Saturday 24 February 2018

যে জন আমার মনে 
#মৌসুমী রায় 
(৩)
তোয়া আর শীর্ষর মনের খুব মিলান্তি। দুজনেই আবৃত্তি ,গান এই নিয়েই ছুটির দিন কাটায়। দিম্মির সাথে সময় কাটে বাবা আর পয়ার কথা বলে। সু এইসব শুনতে চাইও না ,সময়ও নেই ওর। আকাশে মেঘ করলে একছুট্টে ছাদে ওরা দুজন। কখনো মেঘ ,বৃষ্টি আবার কখনো ফুল প্রজাপতি হয় ওরা। কত খেলা মনের খেলা ঘরে। খেলা কখন যেন ভালোলাগা আর ভালোবাসায় পৌঁছে গিয়েছে। বাবা চলে যাওয়ার পরে এমন করে কেউ বাসেনি। দিম্মি টের পায়। বলতে চায় ,সতর্ক করতে চায় ঠোঁটে আগল পড়ে যায়। ভয় হয় ,এবাড়ি থেকে চলে যেতে হলে কোথায় যাবে এই বয়সে নাতিকে নিয়ে। 
সু অত্যন্ত জেদি ,তেজী এবং গুণী। গান ,কবিতা পড়া ,লেখা সবেই তুখোড়। মেয়েকেও সেইভাবে তৈরী করছে।একদিন হঠাৎ সু দিম্মিকে বলে "নতুন এক হাউস কিপার রেখেছি ,তোমরা আর এখানে থাকছ না ,নতুন কাজ খুঁজে নাও "...
কোনো গন্ডগোল হয়নি ,তোয়ার যত্নআত্তি খুব করে ,সু এর সুবিধে অসুবিধে সব খেয়াল রাখে।  কেন ওরা চলে যাবে ?সু কে তোয়ার প্রশ্ন করার ক্ষমতা ,ইচ্ছে কোনটায় নেই। সেদিন দিম্মির কোলে মাথা রেখে তোয়া খুব কেঁদে ছিল। দিম্মি শুধু মাথায় হাত বোলাতে থাকল আর নিজেও চোখের জল ফেলতে লাগলো। শীর্ষ কে তোয়া আর শীর্ষ তোয়া কে ভালোবেসেছিল। ওরা চলে যাওয়ার পরথেকে আজ পর্যন্ত কোন খবর তোয়া পায়নি। কোথায় যে গেল ,কোথা হারালো কে জানে।
মিনতি পিসি তোয়াকে নিজের সন্তানের মত ভালোবাসে। সবাই তোয়াকে খুব পছন্দ করে। ওর আচার ,বিচার ,ব্যবহার বাবার মত।বাবাও ছিলেন সুপুরুষ। তোয়া ওর বাবার মত দেখতে সবাই বলে। শুদ্ধসত্য একমাত্র সন্তান হাওয়ায় কোনও তুতো কেও ছিলনা। মিনতি পিসিও খুব দুঃখী। অনাথ মেয়ে। দত্তক কন্যা হিসেবে মানুষ হন। পালিত বাবা ,মা খুব ভালোবাসতেন। তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থা সেরকম নয়। বয়স এর সাথে প্রকৃতির নিয়মেই তাঁদের চলে যাওয়া। মিনতি পিসি বিয়ে থা করেনি। একটা এজেন্সি তে কাজকরে। ওখানথেকেই তোয়াদের বাড়িতে পোস্টিং।
সু ওর বন্ধুর ছেলের সাথে তোয়ার বিয়ে ঠিক করেছে। যে সু এর সাথে থাকে ওর মানসিক বিকাশহীন ছেলের সাথে।
তোয়ার সঙ্গে একদিন ওর বিয়ে হয়ে যায়। শ্বশুর বাড়িতে আশীর্বাদ এ  উপহার সুসজ্জিত মোড়কে থাকলেও উপহার সামগ্রী মনগ্রাহী ছিল না।
তোয়ার স্বামীর নাম সুপ্রিয়। ও মানুষ হিসেবে খুব ভালো। সব বোঝে ,কে ভালোবাসে ,কে বাসেনা। কে অবহেলা করে ,সব সব , সমস্ত কিছু। তোয়াকে ওর খুব পছন্দ। এতেও বাড়ির অন্য সদস্য দের হাসি মজা সব কিছুই সহ্য করে তোয়া।
একটাই মিশন সুপ্রিয়র অধিকার ওকে ফিরিয়ে দেওয়া। কয়েক বছর পরে তোয়ার একটি ফুটফুটে মেয়ে হয়।
বাড়িতে তুমুল অশান্তি ,সম্পত্তির ভাগীদার এসেগেল। সুপ্রিয় মেয়ের সাথে বাচ্চাদের মত খেলাকরে। মেয়ে বড় হচ্ছে। তোয়ার বুদ্ধি টা মেয়ে পেয়েছে। সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে তুমুল অশান্তি। সুপ্রিয়র বাবা , সু কে কিছু দেবেন ,আর বাকিটা দুই ছেলের। যাই হোক সু কোনও সম্পত্তি পায়নি আইনি জটিলতায়।
তোয়া শশুরবাড়ির সম্পত্তি নিয়ে সু এর সাথেই থাকে। সুপ্রিয় বেশিদিন বাঁচবে না জেনেও সু তোয়ার বিয়ে দিয়েছিল। অর্থের লোভ আর দম্ভ এর কারণ। সুপ্রিয় আর ওর বাবার চলে যাওয়া বছর ঘোরেনি।
এখন তোয়ারা সেই ত্রিকোণমিতি। সু ,তোয়া আর  মেয়ে সমৃদ্ধা। ক্রমশঃ......







  


No comments:

Post a Comment