Friday 30 December 2016

বুদ্ধদেব 

শৈশব থেকে কৈশর পেড়িয়ে যৌবনের দোরগোড়ায় পা রাখার পরে পরে মনটা যেন তীব্র গতি সম্পন্ন তীরের ন্যায় হৃদয় থেকে বেড়িয়ে এল কিছু করার ইচ্ছে সফরের উদ্দেশ্যে। মননে চিন্তনে সেবা করার বাসনা। যাদের প্রয়োজন-- সেই মানুষদের জন্য।
 কচি বয়স -কে শুনবে তার কথা --তার সামর্থ্য কোথায়? যে কিছু করবে। গভীরচিন্তায় মগ্ন এমনি এক দুপুরে এক বৃদ্ধ তার ছোট্ট মেয়ের হাত ধরে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে-- বলে-  খিদে পেয়েছে মা -খেতে দিতে পারবে ?সে তার মা কে শুধালো  কিছু খাবার আছে কিনা -উত্তর এল সবে দুপুরের খাওয়া হল তো -অল্প ভাত -তরকারি আছে। তৎক্ষণাৎ ওদের খাবার ব্যবস্থা হল- আরও কিছু এটা ওটা দিয়ে ওদের খাওয়ানো হল। সেদিন বৃদ্ধ পিতা -কন্যার যে তৃপ্তির একটা হাসি দিয়েছিলো সেটি আজ অবধি সেরা পাওনার একটি। 

বলা বাহুল্য কোনো অভুক্ত কে খাইয়ে যে কিআনন্দ সেটা পিতা মাতার উত্তরসূরি হিসেবে পেয়েছিলোমেয়েটি । এবার সেই বৃদ্ধ কে দেখে  মেয়েটির মন খারাপ হয়ে গেলো -ওমা তার কন্যা তাঁকে একগ্রাস খাওয়াচ্ছে আর সেনিজেও একগ্রাস নিচ্ছে। খাওয়ার পর জানা গেল ওই বৃদ্ধমানুষটি কুষ্ঠে আক্রান্ত।

 তাকে বলা হল সে দুপুরবেলা করে তাদের বাড়িতে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে যায় যেন--.বোধকরি সেই দিনটি বুধবার ছিল।ইচ্ছা পূরণের প্রথম সিঁড়িতে -- মেয়েটির খুব আনন্দ -মা বাবাকে বললো আমাদের সাথে ওরাও খাবে-- খুব ভাল হবে বলো। কিন্তু পরের দিন এলনা --প্রায় ছয়দিন  কেটে গেলো -সাত দিনের দিন দেখি ওই বৃদ্ধপিতা -কন্যা এক মুখ হাসি নিয়ে উপস্থিত -বলে কোই গো মা জননী খেতে দাও --এভাবেই প্রত্যেক বুধবার বাড়িতে এসেতাঁরা  খেয়ে যেতেন।

তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় -কেন প্রতিদিন সে আসেনা --জানায় যে এই বাড়ির মতো আরো কয়েক টা বাড়ি পেয়েছিগো মা। তোমরা সকলে মিলে বারোমাস -তিরিশ দিনের খোরাক জুগিয়েছ। এই ভাবে তিনি প্রত্যেক বুধবার আসতেন। তার  আমৃত্যু পর্যন্ত। সে প্রতি বুধবার আসত --তাই নাম দেওয়া হয়েছিল বুদ্ধদেব। তার নিজের নাম কখনো জানা হয়নি। তাঁকে বুদ্ধদেব দাদু বলা হতো। বৃদ্ধের কন্যা এ  কে সুজাতা নাম ডাকতো বাড়ির সকলে। 

No comments:

Post a Comment