের মোহে অন্ধ ছিলাম। পাছে শীর্ষর সাথে বিয়ে হলে আমার আভিজাত্যে ঘুণ ধরে। ওদের অনেক টাকাপয়সা দিয়ে এই বাংলা ছেড়ে অন্যত্র পাঠিয়ে ছিলাম। জানিনা কেমন আছে। তোর বিয়ে একটা মানসিক অসুষ্থ ছেলের সাথে দেওয়া আভিজাত্যের বড়াইয়ের আর অর্থের লোভে। তোর মত গুণের মেয়ের সর্বনাশ এর হাতেই। নিজের স্বামীর ভালোবাসা ছেড়ে পরের ভালোবাসায় ভাগবসিয়ে ছিলাম। ঈশ্বর তার ঠিক বিচার করেছেন আমার প্রতি। অন্যায় টা তো অন্যায়। যখন বোধগম্য হোল তখন সবশেষ।
এখন আমি তোর মা ডাক শুনে যেতে চাই তোয়া। একবার মা বলে ডাক। তোয়া কঠোর হতে পারল না। মায়ের কান্না এই বয়সে সহন হয়নি। মা বলে আর অঝোরে কাঁদে। তোয়াকে মা আদরে আদরে ভরিয়ে দেয়। একটা আবদার রাখবি ?,
  যে ছেলেটি সমৃদ্ধার খুব কাছের বন্ধু ও আমার খুব পছন্দের। ওর মধ্যে আমি শীর্ষ কে খুঁজে পেলাম। তুই শুধু মত দে। "...
শুনতে শুনতে মা ,মেয়ে চোখের জলে ধুয়ে যাচ্ছে। সমৃদ্ধার ওকে পছন্দ তোয়া জানে। ওদের বিয়েতেও তোয়া মত দিয়েছে  আগেই। সু অমত করলেও এই বিয়ে হতই। মায়ের ডাকে  তোয়া "মা "...বোলে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে  কান্নায়  ভেঙে পড়েছে। ভোর হয়ে গিয়েছে ,বাইরে পাখিদের কলকাকলি। বারান্দায় আজকে হাওয়াটা খুব মিষ্টি লাগছে তোয়ার।   এই শতাব্দীর নতুন সকালের নতুন সূর্যের কিরণে মা মেয়ে নতুন স্নান সেরেছে।কত কাজকম্ম বাকি। আজ একটু তাড়াতাড়ি হাত চালাতে হবে।



















No comments:

Post a Comment