Thursday 23 April 2020

ভাবনা আমার#মৌসুমী রায়। প্রায় পনের থেকে কুড়ি দিন ধরে ওদের ব্যস্ততা। ভোর রাত থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত। সে যে কি আনন্দ কি আনন্দ!!ওদের সাথে যেন আমারও আনন্দ!! অর্দ্ধেক জীবন কাটিয়ে দিলাম প্রায়। কেন জানিনা ছোট বেলাকার আনন্দ ফিরে পাচ্ছি যেন। কেমন যেন শরৎ কালের অনুভূতি।আকাশে নীলের চলাচল। মেঘের মিনারে সূর্য্যের রং লেগেছে। মনে মনে কোথায় যেন নিজেই অবয়ব তৈরী করেছে মেঘের ঝাঁকে । এই জীবনে অকালে চলে যাওয়া প্রিয় মানুষের চোখ যেন এঁকে দিয়েছে ওই মেঘের কোলে। হয়ত এমন আকৃতির মেঘ ,তাঁকে দেখে প্রিয় জনের অবস্থান বুঝিয়ে দিচ্ছে। আবার কখনো কখনো মনে মনে বলেও দিচ্ছে ,কেমন আছো? ভালো থেকো।আরও কত কথা মনে হয় পূর্ণশ্রীর। আছা, তবে কি প্রকৃতি নতুন ভাবে ধরা দেবে! দূষণ মুক্ত হয়েছে সে। কত কত রংয়ের,ভিন্ন ভিন্ন শব্দের পাখির আনাগোনা বেড়েছে এই শহর কলকাতায়। কই! আগে তো দেখিনি।এই দুপুরে একটা পাখী অনবরত ডেকেই চলেছে পশ্চিম দিক থেকে। একটু বিরতির পরে পূবে আবার অন্য পাখির আওয়াজ।আবার কখনো একসাথে যেন কনসার্ট বাজাচ্ছে। বেশ আহ্লাদ করছে ওঁরা। একটুও বিরক্ত লাগছে না।মাঝ রাতে ওঁদের কিচির মিচিরে ঘুম ভাঙে কিন্তু অভ্যেস হয়ে যাওয়াতে আবার কখন যে পূর্ণশ্রীর দু চোখ ঘুমে ভরে যায় বুঝতেও পারেনা।সামনের গাছগুলো আরও সবুজ হয়েছে। কয়েকদিন আগেও গাছের পাতা গুলো যেন কেমন পাণ্ডু বর্ণের হয়েছিল। আবার কখনো মনে হতো পাতগুলো তে কে যেন কালি মাখিয়েছে। গাছেদের বড্ড পরিশ্রম হয়েছে। এত বিষাক্ত পরিবেশে ওঁদের স্বাস প্ৰশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। গত কয়েকদিন যাবৎ কালবৈশাখী হচ্ছে। গাছগুলো যেন স্নান করল বহুদিন বাদে। প্রত্যেকে নতুন জামা পরেছে নববর্ষে।ফুলের রং গুলোও খুব উজ্জ্বল হয়েছে।কালবৈশাখী ঝড়ে যেদিন শিলা পড়ল সেদিন তো গাছের গোড়াটা সাদা ধবধবে হয়েছিল। বহুদিন বাদে পূর্ণশ্রী দেখল।কেন জানিনা নিজেকে সেই ছোট্ট বেলায় নিয়ে যেতে ইচ্ছে হলো ওঁর।বাড়ির ছাদে যে গাছগুলো লাগানো আছে সেই গাছ গুলোও যেন অকারণে ওঁরা চঞ্চল ,এইই মনে হতে লাগল। হাঁটতে যায় বিকেলে ছাদে। এই কয়েকদিন মনে হচ্ছে আকাশ টা কি মিষ্টি! সূর্য্যের অস্ত যাওয়ার আভা যেন যাওয়ার আগে আকাশে রং দিয়ে গেল। বলে গেল, আঁধার নামল বলে যেন ভয় পেও না। একটু পরেই তারারা আসবে এই আকাশে। একাদশীর চাঁদ ও পাবে। দেখবে ওরা কেমন জেগে জেগে তোমাদের পাহারা দেবে। তারারা বন্ধু হয়ে সারারাত গল্প করবে। মাঝে মাঝে হাওয়ারাও যোগ দেবে এদের আড্ডায়। যত রাত বাড়বে ততই তাঁর মাধুর্যের প্লাবন ঘটবে।কিন্তু একটাই অসুবিধে পূর্ণশ্রী,তুমি সেই আড্ডায় যোগ দিতে বেশিক্ষণ পারবে না। তোমার কত কাজ ।আস্তে আস্তে সূর্য্য ডুবে গেল। আঁধার নামতে লাগল। তারারা তাদের পছন্দের আড্ডার মহল তৈরী করতে শুরু করল। মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া তারাদের আড্ডা ভণ্ডুল করতে লাগল। হাওয়ায় মেঘ গুলো তারাদের ঢেকে দিতে থাকল। আবার হাওয়াই , মেঘ সরিয়ে দিয়ে তারাদের স্পষ্ট করল পূর্ণশ্রীর চোখে।একটু রাত বাড়তেই একাদশী র এক ফালি চাঁদ যেন মাঝবয়সির রাত্রে ধরা দিল। পূর্ণশ্রীর ছাদ থেকে নেমে আসার সময় হলো। কিন্তু চাঁদ ছাড়তে চাইছেনা। সে বলে,এতক্ষণ তারা,হাওয়া ,সূর্য্যের সাথে গল্প করলে ; এবারে আমার সাথে কথা বলো। আমি তোমায় সেই ছোট্ট বেলায় ঘুরিয়ে আনব। চাঁদের বুড়ির চরকা কাটার গল্প বলব। বলব তোমার মামাবাড়ির কথা। শুনবে না? বলব তোমাদের কবি ,সুকান্ত ভট্টাচার্য র মনে হওয়া, পূর্ণিমা র চাঁদ কে ঝলসানো রুটির মতো , শুনবে না ওঁর কথা। তোমাদের কবি আমায় নিয়ে কত গান লিখেছেন, কবিতা বেঁধেছেন । তুমি শোনাবে না দু কলি,পড়বে না দু চার লাইন?না গো,আজ আমায় ছেড়ে দাও, বলল পূর্ণশ্রী। তুমি যেদিন পঞ্চদশী হবে,তোমার যৌবন উছলে পড়বে সেইদিন তোমার সাথেই শুধু কথা বলব। আমার যত ভাবনা সব তোমায় উজাড় করে দেব। আজ যেতে দাও। আমায় ভুল বুঝ না পঞ্চদশী ...আমায় দেরী করে দিও না... কথা দিলাম তোমায়... আবার দেখা হবে তোমার সাথে আমার...

No comments:

Post a Comment